বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ১০:২১ পূর্বাহ্ন
ইসলামীজিন্দেগীতেবরকতময় ও ঐতিহাসিক যেদিবসগুলিরয়েছেতারমধ্যেপবিত্রআশুরাহচ্ছেঅন্যতমএকটিদিবস। আশুরাশব্দটিআরবী‘আশরুন’ থেকে উদগত। ইসলামীশরীয়তেরপরিভাষায়হিজরীসনেরপ্রথমমাসমুহররমের ১০ম তারিখকেপবিত্রআশুরাবলাহয়ে থাকে। ইসলামীসনগণনায়মুহররমমর্যাদাবানএকটিমাস। মুহররমশব্দের অর্থ নিষিদ্ধ বাপবিত্র। এ মাসসহআরো ৩টি মাসআছে যে মাসগুলোতেঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধ বিগ্রহকরানিষিদ্ধ। এরকমনিষিদ্ধ কর্মকান্ড থেকে এমাসটিপাক-পবিত্রবলে এ মাসকেমুহররমবাপাকপবিত্রমাসবলাহয়ে থাকে। এ মাসে স্বয়ংরাসূল (সঃ)নিজেও কোনধর্মযুদ্ধওকরেননি। এমনকিইসলামপূর্ব যুগেও এ মাসেশান্তিবিরাজকরতো। মুহররম, রজব, যিলক্বদ ও যিলহজ্ব- এ চারটিমাসকেআল্লাহতা’য়ালাযুদ্ধ-বিগ্রহনিষেধকরে পরম সম্মানিত ও পবিত্রবলেআলকুরআনেউল্লেখকরেছেন। এরশাদ হয়েছে‘‘তোমরা জেনে রেখ, এই চারটিমাসবড়ফজিলত ও বরকতপূর্ণ। তোমরা এই মাসগুলোতেপাপাচারকরেনিজেদেরউপরজুলুমকরোনা’’ তাওবা-৩৬-৩৭। স্বাভাবিকভাবেবুঝাযায়, এসবমাসে নেকআমলকরলেছাওয়াবঅনেকবেশীহবেএবংউল্লেখিতচারমাসেরমধ্যে মুহররমেরঐতিহাসিক গুরুত্বওঅপরিসীম।
এ দিনে ঘটে যাওয়াকিছুঐতিহাসীককিছুঘটনাঃ
পবিত্রআশুরামুসলিমঐতিহ্যে বড়ইবরকতপূর্ণ ও নানাভাবে অবিস্মরণীয়। ইসলামপূর্ব যুগেও এ দিনকে খুব মর্যাদাসহকারেপালনকরাহতো। সৃষ্টিরশুরু থেকে এ দিনেঅনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসংঘটিতহয়েছে।কুরআন, হাদিস ও ঐতিহাসীকদেরকাছ থেকেযাজানাযায়, তাহলো-
পবিত্রআশুরারদিনেমহানআল্লাহতা’য়ালাসাগর, পাহাড়, প্রাণীকুল, আসমান-জমিন ও লওহ-কলম সৃষ্টিকরেছেন। আবারএদিনেইআরশেআজীমেসমাসীনহয়েছেন। তামামমাখলুকাতধ্বংসওহবেমুহররমের দশ তারিখে। আল্লাহপরওয়ারদেগার এ দিনেআদি পিতাহযরতআদম (আঃ)কে তারখলিফা নিযুক্ত করেছেনআরজান্নাতে দাখিল ও পৃথিবীতেনির্বাসনের পর মক্কায়ে মুয়াজ্জমার আরাফাতময়দানেহযরতমাহাওয়ার সাথে পরিচিতহয়েছেন’’ও দীর্ঘ দিন ক্ষমা প্রার্থনা শেষে দু’জনেরতাওবাকবুলকরেন। পৃথিবীরপ্রথমহত্যাকান্ডহাবিলকাবিলেরঘটনাওএদিনে সংঘটিতহয়। হযরতনূহ (আঃ) সদলবলেমহাপ্লাবন শেষেযুদীপাহাড়েঅবতরণকরে পৃথিবীকেনতুনভাবেসাজিয়ে তোলেন এ দিনে। হযরতইব্রাহীম (আঃ) ক্ষমতাশালীমূর্তিপূজারীনমরুদেরঅগ্নিকান্ড থেকে উদ্ধারহন এ দিনে, হযরতআইয়ুব (আঃ) কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তিপান এ দিনে, হযরতইউনুছ (আঃ) মাছের পেট থেকে পরিত্রাণএবং ফেরাউনের স্ত্রী হযরতআছিয়া (আঃ) শিশুপুত্রমুসা (আঃ)কে এ দিনই ফেরতপান। আল্লাহপাক এ দিনেহযরতইদ্রিস (আঃ)কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায়পাঠানোর পর গুনাহ-অপরাধেরজন্য কান্নাকাটিকরলেআবারতাকেজান্নাতে ফেরত নেন। এ দিনইহযরত দাউদ (আঃ) এর গুনাহমাফহয়, কুমারীমাতাবিবিমরিয়ম (আঃ) এর গর্ভ হতেহযরতঈসা (আঃ)’র পৃথিবীতেআগমন ঘটে। এ দিনইরহমতস্বরূপআসমানহতেপ্রথম বৃষ্টিনামে। হযরত সোলাইমান (আঃ) হাতেরআংটিহারিয়েসাময়িকভাবেরাজ্য হারাহলেমহররমের ১০ তারিখআল্লাহতা’য়ালাতাররাজ্য ফিরিয়ে দেন। হযরতইউসুফ (আঃ) তারপিতাইয়াকুব (আঃ) এর সাথে সুদীর্ঘ ৪০ বছর পর এ দিনেসাক্ষাৎলাভকরেন। হযরতমুসা (আ:) তৎকালীনমিসরেরবাদশাহ ফেরাউনেরনির্যাতনেঅতিষ্ঠহয়েপড়লে এ দিনেতিনিবনীইসরাঈলকে সাথে নিয়েনীল নদ পার হয়েযানআরনদীরমাঝপথে পানিচাপাপড়ে ফেরাঊনেরসলিলসমাধি ঘটে। হযরতঈসা (আঃ)কে আল্লাহতা’য়ালানিজঅনুগ্রহে এ দিনেআসমানেতুলে নেন। হযরতমুসা (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-এর