মুন্সী মেহেদী হাসান, সাভার :
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বিতর্কিতভাবে এবং গঠনতন্ত্র বহির্ভূত জাতীয় শ্রমিকলীগের থানা আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আঞ্চলিক কমিটিকে উপেক্ষা করে এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছাড়াই, গঠনতন্ত্র বিরোধী এ কমিটি অবৈধভাবে তাদের কার্যক্রম কিভাবে পরিচালনা করছে এমন সমালোচনা এখন সর্বত্র। আর এ কমিটি গঠনের পর থেকে নিজেদের মধ্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্যর মাধ্যমে এক প্রকার কাঁদা ছোড়াছুড়ি চলছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ২৯ শে নভেম্বর জাতীয় শ্রমিকলীগের ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল হামিদ মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক ২১ সদস্য বিশিষ্ট আশুলিয়া থানা আহবায়ক কমিটি গঠন করেন এবং আশুলিয়ার সাবেক সকল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে।
এবিষয়ে জাতীয় শ্রমিকলীগ ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল হামিদ মুন্নার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি আশুলিয়া থানা আহবায়ক কমিটির গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা শুধু জেলা কমিটির অন্তর্ভুক্ত যেসব কমিটি আছে, হোক তা উপজেলা, থানা বা ইউনিয়ন কমিটি যাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হইছে, আমাদের অন্তর্ভুক্ত সে সকল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়েছে এবং ২১ সদস্য বিশিষ্ট আশুলিয়া থানা আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে ।
আঞ্চলিক কমিটি কি বিলুপ্ত হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আঞ্চলিক কমিটি যদি সঠিক উপায়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছ থেকে এনে থাকে, তাহলে সে কমিটি বিলুপ্ত করার এখতিয়ার আমাদের নেই , আর তাদের কমিটির মেয়াদ থাকলে তারা বৈধ। অক্টোবর থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নতুন কমিটি দেওয়া বন্ধ, তাহলে কিভাবে নতুন কমিটি গঠন করলেন এর জবাবে তিনি বলেন , এ নির্দেশনা শুধুই মহানগর কমিটির জন্য। আমাদের জেলা কমিটির উপর এরকম নির্দেশনা নাই। তবে আমরা জেলা কমিটির অন্তর্ভুক্ত সকল কমিটি গঠন করতে পারব এমন নির্দেশনা রয়েছে।
এবিষয়ে ঢাকা জেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের আরেক সাধারণ সম্পাদক মো: আজিজ দেওয়ান নিজেদের কমিটি বৈধ দাবী করে জানান, ঢাকা জেলা কমিটির বৈধতা শুধু আমাদের রয়েছে, আমরাই পূণরায় বহাল থাকবো। আব্দুল হামিদ মুন্নার কমিটিই তো ভূয়া। তারা আশুলিয়ায় কথিত যে আহবায়ক কমিটি গঠন করেছে, তা ভূয়া এবং বানোয়াট। তারা জাতীয় শ্রমিকলীগকে বিতর্কিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ করতে টাকার বিনিময় গঠনতন্ত্র বহির্ভূত একটি ভূয়া কমিটি দিয়েছে, যার কারনে জনমনে এক প্রকার বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
জাতীয় শ্রমিকলীগ আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ আকবর হোসেন মৃধা বলেন, জাতীয় শ্রমিকলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নুন্যতম ১০ হাজার শ্রমিক থাকলে সে এলাকা শিল্পাঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত হয় । ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে জাতীয় শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল আহম্মেদের সুপারিশে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কতৃক ৩ বছর মেয়াদি আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির অনুমোদন দেয়। এ কমিটি পূনর্গঠনের পর হতে ঢাকা -১৯ আসনের মাননীয় সাংসদের পরামর্শে এবং আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে জাতীয় পর্যায়ে প্রত্যেকটি দলীয় কার্যক্রম সক্রিয়ভাবে পালন করে আসছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় শ্রমিকলীগ আঞ্চলিক কমিটির পক্ষ হতে ৪ টি নির্বাচনী ক্যাম্প নিজেদের অর্থায়নে পরিচালনার মাধ্যমে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর বিশেষ ভূমিকা পালন করে । আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে ৫ টি ইউনিয়ন, তার মধ্যে ধামসোনা, আশুলিয়া, ইয়ারপুর ও পাথালিয়া ৪ টি ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং শিমুলিয়া ইউনিয়ন কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আঞ্চলিক কমিটির কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজীসহ আইন বিরোধী কোন কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য জাতীয় শ্রমিকলীগ আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটি যখন সুনামের সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঠিক তখনই একটি কুচক্রীমহল এ সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য বিতর্কিত লোকেরা গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপের অংশ হিসাবে বেআইনিভাবে জাতীয় শ্রমিকলীগ আশুলিয়া থানা কথিত আহবায়ক কমিটি গঠন করেছে। সম্প্রতি জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষনা করা হলেও পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি। তাহলে কেন্দ্র যেখানে পূর্ণাঙ্গ গঠিত হয়নি, সেখানে কেন্দ্র নির্দেশনা ছাড়াই থানা কমিটি দেওয়া চাটুকারিতার পর্যায়ে পড়ে এবং তার পেছনে স্বীয় স্বার্থ লুকিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, আমরা আশুলিয়া থানা আহবায়ক কমিটি সম্পর্কে অবগত না। যাহারা এ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে, তাদের কোন এখতিয়ার নেই এ কমিটি দেওয়ার। গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, যেখানে আঞ্চলিক কমিটি আছে সেখানে থানা কমিটি আঞ্চলিক কমিটির আওতাধীন। এসমস্ত গঠনতন্ত্র বিরোধী কমিটির কারনে দলে হাইব্রিডদের দৌরাত্ম বেড়ে চলেছে এবং ত্যাগি নেতাকর্মীরা হয়ে পড়ছেন কোনঠাসা।
জাতীয় শ্রমিকলীগ আশুলিয়া থানা কথিত আহবায়ক কমিটি গঠন প্রসঙ্গে, সংগঠনের নবগঠিত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা জানান, আশুলিয়ায় জাতীয় শ্রমিকলীগের আঞ্চলিক কমিটি রয়েছে। থানা কমিটির যদি অনুমোদন দিতে হয় তাহলে আঞ্চলিক কমিটি দিবে। আশুলিয়ায় কথিত যে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র বহির্ভূত। আমরা এবিষয়ে কেন্দ্র থেকে লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে আপনাদের অবগত করবো।