বুধবার, ০৩ মার্চ ২০২১, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন
উজ্জ্বল রায় করেসপন্ডেন্ট■ সোমবার (২৮,অক্টোবর) ২৭৪: \ আদতে ঢাকেশ্বরী মন্দির এ দেশের হিন্দু-মুসলিম স¤প্রীতি রক্ষার প্রতীক, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। না, বাংলার কোনও রাজনৈতিক পোস্টার নয়। দেবী দুর্গার ছবি দেওয়া এই পোস্টারের দেখা মিলল বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরীর বাইরে। শাহবাগ থেকে পথ চিনিয়ে আনা মুসলিম রিকশচালক বিদায় নেওয়ার সময় মন্দিরের মূল ফটকে প্রণামের কায়দায় মাথা নত করে গেলেন। আদতে ঢাকেশ্বরী মন্দির এ দেশের হিন্দু-মুসলিম স¤প্রীতি রক্ষার প্রতীক। তবে চমকে যাওয়ার মতো আরও কাহিনী রয়েছে এই মন্দিরের। তর্পণ, দেবীর চক্ষুদান, মহিষাসুরমর্দিনী—মহালয়ার ভোরে এসব এপার বাংলার চেনা ছবি হলেও, বাংলার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া মানেই দেবীর বিসর্জন। এই রীতি দীর্ঘদিন ধরে পালন হয়ে আসছে। দশমী নয়, এক বছর থাকার পর এখানে দুর্গাপ্রতিমার বিসর্জন হয় মহালয়ার দিন। আর অমাবস্যা কেটে গেলে শুক্লা প্রতিপদে ম-পে প্রতিষ্ঠা হয় নতুন প্রতিমার। মন্দির চত্বরেই তৈরি হয় নতুন প্রতিমা। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সর্বজনীন পুজোটি পরিচালনা করে ঢাকা মহানগর কেন্দ্রীয় পুজো কমিটি। সর্বজনীন ম-প পেরিয়ে দেবী ঢাকেশ্বরীর মূল মন্দিরটি। রাজা বল্লাল সেনের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকেশ্বরী মন্দির। পুরোহিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর বয়ানে, ‘বল্লাল সেনের মা ব্রহ্মপুত্রে স্নান করতে যাওয়ার পথে এই স্থানে দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান। ঢক্কা নামক এক গাছের নীচে ঢাকা অবস্থায় পাওয়া যায় দেবী দুর্গার মূর্তি। সেই থেকেই এই দেবীর নাম ঢাকেশ্বরী। আর দেবীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে শহরের নাম ঢাকা। তবে, দেবীর আদি বিগ্রহ এখন আর এই মন্দিরে নেই। সেটি কলকাতার কুমোরটুলি এলাকায় রয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর আদি বিগ্রহ কলকাতায় নিয়ে চলে যাওয়া হয়।’ ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজারি বিজয়কৃষ্ণ আদতে বরিশালের মানুষ। ২০০১ সাল থেকে তিনি এই মন্দিরের পুরোহিত। মন্দিরের প্রধান সেবায়েত পুরোহিত নিয়োগ করেন। বিজয়কৃষ্ণ বললেন, ‘মন্দিরের বর্তমান বিগ্রহটি মূল মূর্তির রেপ্লিকা। অষ্টধাতুর এই মূর্তিটি ১৯৯৬ সালে ঢাকা তাঁতিবাজার এলাকায় তৈরি করা হয়। ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯০ সালে দাঙ্গার সময় এই মন্দির আক্রান্ত হয়েছিল। লুট হয়েছিল মূর্তি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই মন্দির পরিদর্শনে এসেছিলেন। সেই সময় তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির বলে ঘোষণা করেন। তবে, এখনও খাতায়-কলমে বিষয়টি হয়ে ওঠেনি।’মন্দিরের রতœবেদিকার উপর রয়েছেন স্বপরিবারে দেবী দুর্গা। বাঁ পাশে শিবের মূর্তি ও ডান পাশে বিষ্ণুর মূর্তি। পাশের ঘরে রয়েছেন দেবী সন্তোষী। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুজোর রীতিও এপার বাংলার থেকে বেশ আলাদা। পুরোহিত জানালেন, ‘এই মন্দিরে খানিকটা অবাঙালি রীতি-নীতি মেনে পুজো হয়। ভারতের উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাতে নবরাত্রির সময় ঘটে গোবরের স্বস্তিকা এঁকে যব, ধান লাগানো হয়। এখানেও সেই রীতি পালন করা হয়। মনে করা হয়, বহুযুগ আগে থেকেই হিন্দি বলয়ের পুরোহিতরা এই মন্দিরের পুজোর কাছে নিযুক্ত ছিলেন, তাই এই ধরনের রীতিনীতি।’দুর্গাপুজো ছাড়াও মন্দিরের সর্বজনীন ম-পে কালীপুজো ও সরস্বতীপুজো হয়। পয়লা বৈশাখে খাতায় পুজোর জন্যও ভিড় উপচে পড়ে। সর্বজনীন ম-পে প্রতিমা এক বছর রেখে দেওয়ার কারণ কী? পুরোহিতের বক্তব্য, ‘মাটির প্রতিমা এক বছর রেখে দেওয়াই যায়। তবে, নিত্য পুজোর ব্যবস্থা করতে হয় সে ক্ষেত্রে। এখানে সেই ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে দশমীতে দর্পণ বিসর্জন হয়।’মন্দিরের মূল ফটক থেকে চত্বর সর্বত্রই স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বাংলাদেশ পুলিসের কড়া নিরাপত্তা। জাতীয় মন্দিরের গেটেই দর্শনার্থীদের নাম-ধাম-পরিচয় জেনে নিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ঢাকা পুলিসের পদস্থ কর্তা জামাল সাহেব বললেন, ‘এটি জাতীয় মন্দির। তাই কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই এই কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা।