শহর থেকে গ্রামের ট্রেন ধরার অপেক্ষা করছিলাম। শীতের সকাল স্টেশনে প্রচুর ভীড়। কেউ বাড়ী যাবে, কেউ আপন গন্তব্য, কেউবা আবার বিশ্ববিদ্যালয় গামী। চারদিকে কত কিছু অবলোকন করছিলাম তার হিসেব নেই। ছিন্নমূলদের কাঁথা জড়িয়ে রাস্তায় স্টেশনে পড়ে থাকতে দেখে মন কাঁদছিল! ওদের কী শরতের তীব্রতার হুঁশ নেই? ছড়িয়ে ছিটিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে-বসে আছে এখানে-ওখানে। আমরা কত সুখী চিন্তা করছিলাম। কারো ভাগ্য বিধাতার প্রতি আক্ষেপ নেই। মুখে চঞ্চলতার হাসি। সময় ক্ষেপনে একটা জায়গায় বসে দুচোখ দিয়ে দেখছি সৌন্দর্য প্রকৃতি।
একজন মাঝবয়সী লোক কোট টাই পড়া এক সাহেবের পাশে বসতে চাইলেন হেটে ক্লান্ত হয়ে!সাহেবের কাছাকাছি না যেতেই লোকটিকে সজোরে যে ধাক্কাটি মারলেন হৃদয়ে মোচড় দিয়ে উটল হটাৎ। লোকটির অদূরে ছিটতে পড়া দেখে মনে হচ্ছিল, আমার দেশের লাল-সবুজের পতাকা খুটি থেকে উপড়ে যাচ্ছে। কারন, সেও আমার দেশের ২০ কোটি লোকেদের একজন। সে বাঙালী। ওরা বেশ কয়েকজন বলাবলি করতে লাগল চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় – ইতা ডান্ডি মরকগুই (সে হিন্দু মরে যাক গিয়ে) মানবতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে পাঠকমহল একটু ভাবুন। এটাই আমাদের দেশাত্মবোধ! সাহেব নামের পয়সাওয়ালা জানোয়ারদের জন্যই দেশ আজ কঠিন অবস্থায়। পড়ে গিয়ে লোকটির কোঁকড়ানো দেখে নিজেকে যেন হারিয়ে ফেলছিলাম বারবার। মন ভেতর থেকে বলছে দৌড়ে গিয়ে সাহেব নামের কুলাঙ্গারটিকে টাটিয়ে দু’গালে থাপ্পড় মেরে আসি। সবাইতো স্তব্ধ! যেন জড়বস্তু আর নির্বাক প্রজাতি। আমি একজন যাযাবর ছাপোষা যদি প্রতিবাদী হই হয়তো অকথ্য গালাগাল আর মার খেতে হবে নিঃসন্দেহে।
যদি আমরা একটু পিছন ফিরে তাকাই – ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে কী আমরা জাত, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী এসব বিবেচনা করেছিলাম? তখন তো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বীরত্বকাব্য রচনা করেছিলাম বিশ্বের বুকে ইতিহাসের পাতায়। আজো আমাদের দেশে এসব নিয়ে যখন ছোটখাটো যুদ্ধ হয় অবাক হতে হয়। উনিশ শতকে এসেও মানুষ হওয়ার উপযোগী নই আমরা? সংগঠন আছে ভূরি ভূরি গ্রামাঞ্চলে। মানুষের মানোন্নয়ন কতটুকুই বা হচ্ছে? দিনশেষে সবাই টাকার গোলামী করছে। আমার মতে, সংগঠনই পারে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে পাপাচার মুক্ত করতে। তা হতে হবে অসাম্প্রদায়িক বাঙালির সমন্বয়ে গঠিত একটি প্লাটফর্ম। মানবতার শিক্ষা, শিষ্টাচার বহির্ভূত অশিক্ষার বাণী প্রচার মূলমন্ত্র, আমাদের হারানো হাজার বছরের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা।
যার ধর্ম সে সম্মান আর মর্যাদা দিয়ে পালন করুক। আর দুনিয়ার বুকে মানবধর্মই সর্বশ্রেষ্ঠ ও আত্মগৌরবের। আসুন মানবতাবাদী হই। একটু মানবিক হই! জাগ্রত করি আমার ভেতরকার লুকিয়ে থাকা মানুষটিকে কথা বলানোর চেষ্টা করি। পৃথিবীটা এমনিতেই সুন্দর হয়ে যাবে ।।