সোমবার, ০১ মার্চ ২০২১, ০৯:১২ পূর্বাহ্ন
আমি কবির হোসেন,
পিতাঃ আঃ মালেক মিয়া
মাতাঃ খোদেজা খাতুন
গ্রামঃ চরফিলিজ
পোঃ বালার হাট
থানাঃ সখিপুর
জেলাঃ শরীয়তপুর
আমরা ৫ ভাই, ১ বোন!
বড় দুই ভাই বিবাহিত,তারা তাদের পরিবার নিয়ে ফ্যামিলি থেকে দুরে থাকে! এক ভাই গ্রামের বাড়িতে কৃষি কাজ করে,আমি ঢাকায় একটা কোম্পানিতে অল্প বেতনের চাকরি করি,তার পরের জন ঢাকায় পড়াশুনা করে। বোন পড়াশুনা করে গ্রামেই।
আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক, মা গৃহীনি।
আমি জন্মের পর থেকেই জেনে আসছি আমাদের বাড়ির আশেপাশে যারাই আছে কেউই আমাদের ভালো চায় না। আমরা যদি বাড়ির বাহিরে যাই,সুযোগ পেলেই ওরা আমাদের মেরেফেলবে বা কোন না কোন একটা ক্ষতি করবেই,তাই মা আমাদেরকে বাড়ির বাহিরে যেতে দিতেন না।
এককথায় আমাদের হাইস্কুল লাইফ পর্যন্ত বাড়িতে বন্দী অবস্থায়ই কেটেছে তারপর ঢাকায় আসা মানে মুক্তি,কিন্তু টেনশন, গ্রামে ত মা-বাবা,ভাইবোন। তাদের সাথে কি হচ্ছে না হচ্ছে! ভয়ে থাকতে হয়!
আমার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন,বালার হাট, তারাবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন! সখিপুর থানায় তার অনেক নাম-ঢাক, কত সম্মান কিন্তু আশেপাশের মানুষ আমাদের যে এক ঘরে করে রেখেছে তা ত কাউকে বলতে পারি না! লজ্জা, আমাদের সাথে এত অন্যায় হচ্ছে,তাও নিজের আত্মীয়রা করতেছে,আশেপাশের মানুষরা করতেছে।
আমার দাদু দুই বিয়ে করেছেন,আমার বাবা প্রথম স্ত্রীর বড় সন্তান,আমার এক চাচা ছিল,তাকে খুন করা হয়,এরপর বাবা ভয়ে ভয়ে থাকেন! কখন জানি কি হয়! । আমার অন্য দাদীর ছোট ছেলে খোকন মাল,তিনি এবং তার আশেপাশে যারা আছে,সবাই মিলেই আমাদের এক ঘরে করে রেখেছেন। দাদু যখন অসুস্থ ছিলেন, সব জায়গা জমি তার শ্যালকের নামে,পরে আবার তার নামে নিয়ে আসেন। আমাদের বঞ্চিত করা হয় সম্পত্তি থেকে। তবুও আমাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তির লোভ ছিল না,মানুষ হতে চেয়েছি,ভালোভাবে নিজেদের যা আছে তা নিয়েই চলতে চেয়েছি! কিন্তু ওরা তা দিচ্ছেনা!
আমরা পড়াশোনা করি,মানুষ হই,এটা কেউ চায় না! চাচা তার ক্ষমতা দিয়ে আমাদের একেবারেই গ্রাম থেকে আলাদা করে রেখেছে,বাড়ি থেকে বের হতে আমাদের কোন পথ নেই,কেউ আমাদের পথ দেয় না,রাস্তায় কাটা দিয়ে রাখে। বের হলেই মারধর করার জন্য তেড়ে আসে,অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয়! আমাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য কোন রাস্তা নাই,লুকায়া বা বিল দিয়ে চুপিসারে বের হতে হয়! তাও নিস্তার নাই!
