শুক্রবার, ০৫ মার্চ ২০২১, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক/ জেলা প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণে ধীরগতির কারণে ঘাটাইল ও মধুপুর হয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের চার জেলায় সড়কপথে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা। বাড়ছে প্রাণহানি।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে জামালপুর পর্যন্ত ৭৭ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। এর জন্য বরাদ্দ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। পাঁচটি প্যাকেজে ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। সড়কের ১ থেকে ৩ নম্বর প্যাকেজে কাজ করছে ঢাকার ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। অর ৪ ও ৫ নম্বর প্যাকেজে কাজ পেয়েছে জামিল অ্যান্ড কোম্পানি। গত ৭ নভেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়। পুরো সড়কে খানাখন্দ। কোথাও কোথাও মাটির স্তূপ ফেলে রাস্তা সংকীর্ণ করে রাখা হয়েছে। পেভমেন্টে নিয়মিত জল সিঞ্চন না করায় তা ফেটে চৌচির হচ্ছে।
সড়কের এক পাশে যানবাহন চালু রেখে অপর পাশে পেভমেন্ট ঢালাইয়ের কাজ করায় ভাঙাচোরা সরু অংশ দিয়ে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও শেরপুর জেলার হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের ব্যাপক চাপে সড়কের অনেক অংশ দেবে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এক হাঁটু পানি জমে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রশস্তকরণের জন্য সড়কের কোথাও কোথাও দুই পাশের মাটি খুঁড়ে পাঁচ-ছয় ফুট গর্ত করে রাখা হয়েছে। খোঁড়াখুঁড়িতে সরু সড়কে দুটি বড়ো যানবাহন পরস্পর ক্রস করতে গেলে খাদে পড়ে যায়।
ঘাটাইল, মধুপুর ও ধনবাড়ী থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভাঙাচোরা সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির দরুন আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই সড়কে ২৭টি পৃথক দুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং দুই শতাধিক লোক আহত হয়।
মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার আলম খান জানান, এই সড়কে এখন শুধু যন্ত্রণা নয়, এর পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে মৃত্যুকূপ।
বাংলাদেশ ট্রাকড্রাইভার্স ইউনিয়ন মধুপুর শাখার সম্পাদক আনিছুর রহমান হীরা জানান, সড়কের দুরবস্থায় বৃহত্তর ময়মনসিংহে পণ্য পরিবহনে বিশেষ করে মধুপুর গড় এলাকার আনারসসহ নানা ফল ও সবজির মতো পঁচনশীল পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়ছেন সংশ্লিষ্টরা। ভাঙাচোরা সড়কে ট্রাক, বাস ও কাভার্ড ভ্যানসহ ভারী যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ঘাটাইল পৌর সভার মেয়র শহীদুজ্জামান শহীদ জানান, ভাঙাচোরা ও খোড়াখুড়ি করা এ সড়কে কালিহাতী, ঘাটাইল, মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা শহর অবস্থিত হওয়ায় হাটবাজার, ব্যবসাবাণিজ্য, চলাচল ও যাতায়াতে মানুষের নজীরবিহীন ভোগান্তি হচ্ছে। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ারয় স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পাত্তা দিচ্ছেন না।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলিমা আহমেদ পলি মানুষের নিদারুণ দুর্ভোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার সমস্যাটি তোলা হয়েছে, কিন্তু কাজের গতি আগায়নি।
এ ব্যাপারে ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার হাফিজুর রহমান জানান, সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয় গত ফেব্রুয়ারি থেকে। মাঝখানে নির্মাণ সরঞ্জাম সরবরাহের অপ্রতুলতার দরুন কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিল। এখন সাধ্যমতো কাজ চলছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিমুল এহসান জানান, নানা কারণে নির্মাণকাজে সাময়িক ধীরগতি ছিল। এখন যাতে পুরোদমে হয়, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফান্ডের সংকট এবং নির্মাণকাজের ধীরগতির জন্য প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।