সোমবার, ০১ মার্চ ২০২১, ০৪:০৪ অপরাহ্ন
তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
রাজশাহীর তানোরে ফের আলোচনায় উঠে এসেছে তানোর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান। চলতি বছরের ৬ নভেম্বর বুধবার মেয়র মিজানের বিরুদ্ধে উঙ্খাপতি কোটি কোটি টাকা তছরুপসহ নানা অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত করার জন্য তাকে রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে এতে ফের মেয়র মিজানকে নিয়ে এসব আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। প্রসঙ্গত, তানোর পৌর মেয়র মিজানের বিরুদ্ধে ৪ বছরের কোটি কোটি টাকার দূর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরে দূর্নীতি দমন কমিশনে (দুদুক) অভিযোগ করেছেন পৌরসভার ৬ কাউন্সিলর। অভিযোগের পাশাপাশী তার অনুলিপি পাঠানো হয় স্থানীয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, স্বরাস্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও রাজশাহী জেলা প্রশাসকসহ সরকারী বিভিন্ন গুরুত্ব¡পূর্ণ দফতরে। এছাড়াও অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, পৌরসভার (দায়িত্বপ্রাপ্ত) সচিব সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম ও কার্যসহকারী মাহাবুব আলমকে। অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মোমেনা আহমেদ, পলি বেগম ও জুলেখা বেগম। এছাড়াও ১ নন্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাছির উদ্দিন, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মশিউর রহমান ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর উজ্জল হোসেন।কাউন্সিলরগণ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষণা দিয়ে দূর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করে অনেক রাঘোব-বোয়াল আটক করেছেন। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বলেন, এবার তারা দেখতে চাই নাশকতা-বোমাবাজীসহ প্রায় ডজন খানেক মামলা মাথায় নিয়ে বিএনপি নেতা মেয়র মিজান যেসব দূর্নীতি করেছে সেই দূর্নীতির বিষয়ে তিনি বা তার সরকার কি করে সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। তারা বলেন, মেয়র মিজান বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির করেও এখানো ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় কেউ কেউ আবার তাকে দূর্নীতির মুকুটহীন সম্রাট বলে অ্যাখ্যয়িত করেছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিগত ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্ররুয়ারী বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মিজান তানোর পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর পৌর কার্যালয়ে শুরু হয় লাগামহীন অনিয়ম-দূর্নীতি। অভিযোগে আরো বলা হয়, অলিখিত রেজুলেশন খাতায় প্রতিমাসে কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরে ওই স্বাক্ষর দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন করে প্রকল্পের টাকা ও রাজস্ব তহবিলের অর্থ তসরুফ করেন মেয়র। এছাড়াও সরকারি বরাদ্দের অর্থ ইচ্ছেমত বিভিন্ন প্রকল্পের নামে উত্তোলন করে আতœসাৎ করছেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, পৌর এলাকার কালিগঞ্জ হাট থেকে তালন্দ হাট পর্যন্ত সরকারী রাস্তার ধারে লাগানো গাছে চুন ও রং করার নামে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রিং পাইপ সরবরাহ না করেই সরবরাহের নামে ১১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এছাড়াও বিগত ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩ অর্থবছরে রাজস্ব ও সরকারি বরাদ্দ এডিপি ফান্ডের এক কোটি ৫০ লাখ টাকার কোনো কাজ ছাড়ায় বরাদ্দের টাকা মেয়র তছরুপ করেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে। আবার চার বছর ধরে পৌরসভার নিজস্ব রোলার মেশিন গোপনে ঠিকাদারদের কাছে ভাড়া দিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা পৌর একাউন্টে জমা না করে মেয়র নিজে আতœসাৎ করেছেন।
অন্যদিকে, গোল্লাপাড়া হাটের মাছ বাজারের টিনসেটের কয়েকটি টিন পরিবর্তন করে ১১ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। উপজেলার মাসিন্দা এলাকার তামান্না কোল্ডস্টোর নির্মাণের সময় তানোর-রাজশাহী সড়কের কালিগঞ্জ মোড়ের ভাঙ্গা রাস্তার গর্তে স্টোর কর্তৃপক্ষ ইটের ভাংড়ি দিয়ে রাস্তাটি সংস্কার করেন। অথচ ওই রাস্তা সংস্কার দেখিয়ে তানোর পৌর মেয়র এডিপি ও টিআর প্রকল্পে বরাদ্দ দেখিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা আতœসাৎ করেছেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানির পাম্প স্থাপনে প্রকৃত খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু প্রত্যেক পানির পাম্প স্থাপনে এক লাখ ৫ হাজার টাকা খচর দেখিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা তছরুপ করেন মেয়র। অপরদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের নামে ১২ কোটি টাকার মধ্যে গোপনে ৭ কোটি টাকার কাজ টেন্ডার দিয়ে অর্থ লোপাটের মহোৎসব চলছে। এসব কাজ বিষয়ে মেয়র কাউন্সিলরদের সঙ্গে পরামর্শ বা সমন্বয় সভা করেননি। মেয়র তার ইচ্ছেমত পৌরসভার কাজের নামে অর্থ তছরুপ করছেন।
তানোর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক তিনি। বিএনপির দলীয় দাপট খাটিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বির্তকিত নির্বাচনে মাত্র ১৩ ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। মিজানুর রহমান মিজান তানোর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর গত ৪ বছরে কোটি কোটি টাকার সম্পদ আহরণ, বিলাস বহুল বাড়ি ও গাড়ী করেছেন। অথচ নিয়মিত তিনি পৌরসভায় বসেন না। আর মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি মাত্র ৪ বছরে ফুঁলেফেঁপে বটগাছ হয়েছেন। তানোর পৌরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, মেয়র সাহেব তানোর পৌর সদরের গোল্লাপাড়া বাজারের প্রবাহমান খালের প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে তার নিজস্ব বরেন্দ্র ভবন ও বিএনপির কার্যালয়ের নামে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি তিনতলা বিশিস্ট অট্রালিকা নির্মাণ করেছেন।
এনিয়ে তানোর পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর মোমেনা আহম্মেদ বলেন, প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই মেয়র নামমাত্র প্রকল্প দেখিয়ে পৌরসভার অর্থ আতœসাৎ করেছেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পে সরকারি ভাবে তানোর পৌরসভায় ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে, এর মধ্যে ৭ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প দেখিয়ে একটি পত্রিকায় ও ইন্টারনেটে টেন্ডার দিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে তার নিজেস্ব জৈনক এক ঠিকাদারকে নামমাত্র কাজ করে জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের অর্থ তছরুপ করেছেন। তিনি বলেন, মেয়রকে এসব অর্থ তছরুপে সহায়তা করেছে তানোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (দায়িত্বপ্রাপ্ত) পৌরসচিব জাহাঙ্গীর আলম ও কার্যসহকারী মাহবুব আলম। তারা পরস্পর যোগসাজসে গত ৪ বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা আতœসাৎ করেছেন। এনিয়ে যোগাযোগ করা হলে তানোর পৌরসভার (দায়িত্বপ্রাপ্ত) সচিব পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এসব বিষয়ে কোন তথ্য দেয়া যাবে না জানিয়ে তিনি মেয়রের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। এব্যাপারে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তানোর পৌর মেয়র মিজানুর রহমান মিজান অভিযোগ অস্বীকার করেন, তবে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলেই সাংবাদিকদের এড়িয়ে গিয়ে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। #