মঙ্গলবার, ০২ মার্চ ২০২১, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
আলিফ হোসেন তানোর
রাজশাহীর তানোরের কৃষ্ণপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির মেয়েদের মধ্যে শিক্ষাদানে ব্যাপক অবদান রেখে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্যি সরকারী সহায়তায় এখানো কোনো একাডেমিক ভবন নির্মাণ না হওয়ায় কলেজটি নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এলাকার অভিভাবক-সচেতন মহল, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবী একটি একাডেমিক ভবন, সীমানা প্রাচীর ও শেখ রাশেল ডিজিটাল ল্যাব যেনো তাদের দেয়া হয়। শিক্ষানুরাগী সচেতন মহল কলেজটিকে জাতীয়করণের জোর দাবি করে বলেন, জাতীয়করণ করা হলে কলেজটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে আরো ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে। কলেজের বড় সুবিধা হলো কলেজে অধ্যায়নরত দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের ফরম পূরুণ ও শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর্থিক সহায়তা করে আসছে। এছাড়াও কলেজ হোষ্টেলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে থাকা খাওয়ার জন্য কোনো প্রকার অর্থ গ্রহণ করা হয় না সম্পূর্ণ নিঃখরচে শিক্ষার্থীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র ও অভাবী মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পথ সুগম হয়েছে। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা ও অভাবের কারণে যেসব মেয়েদের মেধা থাকা স্বত্বেও কলেজ চৌহদ্দিতে পা রাখা সম্ভব হয় না, তাদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে কৃষ্ণপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজ। এখানে শিক্ষা দেয়া হয় বিনা বেতনে ও আবাশিক ছাত্রীদের থাকা-খাওয়া ফ্রি করা হয়েছে। কলেজ অধ্যক্ষ আলহাজ্ব আতাউর রহমানের উদোগে শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন-ভাতার প্রাপ্য টাকা থেকে এসব খরচ চালানো হয়। এছাড়াও এখানে টেস্ট পরীক্ষা নেয়া হয় ব্যতিক্রম ভাবে পুরো কলেজ চত্ত্বরে বেঞ্চ বসিয়ে একটি আসনে একজন শিক্ষার্থীকে বসানো হয় যেটা অন্যদের কাছে অনুকরণীয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ১৯৯৮ সালে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী অধ্যক্ষ আতাউর রহমানের একক প্রচেষ্টায় তানোর-মুন্ডুমালা রাস্তর দক্ষিন পার্শ্বে প্রায় তিন একর জমির উপরে প্রাকৃতিক ও মনোমুগ্ধর নিরিবিলি পরিবেশে কৃষ্ণপুর আদর্শ মহিলা কলেজ স্থাপন করা হয় ও বিগত ২০০৪ সালে কলেজটি এমপিওভুক্তকরণ হয়। এই কলেজ স্থাপনের পূর্বে উপজেলায় অভাবী ও হদদরিদ্র পরিবারের মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের তেমন কোনো সুযোগ ছিলনা। বিগত ২০১৩ সালে কলেজটিকে ডিগ্রী কলেজে উন্নীত করা হয়। কলেজে মোট ৩২ জন শিক্ষক-কর্মচারি ও প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে পাবলিক পরীক্ষায় কলেজের পাশের হার প্রায় শতভাগ। এছাড়াও স্কাউট, বিজ্ঞান ও ডিজিটাল মেলায় প্রতিবছর কলেজটি প্রথম স্থান অর্জন করে আসছে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য এখানো সরকারী অর্থ ব্যয়ে কলেজটিতে কোনো একাডেমিক ভবন গড়ে উঠেনি।
জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স পাশ করা আতাউর রহমান কৃষি ও ব্যবসার সম্পৃক্ত থাকলেও শিক্ষার প্রতি আর্কষণ ছিলো সহজাত। বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির অভাবী ও হতদরিদ্র পরিবারের মেয়েদের উচ্চশিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার ঘটনা তাকে কষ্ট দিতো ব্যথিত করতো। আর তখন থেকেই প্রত্যন্ত গ্রাম কৃষ্ণপুরে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার চিন্তা তার মাথায় ভর করে। আগ পিছ না ভেবেই আতাউর রহমান তানোর-মুন্ডুমালা রাস্তার ধারে নিজের তিন একর জমি ছেড়ে দিলেন একটা মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য। শিক্ষানুরাগী আতাউর রহমান তার উপার্জিত সমুদয় অর্থ দিয়ে প্রায় ১৫০ ফুট একটা টিনশেড ঘর তৈরী করেন এবং ওই বছরই প্রতিষ্ঠা করেন কৃষ্ণপুর আদর্শ মহিলা কলেজ ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিলেন নিজেই। এর পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। অধ্যক্ষ আতাউর রহমানের একক প্রচেষ্টা ও মেধাবী চিন্তা-চেতনার গুণে কলেজটি বরেন্দ্র অঞ্চলের মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণের মডেল হিসেবে উন্নীত হয়েছে। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ আলহাজ্ব আতাউর রহমান জানান, প্রত্যন্ত গ্রমাঞ্চলের অধিকাংশ অভাবী ও হতদরিদ্র পরিবারের মেয়েদের মেধা থাকা সত্ত্বেও কেবল অভাবের কারনে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায় না। হয় তাদের অকালে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়, নইতো বাবার সংসারেই বোঝা হয়ে থাকতে হয়। তিনি মনে করেন, সত্যিকারের নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হলে এই পশ্চাৎপদ মেয়েদেরও উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের চাই এমন একটি ব্যতিক্রমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে তারা বিনা পয়শায় থাকা খাওয়া ও লেখাপড়া করার সুযোগ পাবে। এই চিন্তার ফসল এই কলেজ। তিনি বলেন, একাডেমিক ভবন, শেখ রাশেল ডিজিটাল ল্যাব ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা অতীব জরুরী তাই তিনি এসব বিষয়ে সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমস্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা, দিপুমণি এবং মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধূরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, কলেজ পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি মাননীয় এমপি মহোদয় আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধূরীর কাছে থেকে তিনি অনেক সহযোগীতা পেয়ে আসছেন বলে তিনি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন। #
তানোর প্রতিনিধি