সোমবার, ০১ মার্চ ২০২১, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন
মামুনুর রশিদ, জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ সেপ্টেম্বর রবিবার থেকে ২০১৯-২০ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল, ব্যাগ নিয়ে প্রবেশাধিকার না থাকায় দূর-দুরান্ত থেকে আসা অনেক শিক্ষার্থী অসুবিধায় পড়েন। কিছু মানুষ এই সুযোগে (২০-৩০) টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের মোবাইল, ব্যাগ জমা রাখে।
গতকাল (২৩ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের প্রবেশদ্বারে গিয়ে দেখা যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উদ্যোগী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মোবাইল, ব্যাগ বিনামূল্যে জমা রাখছে এবং তাদেরকে তাদের পরীক্ষার কেন্দ্র খুঁজে দিতে সহযোগিতা করছে এসকল স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা।
অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছরও তাদের পক্ষ থেকে ভর্তিচ্ছু পরিক্ষার্থীদের মোবাইল, ব্যাগ বিনামূল্য জমা রাখছে। প্রথম শিফট (৯টা) থেকেই এই স্বেচ্ছাসেবী সদস্যদেরকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে পরিক্ষার্থীদেরকে বিনামূল্যের এই সেবা দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা বিভিন্ন জেলা বা গ্রাম থেকে এসেছি। এখানে আমরা যারা একা আসছি তারা মোবাইল, ব্যাগ এসব রাখতে অসুবিধায় পরবো ভাবছি কিন্তু আমাদের জন্য এখানে একদল স্বেচ্ছাসেবী ভাইরা এসব বিনামূল্যে জমা রাখার ব্যবস্থা করায় আমরা টেনশনমুক্ত হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছি। তাছাড়া আমরা ক্যাম্পাসের সব বিভাগ গুলো খুঁজে পাইনা এবং পরীক্ষার শিফট গুলোর মাঝখানে সময় খুব কম থাকায় এবং অনেক সময় না চেনার কারণে আমাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারতো কিন্তু আমরা ভাইদের কাছ থেকে কিভাবে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে যেতে হবে তা সহজে জেনে নিতে পারছি।
উদ্যোক্তাদের একজন জাহাঙ্গীর আলম (অর্থনীতি বিভাগ) বলেন, কাজটি আপাত দৃষ্টিতে অনেক ছোট বা তুচ্ছ হতে পারে কিন্তু অপরিসীম ভাল লাগার। আমাদের ইচ্ছা ছিল, আমরা প্রতিটি অনুষদের সামনে বিনামূল্যে এই সেবা দেব। কিন্তু পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকের অভাবে সেটা সম্ভব হয়নি। আমি আশা করব, পরীক্ষার আগামী দিনগুলোতে আমাদের মত আরো অনেকেই এমন ক্ষুদ্র কিন্তু মহৎ কাজের জন্য এগিয়ে আসবে। তবেই আমরা আরো বিস্তর পরিসরে ভর্তিচ্ছুদের এই ছোট্ট সেবাটুকু দিতে পারবো।
উদ্যোক্তাদের আরেকজন সদস্য জোনাহিদ চকদার (জিওলজিক্যাল সাইন্সেস) বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ২০১৭ সাল থেকে আমাদের ক্যাম্পাসে আগত ভর্তিচ্ছু ছোট ভাই-বোনদের জন্য সামান্য এই কাজটি করে থাকি পরীক্ষা চলাকালীন সময়টুকুতে। তাদেরকে অন্তত এই বিষয়ক দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করছি। আর এ কাজে শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে আন্তরিক সহযোগিতা কিংবা মানসিক সাপোর্টের জন্য আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, কামরুজ্জামান শিমুল, জাহিদ আল ইসলাম, নাসিমুল আলম, হেদায়েতুল ইসলাম মুহিত, মাহফুজুর রহমান সুমন, মোহাম্মদ ইয়াসির হামজা, আলমগীর কবির, ইনজামুল ইসলাম, তানজিলা খানম, মাহজাবিন মুস্তারি তিরানা, তন্ময় ভৌমিক, কাজী মাসুম, সামছুল ইসলাম, উসমান মিয়া, ইসরাত জাহান বৃষ্টি, আশরাফুজ্জামান সবুজ, নূর আফরোজ আশা, আলমগীর হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, মূসা ইসলামসহ সবাইকে, যারা শুরু এই কাজের একেবারে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সার্বক্ষণিক সাথে থেকে এই কাজের জন্য অক্লান্ত শ্রম দিয়ে গেছেন।
উদ্যোক্তাদের আরেকজন সদস্য সোহানা আক্তার হামিদা (পরিবেশ বিজ্ঞান) বলেন, দূর-দুরান্ত থেকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা যখন পরীক্ষা দিতে আমাদের ক্যাম্পাসে আসে, তখন তাদের সাথে থাকা মোবাইল, ব্যাগ, ঘড়ি, বই প্রভৃতি মূল্যবান সামগ্রীসহ যেসব জিনিসপত্র পরীক্ষা হলে নিয়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেসব বিনামূল্যে আমাদের নিজেদের কাছে রেখে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, গত তিন বছরের ন্যায় এবারও ভর্তিচ্ছু পরিক্ষার্থীদের মোবাইল, ব্যাগ বিনামূল্য জমা রাখার কাজ করে যাচ্ছে একদল শিক্ষার্থী।