শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৩:১২ অপরাহ্ন
পিত্তথলির অবস্থান লিভার বা যকৃত এর ঠিক নিচে আমাদের পেটের উপরের দিকে ডান পাশে। এর সাথে লসিকা নালী সংযুক্ত। পিত্তথলি ৭ থেকে ১২ সেন্টিমিটার লম্বা একটি থলি যাতে তরল বাইল এসে জমা হয়। পিত্তথলির কাজ হলো এই যকৃত নিঃসৃত পিত্তরসকে ৫ থেকে ১০ গুণ ঘন করা, মিউকাস নিঃসরন করে একে পিচ্ছিল বানানো এবং অন্ত্রে পিত্তরসের নিঃসরনের মাত্রা নির্ধারন করা। অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় গলব্লাডার ক্যান্সার হবার হার তুলনামুলক ভাবে অনেক কম।
এই রোগটি বিলিয়ারী টিউমার এবং বিলিয়ারী ট্র্যাক্ট নিউপ্লাজমস নামেও পরিচিত। সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ আমেরিকা ,সেন্ট্রাল ও ইস্টার্ন ইউরোপ ,জাপান, নর্দার্ণ ইন্ডিয়াতে সাধারণত এই রোগ বেশি দেখা যায়। সঠিক সময়ে নির্ণয় করা হলে গলব্লাডার অপসারণের মাধ্যমে এই রোগ ভাল হয়ে যায়।
কারণ
এই রোগ হওয়ার সঠিক কারণ এখনও অজানা। যখন পিত্তথলির সুস্থকোষের ডি-এন-এর পরিবর্তন হয় তখন গলব্লাডার ক্যান্সার হয়ে থাকে। ডি-এন-এর এইসব পরিবর্তনের কারণে কোষের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক হয় এবং কোষগুলো সঠিক সময়ে নষ্ট হয় না। এই অতিরিক্ত কোষ গলব্লাডারে টিউমার গঠন করে এবং ধীরে ধীরে তা দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
পিত্তথলির আভ্যন্তরীণ আবরণ যা গ্ল্যান্ডুলার কোষ দিয়ে তৈরী সাধারণত সেই স্থানেই ক্যান্সারের উৎপত্তি হয়ে থাকে। এই ধরনের ক্যান্সারকে অ্যাডেনোকার্সিনোমা বলে। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে এই ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
লক্ষণ
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:
বমি বমি ভাব (Nausea)
পেটে তীক্ষ্ণ ব্যথা (Sharp abdominal pain)
অবসাদ (Fatigue)
তরল জমা হওয়া (Fluid retention)
আবেগগত সমস্যা (Emotional symptoms)
কনুইয়ের মাংসপেশীতে টান ধরা (Elbow cramps or spasms)
বমি (Vomiting)
কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation)
দুর্বলতা (Weakness)
শ্বাসকষ্ট (Shortness of breath)
অনিয়মিত মাসিক (Infrequent Menstruation)
অণ্ডথলিতে চুলকানি হওয়া (Itching of scrotum)
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়
যে যে বিষয়ের কারণে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়ঃ
পিত্তথলিতে পাথর বা গলব্লাডারে জ্বালাপোড়া বা প্রদাহের সমস্যা থাকা (কিন্তু সকল ক্ষেত্রে এটি নাও হতে পারে)।
পিত্তথলির বিনাইন টিউমার বা পলিপ।
জন্মগতভাবেই পিত্তনালীর অস্বাভাবিকতা।
পোরসেলিন গলব্লাডার বা পিত্তথলির প্রাচীরে ক্যালসিয়াম জমাট বাধা।
ধুমপান।
পরিবারের অন্য কোন সদস্যের এই ক্যান্সার থাকা।
স্থুলতা বা ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকা।
মহিলা ও বয়স্কদেরক্ষেত্রে।
প্রাইমারী স্ক্লেরোজিং কোলাঞ্জাইটিস (পিত্তনালীতে ক্ষত ও প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া হওয়া)।
রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে থাকা।
টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।
এছাড়াও কোলিডোকাল সিস্টের (পিত্ত-পূর্ণ থলি যা পিত্তনালীর সাথে যুক্ত থাকে) আকার সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেলে এবং এতে ১ থেকে ২ কোয়ার্টসের মত পিত্ত থাকলে গলব্লাডার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে
লিঙ্গঃ মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।
জাতিঃ শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিক ও অন্যান্য জাতিদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
(ক) গলব্লাডার ক্যান্সার কি প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা সম্ভব ?
উত্তরঃ এই ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা কিছুটা কঠিন। গলব্লাডার বা পিত্তথলি দেহের ভিতরের দিকে অবস্থিত তাই রুটিন চেক-আপের মাধ্যমে টিউমারের উপস্থিতি নির্ণীত হয় না। কোন ধরনের ব্লাড টেস্ট বা স্ক্রিনিং টেস্টের (কোন ধরনের লক্ষণ দেখা ছাড়াই ক্যান্সার নিশ্চিতকরণ পরীক্ষা) মাধ্যমেও এই রোগ প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা সম্ভব না। এ কারণে এই ক্যান্সার দেহের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার পরই নির্ণয় করা যায়। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার আগেই ধরা পড়ে যদি, পিত্তথলির পাথরের কারণে গলব্লাডার অপারেশনের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া হয়। তখন ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে গলব্লাডারে ক্যান্সারের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
(খ) চিকিৎসক যখন গলব্লাডার ক্যান্সারের স্টেজ বা পর্যায় নিয়ে কথা বলেন তাদ্বারা কি বুঝায় ?
উত্তরঃ স্টেজ বা পর্যায় এমন একটি শব্দ যা চিকিৎসাশাস্ত্রে ক্যান্সারাস টিউমারের (যে সকল টিউমার থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে) অবস্থান বা বৃদ্ধি নির্দেশ করে। ক্যান্সারের স্টেজের উপর এই রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে থাকে।
(গ) গলব্লাডার ক্যান্সার নিশ্চিত হওয়ার জন্য কি একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে ?
উত্তরঃ অনেকেই নিশ্চিত হওয়ার জন্য এই পরীক্ষা একাধিকবার করে থাকেন। যে সকল কারণে এই পরীক্ষা একাধিকবার করা হয় সেগুলো হলঃ
ক্যান্সার ট্রিটমেন্টের কারণে অস্বস্তিবোধ করা।
বিরল প্রকৃতির ক্যান্সার হওয়া।
একই রোগেরচিকিৎসার বিভিন্ন পরামর্শ পাওয়া।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে না পারা ইত্যাদি।
হেলথ টিপস্
কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে এই ক্যান্সার ভাল হয়ে যায়। চিকিৎসার কারণে ব্যক্তি মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়। আরোগ্য লাভের পরে ব্যক্তি স্বস্তিবোধ করলেও পুনরায় ক্যান্সার হওয়ার চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। এই দুশ্চিন্তা ক্যান্সার আক্রান্ত সকল ব্যক্তিদের মধ্যে কম-বেশি দেখা যায়। এই সমস্যা কাটাতে কিছুদিন সময় লাগে। ক্যান্সার কখনোই সম্পূর্ণভাবে ভাল হয় না। এটি পুনরায় হলে ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও পূর্ববর্তী চিকিৎসার উপর পরবর্তী চিকিৎসা নির্ভর করে। আরও জানতে ফোন করুন ০১৭৭৭০৭৩৩৯৩ নাম্বারে।
সংগৃহিত