মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১, ০৫:২১ অপরাহ্ন
আলিফ হোসেন, তানোরঃ
রাজশাহীর তানোরের রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগ (আসল) ও আমি লীগ (হঠাৎ) মুখোমুখি অবস্থানে বলে অভিযোগ উঠেছে, আগামিতে রাজনীতি কোন পথে যাবে সেটা নিয়েও তৃণমুলের নেতাকর্মীরা শঙ্কায় রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের (আসল) নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দায় রশিদ ময়না। অন্যদিকে আমি লীগের (হঠাৎ) নেতৃত্বে রয়েছে উপজেলা সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুন। আওয়ামী লীগ (আসল) ও আমি লীগ (হঠাৎ) বলতে কি বোঝাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু বলেন, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কখানোই আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করেনি এবং সর্বস্ব বিলিয়ে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে নিবেদিত রয়েছেন তারাই (আসল) আওয়ামী লীগ, আর যারা আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদে থেকে বিশ্বাসঘাতকতা-বেঈমানী করে আওয়ামী লীগের বিরোধীতা ও বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার বিজয় ঠেকাতে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে নৌকার বিজয় প্রতিহত করেছে, বিভিন্ন কৌশলে দলে দলীয় কোন্দল সৃস্টি করেছে নানা ভাবে দলের ক্ষতি করছে তারাই আমি লীগ (হঠাৎ) বলে তৃণমুল মনে করছে। এদিকে তৃণমুলের ভাষ্য, আমি লীগের দাপটে তাদের অনুসারীরা ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ ত্যাগীরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। অধিকাংশক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের সংগঠিত সম্ভবনাময় গোছানো মাঠ নস্ট হচ্ছে।
জানা গেছে, বিগত ২০০৯ সালে সুত্রপাত হয় উপজেলা আওয়ামী লীগে বিদ্রোহের রাজনীতি। বিগত ২০০৯ ও ২০১৪ সালে পর পর দুইবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন দেয়া হয় সভাপতি গোলাম রাব্বানীকে। কিন্ত্ত সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নৌকার পরাজয় নিশ্চিত করে।এছাড়াও সভাপতি এবং সম্পাদক মিলে সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করে প্রমাণে ব্যর্থ হয়। তবে এখানেই শেষ নয় মুন্ডুমালা কলেজ চত্ত্বর শহীদ মিনারে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তারা বিএনপি নেতা প্রয়াত শীষ মোহাম্মদের হাতে হাত রেখে শপথ করেন রাজনীতি থেকে ফারুক চৌধুরীকে সরিয়ে দিতে। কিন্ত্ত এতো কিছুর পরেও এমপি ফারুক চৌধুরী তাদের ক্ষমা করে দিয়ে গোলাম রাব্বানীকে দুবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দুবার মুন্ডুমালা পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন এবং বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি করেন,অন্যদিকে মামুনকে দুবার সম্পাদক, বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও তানোর মহিলা কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ তাদের এতো সম্মানিত করার পরেও জাতীয় সংসদ, জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তারা এমপি বিরোধীতা ও পৃথক বলয় গড়ার নামে দলীয়কোন্দল সৃস্টি এবং প্রকাশ্যে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনের মাঠে কাজ করেছেন। রাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগীতা নিয়ে লবিং-গ্রুপিং থাকবে এটাই স্বাভাবিক এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কিন্ত্ত লবিং-গ্রুপিং আর দলের মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করা কি এক জিনিষ যারা এটা করে তারা কখানোই সেই দলের আদর্শিক নেতাকর্মী হতে পারে না। কিন্তু কেনো যারা এসব করছে এমপি না চাইলে তারা কি এতো ভাবে সম্মানিত ও লাভবান হতে পারতেন কখানোই সম্ভব ছিল না। তাহলে তারা এমপির প্রতি কৃতজ্ঞ না হয়ে এতো অকৃতজ্ঞ হলেন কি ভাবে, আর অকৃতজ্ঞকে তো মহান সৃস্টিকর্তাই পচ্ছন্দ করেন না। যারা উপকারির উপকার শিকার করে না, যাদের মহান সৃস্টিকর্তা পচ্ছন্দ করে না তাদের নেতৃত্ব সাধারণ কি বিবেচনায় মেনে নিবেন। আবার এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে খারাপ আঙ্খায়িত করে যারা তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে, তারা বুকে হাত রেখে বলুক তো এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানে সঙ্গে থেকে কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর রাব্বানী-মামুনের সঙ্গে থেকে কত মানুষ উপকৃত হয়েছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, এখানো দেশের রাজনীতি বিকেন্দ্রীক নয় কেন্দ্রিভূত। যেখানে এমপিদের রাজনীতি প্রধানমন্ত্রী মুখী কি করলে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা বদ্ধি পায় ও তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটে এসব বিবেচনা করে এমপিদের রাজনীতি করতে হয় কখানো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এমপিরা রাজনীতি করতে পারেন না। তেমনি তৃণমুলের নেতৃত্ব-জনপ্রতিনিধিদের রাজনীতি হবে এমপিমুখী কি করলে এমপির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় ও তাদের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয় এসব বিবেচনা করেই তাদের রাজনীতি করতে হয় তারা এমপিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজনীতি করতে পারেন না। কারণ দু”দশটা এমপি বিরোধীতা করলে যেমন প্রধানমন্ত্রীর কিছু যায় আসে না, তেমনি তৃণমুলের দু”দশটা মেয়র-কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান-মেম্বার বিরোধীতা করলে একজন এমপির কিছু যায় আসে না বিষয়টি বুঝতে হবে। এটা যারা বোঝে না তারা রাজনৈতিক অবার্চিন এরা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। এব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদিপ সরকার বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের একের পর এক সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডে তৃণমুলের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ,তিনি বলেন, আগামি কাউন্সিলেই তারা এর প্রতিদান পাবেন।#