শনিবার, ০৬ মার্চ ২০২১, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন
রাবি সংবাদদাতা:
টানা ১২ বছর ধরে ক্যাম্পাসের পশু পাখির জন্য প্রতিদিন রান্না করে আসছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের(রাবি) শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের গাজিউল ইসলাম নামের নিম্নমান সহকারী কর্মকর্তা। নিজের বেতনের একটা বড় অংশ দিয়েই নিরবে চলেছে তার এই মহৎ কাজ। তার সকাল শুরু হয় প্রাণীদের সাথে।
সকাল ৬ টায় বাসা থেকে মটর সাইকেলে করে ক্যাম্পাসে আসেন। সাংস্কৃতিক কেন্দ্র টিএসসিসিতে এসে প্রায় দেড় ঘন্টায় রান্না শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় কুকুর বিড়ালগুলোকে খাওয়ান।
টিএসসিসি, রাকসু ভবন,শহিদুল্লাহ কলা ভবন, শহীদ মিনারসহ প্রায় ১৩ জায়গায় ঘুরে ঘুরে খাবার দেন তিনি। এভাবে আরো দেড় ঘন্টা সময় লাগে পুরো ক্যাম্পাসের প্রায় ৫০ টি কুকুর খাওয়াতে।
তার সাথে গিয়ে দেখা যায়, পশু পাখির সাথে এমন সখ্যতা হয়েছে যে, নাম ধরে ডাকলেই কাছে চলে আসছে প্রাণীগুলো। ডাবু, লালু, শেফালিসহ নানা নামে জুড়ে ডাকছেন প্রাণীগুলোকে।
খাবারের উপাদান জানতে চাইলে গাজিউল ইসলাম বলেন, চাল, গরুর মাংসের চর্বি, ডাল দিয়ে তৈরি হয় খিচুরি। এমন খাবার যা মানুষেরও খাওয়ার উপযোগী। প্রতিদিন ১০ কেজি চাল এবং মাসে ২০ কেজি চর্বি ব্যবহার করেন। এতে করে প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়াও তার বাসায় আরো ১৪ টি কুকুর সহ আশেপাশের কয়েকটি প্রাণীর জন্য রান্না করেন তার মেয়ে।
কিভাবে চলে এই খরচ? প্রশ্নের উত্তরে বলেন, করোনার আগ পর্যন্ত নিজের মাসিক বেতনের প্রায় অর্ধেক খরচ হয়ে যেত এইসব প্রাণীদের পেছনে।
করোনা শুরুর ৩ মাস পর হঠাৎ দেখা হয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার সাথে। তিনি গাজিউলের সাথে কাজ করার অনুমতি চান। সেই থেকে অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন বলে জানান তিনি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান, টিএসসিসির পরিচালক অধ্যাপক ড.হাসিবুল আলম প্রধান ও সহকারী পরিচালক আহসান হাবীব, রবীন অনেকেই কাজগুলো দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁকে।
নিজের বেতনের টাকায় কুকুর বা প্রাণীদের খাবার দিচ্ছেন। করোনার ঝুকির মধ্যেও বাদ দেননি কাজটি। অনেকে মানসিক রোগী বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন তাঁকে। এজন্য মন খারাপও হয়েছে বেশ, তবে খাবার দেওয়া ছাড়েন নি।
কেনো করছেন এখনও সেই প্রশ্নের উত্তরে গাজিউল বলেন, একদিন ঝিরঝিরে বৃষ্টির সময়ে একটি মেয়েকে মেরদণ্ড ভাঙা অসুস্থ একটি কুকুর ছানাকে ভাগাড়ে রেখে যেতে দেখলাম। শীতে বাচ্চাটি কাঁপছিল। তাই তাকে ফেলে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে বলেছিলো, এটা বাড়িতে নোংরা করে। সারাদিন চেচামেচি করে।
পরে তিনি ভাবলেন যে এই পশুগুলোরও বেচে থাকার অধিকার আছে। এদেরকে সবাই যদি তাড়িয়ে দেয় তাহলে যাবে কোথায়। এরপর তিনি বাচ্চাটিকে বাসায় নিয়ে ডাক্তারকে দেখালেন। ডাক্তার বললেন যে এটা বাঁচবে না। কিন্তু হাল ছাড়িনি। ঔষধ খাওয়ালাম, কুকুরটির সুস্থ হতে প্রায় পাঁচ বছরের বেশি সময় লেগেছিল।
বলছিলেন, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। এসব প্রাণীদের দেখভাল করার জন্য সৃষ্টিকর্তা দায়িত্ব দিয়েছেন। এইগুলা করে প্রশান্তি পায়। বিবেকের দায় থেকেই কাজটি করি। এটাই ভালো লাগে গাজিউলের।##