সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০৮:০০ পূর্বাহ্ন
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত সারা দেশের মানুষ। ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া বের না হওয়ার জন্য সরকার থেকে নির্দেশনা থাকলেও জীবন জীবিকার প্রয়োজনে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ করোনাভাইরাস থেকেও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছে এনজিওর কিস্তির টাকা নিয়ে।
কিস্তির টাকার জন্য এনজিও কর্মীরা বাড়িতে হানা দিচ্ছে এমন একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
ফুলবাড়ী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অধিকাংশ মানুষ। শহরের রাস্তা-ঘাট প্রায় ফাঁকা। এতে করে বিপাকে পড়েছে শ্রমিক, দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
পৌর শহরের রিকশাচালক দাদপুর গ্রামের খরকুদ্দিন মিয়া বলেন, তার পরিবারে আট জন সদস্য। প্রতি সপ্তাহে এনজিও’র কিস্তি দিতে হয় ১৪শ’টাকা। বর্তমানে শহরের মানুষ কমে গেছে এখন আর তেমন আয় হচ্ছে না, কি করে সংসার চলবে আর এনজিও কিস্তি কি ভাবে পরিশোধ করবে, এই নিয়ে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
একই এলাকার রিকশাচারক শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে রিকশা কিনেছেন। বর্তমানে তার আয় না থাকায় এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
জয়নগর গ্রামের দিন মজুর শাহিনুর রহমান বলেন, করোনা আতঙ্কে এখন কেউ তাকে বাড়িতে কাজে নিচ্ছে না, এতে করে তার মজুরি বন্ধ হয়ে গেছে। তার সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। কঠিন হয়ে পড়ছে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করা। প্রতি সপ্তাহে তাকে ১১শ টাকা কিস্তি দিতে হয়। কি করে কিস্তি পরিশোধ করব তা নিয়ে বেশি চিন্তিত।
একই অবস্থা ক্ষুদ্র চা-স্টল ও পান-সিগারেটের দোকান ও ফলের দোকান গুলোতে। শহরে জনসমাগম কমে যাওয়ায় এই সব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও খাবারে দোকান হোটেলের বেচা-কেনা কমে গেছে। এতে শ্রমিক ও দিন মজুরদের ন্যায় তারাও বিপাকে পড়েছেন।
পৌর শহরের বটতলি মোড়ের চা-বিক্রেতা দুলু মিয়া বলেন, সারা দিন যেখানে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেচা-কেনা হত, সেখানে ৫০০ টাকাও বেচা-কেনা হচ্ছে না।
একই কথা বলেন, নিমতলা মোড়ের হোটেল ব্যবসায়ী সুলতান হোসেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে বেচা-কেনা একেবারে কমে গেছে, এতে হোটেলের ভাড়া কর্মচারীদের বেতন দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, এর উপর রয়েছে ঋণের কিস্তি।
ফুলবাড়ী রক্ষা আন্দোলনের নেতা সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের কিস্তি স্থগিত করা হলেও, গরিবের এনজিওর কিস্তি স্থগিত করা হয়নি। তাই তিনি এনজিওর কিস্তি বন্ধ করার আহবান জানান।
কিস্তির বিষয়ে এসকেএফ ফাউন্ডেশনের ফুলবাড়ী শাখার ম্যানেজার গোলজার হোসেন জানান, কিস্তি আদায় বন্ধে আমাদের কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি তাই যথারীতি মাঠে কাজ করছি।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী এনজিও ফোরামের সভাপতি এমএ কায়ুম বলেন এনজিও গুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে। এখন পর্যন্ত কিস্তি বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের চিঠি আসেনি তাই নিয়মিত কিস্তি আদায় করা হচ্ছে। নির্দেশনা এলে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে।
এ দিকে ইউএনও আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেছেন, এনজিওর কিস্তি বন্ধ রাখার জন্য ফুলবাড়ীতে কর্মরত এনজিও গুলোকে মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়মিত কিস্তি নিচ্ছে এনজিওগুলো। এ জন্য করোনা প্রাদুর্ভাব না কাটা পর্যন্ত এনজিওর কিস্তি বন্ধ রাখার জন্য সরকারের ঊর্দ্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।