মোবাইল ফোনে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এর করা একটি জরিপে এসেছে, গেল এপ্রিল মাসে দেশের ২৭ জেলায় চার হাজার ২৪৯ জন নারী ও ৪৫৬ জন শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে।
বুধবার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে জরিপের তথ্য উপস্থাপন করে জানানো হয়, এদের মধ্যে এক হাজার ৬৭২ জন নারী এবং ৪২৪ জন শিশু প্রথমবারের মতো নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শিশুদের মধ্যে ৯২ ভাগই তাদের বাবা-মা ও আত্মীয়দের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে।
সংস্থার দুইটি প্রকল্পের কর্মএলাকার ২৪টি সহযোগী সংগঠন ২৭টি জেলার ৫৮ উপজেলার ৬০২টি গ্রাম ও চারটি সিটি কর্পোরেশনের ১৭ হাজার ২০৩ জন নারী ও শিশুদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করে।
ব্রিফিংয়ে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, “জরিপের তথ্য অনুযায়ী স্বামীর দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৪৮ জন নারী, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দুই হাজার আটজন, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৫ জন এবং অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৩০৮ জন নারী। এর বাইরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন চারজন নারী, হত্যা করা হয়েছে একজনকে এবং যৌন হয়রানি করা হয়েছে ২০ জন নারীকে।
“উত্তরদাতা চার হাজার ২৫৯ শিশুর মধ্যে ৪২৪ জন শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর বাইরে বাল্যবিয়ে হয়েছে ৩৩টি এবং অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪২টি। চারজন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১৬ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়, অপহৃত হয়েছে দুইজন, যৌন হয়রানির শিকার ১০ জন এবং রিলিফ নেয়ার সময় ১০ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।”
করোনাভাইরাসের এই সঙ্কটের মধ্যে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে পারিবারিক এবং অন্যান্য সহিংসতা প্রতিরোধ, সহায়তা দিতেই জরিপটি চালানো হয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
জরিপের বিষয়ে শাহীন আনাম বলেন, “লকডাউনের কারণে ইনডেপথ জরিপ করা সম্ভব হয়নি। সেজন্য আমরা টেলিফোনে করেছি। আমরা লকডাউনে পারিবারিক নির্যাতনের অবস্থা ও কি ধরণের নির্যাতন হচ্ছে তা জানতে চেয়েছি। তাদের কি ধরণের সাপোর্ট দেওয়া যায় সেটিও জানতে চেয়েছি।”
সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুরা যেন ফোন করে দ্রুত সহযোগিতা পায় সেজন্য সরকারি হেল্প লাইনগুলো আরও কার্যকর রাখার সুপারিশ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সহিংসতার কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া নারীদের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় পাওয়ার ব্যবস্থা করা ও অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
এছাড়া মহামারী পরিস্থিতিতেও নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চালু রাখতে ‘ভার্চুয়াল কোর্ট অর্ডিন্যান্স’ দ্রুত রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়।
ব্রিফিং সঞ্চালনা করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর শাহানা হুদা।