আমার বোনের বয়স ৩০ এর উপরে কিন্তু বিয়ে দিতে পারছি না,কারন আমাদের বাসায় ত আসতে কোন রাস্তা নাই,আর কেউ যদি আসেও,আশেপাশের ওরা আমার বোনের নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়! যার কারনে ওর বিয়ে হচ্ছেনা!
পাত্রপক্ষ আসে,বিয়ে ঠিক হয়,ঐ আশেপাশের যারা আছে ৪/৫ টা পরিবার,তারা মিলে পাত্রপক্ষের বাড়িতে যেয়েও মিথ্যা বলে আসে,আর ঐ লোকরা বিশ্বাস করে,তাদের পাড়াপড়শিই ত মেয়ে সম্পর্কে ভালো বলেনা,তার মানে মেয়ের সমস্যা। তারা বিয়ে ভেঙ্গে দেয়!
আর আশেপাশের মানুষ একজোট হয়ে আমাদের নিয়ে সম্পুর্ণ মিথ্যা আর বানোয়াট ঘটনা বানিয়ে দেয়,আপনি যদি যেয়ে বলেন মালেক মাস্টার ত খুন করছে,ঐ ৩/৪ পরিবার থেকে সাক্ষী দিবে,এবং এমন সাক্ষী দিবে যে দুর থেকে যে কেউ আনায়েসেই বলে দিতে পারে,আশেপাশের মানুষই ত তাদের বিরুদ্ধে বলে,মাস্টারের পরিবার আসলেই ভালো না,অথচ একটু দুরে আসুন,যে কাউকেই আমাদের পরিবার নিয়ে জিজ্ঞাস করুন,আমাদের ভাইবোনকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করুন, ভালো ছাড়া খারাপ কোন কথা শুনবেন না!
আমাদের হয়ে যদি কেউ একটু কথা বলে,আমাদের বাসায় যদি আশেপাশের কেউ আসে,আমাদের সাথে যদি কারও মিল দেখে তাকেও তারা একঘরে করেরাখে,তাকেও আমাদের মত অবস্থা করে এই ৪/৫ টা পরিবার,যার কারনে তারাও আমাদের সাথে মিশে না,আমাদের রস্তা দেয় না,আমাদের সাহায্য করে না বা পক্ষে কোন কথা বলে না!
গত ২/৩ বছর ধরে আমার চাচা এবং আশেপাশের যারা আছে(সবাই পরস্পরের বেয়াই,আত্মীয়) সবাই চেষ্টা করছে আমাদের এলাকা ছাড়া করতে। বাবার বয়স হয়েছে,আগে তিনি যতটা টেকেল দিতে পারেন এখন আর পারছেন না,তারপর অসুস্থ,তিনিও সয়েগেছেন। আমরা যদি এলাকা ছেড়ে দেই তাহলে আমাদের বাড়িঘর তারা দখল করবে।
আমার মা,প্রায় প্রতিদিন ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করেন, ভয়ে,কবে যেন ওরা আমার ভাইকে মেরেফেলে,বোনের সাথে খারাপ কিছু করে। আমি অসহায়,আমিও চোখের পানি ছাড়া আর আশ্বাস ছাড়া কিছুই করতে পারিনা,মা সবুর করো,আমাদের যখন টাকাপয়সা হবে,তখন কেউ আর এমন করবেনা,টাকা দিয়ে জমি কিনবো,রাস্তা করবো,তখন কেউ আর অপমান করবে না,আমাদের বাহিরে যেতে রাস্তা আটকাবেনা। কিন্তু ততদিন আমার বাবা-মা বাচবে ত? তারা কি মুক্ত জীবন পাবে? তাদের কি আমি একটা রাত নিশ্চিন্ত ঘুমাতে দিতে পারব? তাদের কি আমি বলতে পারব,মা-বাবা আমরা আজ স্বাধীন, কেউ আর আমাদের মারতে আসবেনা,আমরা এখন মুক্তভাবে, স্বাধীনভাবে বাসা থেকে বের হতে পারব!
