সোমবার, ০১ মার্চ ২০২১, ০৪:২৭ অপরাহ্ন
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার কৃষি গবেষক ও মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাঁশের দ্রুত বংশবৃদ্ধি নিয়ে ১২ বছরের গবেষণায় সফল হয়েছেন। ফলে এখন পরিত্যক্ত অনাবাদি জমিতে কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। ১টি বাঁশ থেকে কাটিং করে ৪০-৫০টি বাঁশঝাড় করার স্বপ্ন অবশেষে সফল হলো কৃষি গবেষক নজরুল ইসলামের।এ পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করলে দেশে বাঁশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করাও সম্ভব বলে অভিমত মুক্তিযোদ্ধার এই কৃষি গবেষকের। এ পদ্ধতি কুষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সরকারের শুভদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি। সচেতন মহল তার এ উদ্ভাবনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছেন। এ সফলতার পর তিনি গাইবান্ধার মাটিতে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। জানা যায়, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার উল্ল্যাপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম। যখন তার দাদার দাফনে বাঁশের প্রয়োজন হয়। তখন বাঁশ সংগ্রহের জন্য পাড়া-পড়শির কাছে যেতে হয়। তখন থেকে বাঁশের দ্রুত বংশবিস্তার নিয়ে চিন্তা করেন তিনি। ১৯৬৮ সালে ছাত্রজীবনে শুরু করেন বাঁশের বংশবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা। কৃষি ডিপ্লোমা পাশ করে সাঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ ১২ বছর গবেষণার পর উদ্ভাবন করেছেন কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ। এ পদ্ধতিতে একটি বাঁশ থেকে ৪০-৫০টির বেশি বাঁশঝাড় করা সম্ভব। ইতিমধ্যে সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এই পদ্ধতিতে পরিত্যক্ত জমিতে বাঁশ চাষে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অনাবাদি জমিতে বাঁশ চাষ করে ৫-৬ বছর পর থেকেই বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন চাষিরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ চাষে আগ্রহী ব্যক্তিরা ছুটে আসছেন নজরুল ইসলামের কাছে। এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন জাতীয় কৃষি পুরস্কার, ইন্টারন্যাশনাল রোটারি ক্লাব পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার। সুন্দরগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি বলেন, নজরুল ইসলামের পরামর্শে বাঁশের কাটিং দিয়ে খুব কম খরচে একসাথে ১২ বিঘা জমিতে বাঁশ চাষ করেছি। প্রথমে অনেকটা হতাশা থাকলেও এখন বাঁশঝাড় দেখে মনে শান্তি পাই। এ পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করলে দ্রুত শত শত বাঁশঝাড় করা সম্ভব। সাঘাটা উপজেলার বাঁশহাটা গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন সরকার বলেন যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে পরিত্যক্ত তিন বিঘা জমিতে এ পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে এখন বছরে কয়েক লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি করছেন। উদ্ভাবক মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন গাইবান্ধার মাটিতে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন নিয়ে এখন গবেষণা করছেন। এছাড়া সৌদি আরবের খেজুর গাছ নিয়েও চিন্তা আছে তার। তিনি সৌদি থেকে উন্নত মানের বারোমাসি খেজুরের চারা সংগ্রহ করে নতুনভাবে গবেষণা করছেন। সাঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, গাইবান্ধায় এ পদ্ধতিতে ব্যাপক বাঁশ চাষ করে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করা সম্ভব। এ পদ্ধতি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।