মঙ্গলবার, ০২ মার্চ ২০২১, ০১:১৮ অপরাহ্ন
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি: পৌষের শুরুতেই
কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নওগাঁর
আত্রাইয়ের জনজীবন। তুষারাচ্ছন্ন বাতাস ও ঘন কুয়াশায় হাড়
কাঁপানো শীতে জুবুথুবু হয়ে পড়েছে এ উপজেলার মানুষ। গ্রাম-
বাংলার প্রবাদ আছে ‘মাঘের শীত বাঘের গায়ে’ মাঘ মাসে শীতের
তীব্রতা এত বেশি থাকে যে, বাঘও কাবু হয়ে যায়। তাই মাঘ মাসের
আগমনীতে কেমন শীতের প্রভাব পড়বে এমটিই ভাবছে শীতার্ত অসহায়
গরীব মানুষ। বর্তমানে বিশেষ করে ছিন্নমূল অসহায় মানুষের অবস্থা
চরম শোচনীয়।
শিশু ও বৃদ্ধারা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তীব্র শীতে
সর্দি, কাশি ও হাপানিজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের
চেষ্টা করছেন। কোন কোন এলাকায় সূর্যের আলো মিলছে না গত
কয়েকদিন ধরেই। কোথাও কোথাও দিনের বেলা সূর্য দেখা দিলেও তা খুব
স্বল্প সময়ের জন্য। কুয়াশার পাশাপাশি তীব্র শৈত্য প্রবাহ শীতের এ
দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েকগুণ।
আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার শীতার্ত অসহায় গরীব
মানুষ হাড় কাঁপানো কনকনে শীতের কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছেন
না। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। উপজেলার বিভিন্ন হাট-
বাজারগুলোর দোকান-পাটও তেমন একটা খোলেনি। লোকজনের চলাচলও
স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম ছিল। তারপরও জীবন চলার তাগিদে তীব্র
শীতকে উপেক্ষা করে জীবন সংগ্রামে কিছু শ্রমিক ঘর থেকে
বেরিয়েছেন। তবে পর্যাপ্ত শীতের পোষাক না থাকায় নিম্ন আয়ের
অনেকেই পড়েছেন বিপাকে।
উপজেলার কোথাও কোথাও সরকারিভাবে শীত বস্ত্র ও কম্বল বিতরণ করলেও তাও
ছিল চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের ভ্যান চালক জনি ও একই গ্রামের দিন
মজুর ইয়াকুব আলী বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। প্রতিদিন কাজ
না করলে আমাদের সংসার চলে না। আমরা ভীষন কষ্টে আছি। তীব্র শীতকে
উপেক্ষা করেই জমিতে ধান রোপনের কাজ করছি। অনেক সময় শীতের
কারনে আবার কাজেও যেতে পারছি না।
উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম
বাবু বলেন, উপজেলার অনেক শীতার্ত মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এসব
মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশের বিত্তবান লোকজনকে এগিয়ে
আসার আহ্ধসঢ়;বান জানাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছানাউল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে
যে পরিমাণ শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে তা প্রয়োাজনের তুলনায় খুবই
সীমিত। এমতাবস্থায় সরকারের পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা
ও সামাজিক সংগঠনের কর্ণধারদের সহযোগীতা কামনা করছি।
অনেকেই শীতের কাপড় দিচ্ছেন। তবে আরও বেশি শীতের কাপড় দরকার বলে
তিনি জানান। তিনি আহবান জানান, সমাজের যুব-সমাজ,
স্কুল–কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদের অবস্থান থেকে এলাকার শীতার্ত
অসহায় মানুষের পাশে দাাঁড়ানো।
তিনি আরও জানান হঠাৎ করে তীব্র্র শীত ও শৈত্য প্রবাহ হওয়ায়
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আরও শীতবস্ত্র ও কম্বলের জরুরিভাবে
পাঠানোর জন্য চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে।
এদিকে আত্রাইয়ে অত্যাধিক শীত আর হিমেল হাওয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে
ঘন কুয়াশা ফলে গত চার দিন থেকে শীত জেঁকে বসেছে পুরো উপজেলা
জুড়ে। উপজেলার অধিকাংশ স্থানেই সূর্যের দেখা মেলেনি গতকাল সকাল
পর্যন্ত।
তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে আত্রাই এলাকার মানুষ। গরম কাপড়ের
অভাবে দূর্ভোগ বেড়েছে গরীব মানুয়ের। শীত বস্ত্রের অভাবে সবচেয়ে
বেশি কষ্ট পাচ্ছেন আত্রাই নদী অঞ্চলের দুস্থ মানুষ ও ছিন্নমূলবস্তি
এলাকার দুস্থ মানুষরা। তীব্র শীতে কয়েকদিন ধরেই দিনমজুরেরা ফসলের
মাঠে কাজে যেতে পারেননি।