পারব কি? পারব কি বাবা-মাকে শেষ বয়সে একটু নিশ্চিন্ত সময়, নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশ দিতে?
আমি জানি না,তবে আশা ছাড়ি নাই,পারবো!
এর জন্য আপনাদের একটু সাহায্য কামনা করছ! আমাকে যদি আইনি হোক বা দুটা কথা দিয়েও হোক সাহায্য করুন। আপনারা আমাদের গ্রামের বাড়ি আসুন,আমাদের চারপাশটা দেখুন,আমার মায়ের আকুতিটুকু শুনুন। আমার মা একটু হলেও শান্তনা পাবে,আমাদের সাথে ঘটা অন্যায় কেউ হলেও জানে,খোজ নিয়েছে! একটু হলেও সত্য বলেছে,উচিৎ কথা বলেছে,প্লিজ।
থানায় যেয়ে মামলা করবো? কিন্তু টাকা কই পাব,ছোটবেলায় দেখেছি,২/১ বার পুলিশ আনা হয়েছিল থানা থেকে,তাদের টাকা দেয়া লাগে। কিন্তু আমরা ত অত টাকার মালিক না! কোর্টে মামলা চালাতে ত অনেকটাকা লাগবে,কে লড়বে মামলা! যে টাকায় মামলা লড়বো তা দিয়ে ত আমাদের পড়াশোনা চালানো যাবে,আমাদের পড়াশোনার ক্ষতি হবে,ওমন চিন্ত করে আর পুলিশী ঝামেলায় যাওয়া হয় নাই আমার স্কুল শিক্ষক বাবার ।
আর পুলিশ এসে এর ভার দেয় গ্রাম্য মুরুব্বিদের কাছে,চাচা ক্ষমতাবান মানুষ আর সাথে মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার মত ৪/৫ পরিবার,ফলাফল কিছুদিন ভালই থাকে,তারপর আবার সেই সমস্যা। কতদিন তারা আসবে আমাদের জন্য? তারাও এখন বিরক্ত। এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান নান্টু মালত,জাকির সরদার,সাত্তার হাওলাদার ওনারা এই বিষয়ে অবগত আছেন! কিন্তু কতদিন, কেউ আমাদের সাহায্য করতে পারেন নাই! তারা সবাই আশেপাশের ওদের অমানুষ আখ্যা দিয়েই তাদের অপারগতা প্রকাশ করে।
বর্তমানে আমাদের যে পরিস্থিতি দাড়িয়েছে তাতে হয়,তাদের প্রতিহত করতে হবে না হয় আমাদের মরতে হবে। এছাড়া ত আর কোন পথ দেখি না।
আপনাদের কাছে আমার হাত জোড় করে অনুরোধ,আপনারা যদি পারেন আমার পরিবারকে একটু সাহায্য করুন,আমার পরিবারকে একটু স্বাধীন, মুক্ত পরিবেশের স্বাদ দিন। আমার মা-বাবার বাকি সময়টুকু একটু নিশ্চিন্তে পার করার সুযোগ করেদিন! আমি আজীবন আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।
হোক সেটা কোন আইনি সহায়তা বা ঐ মানুষগুলাকে বুঝিয়ে হলেও। শুধু আমর পরিবারের একটু স্বাধীনতা হলেই হবে,আর কিছু চাই না!
আমি ভালো লিখতে জানি না,তাই সব কিছু ভালোভাবে গুছিয়ে লিখতেও পারি নাই,তারপরও যদি আপনাদের মনে হয় আপনারা বিস্তারিত তদন্তে আসতে পারেন। আপনারা এসে দেখুন আমার পরিবার কি অবস্থায়,কতটা বন্দী জীবন পার করছে!
যোগাযোগ
খোদেজা খাতুন(মা)-01723506220
কবির হোসেন(আমি) – 01770204189