বুধবার, ০৩ মার্চ ২০২১, ১১:১৫ অপরাহ্ন
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ঠিকাদার নিযুক্ত হন ঢাকার বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির পরিচালক জাহের উদ্দিন সরকার। তবে যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন প্রভাবশালী এই ঠিকাদার।
সাতক্ষীর সদর হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক দুর্নীতির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে ঠিকাদার জাহের উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনার নামে ১৬ কোটি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৮২৭ টাকা লোপাটের ঘটনায় গত ৯ জুলাই দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা করে দুদক। দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের পক্ষে মামলাটি করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সাবেক স্টোর কিপার একেএম ফজলুল হক, হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন, রাজধানীর ২৫/১ তোপখানা রোডের বেঙ্গল সায়েন্টেফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির পরিচালক ঠিকাদার জাহের উদ্দিন সরকার, তার ছেলে মো. আহসান হাবিব, জাহের উদ্দিনের বাবা মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার হাজি আবদুস সাত্তার সরকার, ভগ্নিপতি ইউনিভার্সেল ট্রেড কর্পোরেশনের কর্ণধার মো. আসাদুর রহমান, জাহের উদ্দিন সরকারের নিয়োগকৃত প্রতিনিধি কাজি আবু বকর সিদ্দিক ও মহাখালী নিমিউ অ্যান্ড টিসির সহকারী প্রকৌশলী এএইচএম আব্দুল কুদ্দুস।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি না কিনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৬ কোটি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৮২৭ টাকা লোপাট করেছেন।
অন্যদিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সফটওয়্যারসহ মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে ৬ কোটি ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা লোপাট করা হয়েছে। যা দুদকের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও ঠিকাদারদের নামে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুদকের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। দুদকের খুলনা কার্যালয়ে পাঁচজনকে আসামি করে মামলাটি করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান।
মামলায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ শাহজাহান আলী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার পুরোনো পল্টন এলাকার মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সাত্তার সরকার, ঢাকার সেগুনবাগিচার মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আহসান হাবীব, ঢাকার বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির স্বত্বাধিকারী জাহের উদ্দীন সরকার ও দিনাজপুরের ইউনিভার্সাল ট্রেড কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী আসাদুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য প্যাকস নামের সফটওয়্যারসহ সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি কেনার নামে ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে ৬ কোটি ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা লোপাট করেছেন আসামিরা। পরস্পর যোগসাজশ করে সরকারের এসব টাকা লোপাট করেন তারা। অপরাধের প্রমাণ পাওয়ায় দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
সাতক্ষীরা সাবেক সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, যন্ত্রপাতি সবই হাসপাতালে রয়েছে। যেহেতু আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেহেতু এখন আইনের মাধ্যমেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। আশা করছি সব কিছুই ভালোভাবেই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
অন্যদিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ শাহজাহান আলী জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সার্ভার মেশিনটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল প্রদান করা হয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর। মেশিনটি সম্পূর্ণরূপে চালুর জন্য জাপান থেকে ইঞ্জিনিয়ার এসে সফটওয়্যার ইনস্টল করবেন। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে দুই বার আসার সময় পরিবর্তন করেছেন। সেজন্য মেশিনটি চালু হয়নি। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল প্রদান করা হলেও মেশিনটি চালু না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাত কোটি টাকার সিকিউরিটি মানি রেখে দেয়া হয়েছিল।
দুর্নীতির বিষয়ে ঠিকাদার জাহের উদ্দীনের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দুর্নীতির মামলার বিষয়ে দুদকের সাতক্ষীরার পিপি মোস্তফা আসাদুজ্জামান দিলু জাগো নিউজকে বলেন, এ মামলায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সাবেক স্টোর কিপার একেএম ফজলুল হক বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া বাকি আট আসামিদের মধ্যে দুইজন পলাতক ও অন্যরা আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।