স্মৃতিবিজড়িত এ দিনইহুদি-খৃষ্টানদেরমাঝেওখুবইতাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের পেয়ারানবীহযরতমুহাম্মদ (সাঃ) হিযরতের পর মদিনায়এসে দেখতে পেলেন যে, ইহুদিরা এ দিনে রোযারাখছে। তারাধর্মীয়ভাবগাম্ভীর্যের সাথে আশুরাপালনকরছে। মহানবী (সাঃ)আরোজানতেপারলেন যে, তারাহযরতমুসা (আঃ) এরপ্রতি কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপনেরজন্য এ দিনকে বেছেনিয়েছে। হুজুরেপাক (সঃ) উপলদ্ধি করলেন যে, হযরতমুসা (আঃ) এরপ্রতিআমাদেরওঘনিষ্টসম্পর্ক রয়েছে। তাইতিনি ঐ দিনই রোযারাখলেনএবংসাহাবীদেরও রোযারাখতেউপদেশ দিলেন। তবে ১০ মুহররমেরআগেপরেএকটি রোযাবাড়িয়ে দুটি রোযারাখতেবললেনযাতেমুসলমানদের ইবাদতের সাথে ইহুদি-খৃষ্টানদেরইবাদতেরমিলনাহয়।
আশুরার রোজারফজিলতঃ
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসরা. হতেবর্ণিত, তিনিবলেন, আমিনবীকরিমসাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লামকে রোজারাখারজন্য এত অধিকআগ্রহীহতে দেখিনিযত দেখেছি এই আশুরারদিনএবংরমজানমাসের রোজারপ্রতি। [বুখারি]
আবুহুরায়রারা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লামইরশাদ করেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজাহচ্ছেআল্লাহরমাসমুহাররম (মাসের রোজা)। [সহিহমুসলিম]
রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লামইরশাদ করেন, আশুরারদিনের রোজারব্যাপারেআমিআল্লাহরকাছেআশাকরি, তিনিপূর্ববর্তী এক বছরেরপাপ ক্ষমাকরে দেবেন। [সহিহমুসলিম]
রোজারাখারনিয়মঃ
ইসলামের দৃষ্টিতেআশূরাউপলক্ষে দুটি রোজারাখামুস্তাহাব। অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ। শুধু ১০ তারিখ রোজারাখামাকরূহ। এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনাকরেন, যখনরাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লামআশুরার রোজারাখলেনএবং (অন্যদেরকে) রোজারাখারনির্দেশ দিলেন। লোকেরাবলল, হে আল্লাহররাসুল! এটিতোএমনদিন, যাকেইহুদি ও খ্রিষ্টানরাবড়জ্ঞানকরে, সম্মানজানায়। তখনরাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লামবললেন, আগামীবছরএদিনআসলে, আমরা নবম দিনও রোজারাখবইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারীবলছেন, আগামীবছরআসার পূর্বেইরাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লামেরওফাতহয়েগিয়েছে।
আশুরারদিনেকিছুকরনীয়কাজঃ
সম্ভব হলে উক্ত দিনেযারা রোজারাখবেতাদের এক বাএকাধিকজনকেইফতারকরানো। সাধ্যমত দান-সাদাকাহকরা। ৪. গরিবদেরকেপানাহারকরানো। ৫. ইয়াতীমেরমাথায়হাতবুলানো ও তাদেও সহযোগীতায়পাশেএসে দাঁড়ানো।
আশুরায়উদযাপিতকিছুঅপসাংস্কৃতিযাবর্জনকরাখুবইজরুরী ঃ
যেমনআশুরাউপলক্ষে চোখেসুরমালাগানো, রাত্রে গোসলকরা, মেহেদি লাগানো, ডাল-খিচুড়িরান্নাকরা, আনন্দ উৎসবসহবিভিন্নঅনুষ্ঠানাদিরআয়োজনকরামাকরুহ। বিশেষকরেহযরতইমামহাসান-হোসাইন রা. এরনামে যেভাবেবুকচাপড়ানো, রক্তাক্ত করা, তাজিয়ামিছিলকরাইত্যাদি এহেনকর্মকান্ডইসলামে কোনগ্রহণযোগ্যতা নেই। এটি চরম গোড়ামি ও বিদয়াতছাড়াআরকিছুইনয়। মহানআল্লাহআমাদেরসঠিকভাবেএদিনউদযাপনকরার তৈফিক দানকরুনআমিন
আশুরারশিক্ষাঃ
১০ মুহররমমুসলামানদেরনিকট খুব তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহদিনহিসেবেপালিতহলেও ৬১ হিজরীর ১০ মুহররম ফোরাতনদীরতীরেকারবালারপ্রান্তরেরাহমাতুল্লিলআলামীনমুহাম্মাদ (সঃ) এর দৌহিত্রইমাম হোসাইন (রাঃ) এবংতারস্বপরিবার দামেস্কেরঅধিপতিইয়াজিদেরঅসভ্য সেনাবাহিনীরহাতেনির্মমভাবেশাহাদাতবরণকরলেএদিন গোটামুসলিম উম্মাহরঘরেঘরেঐতিহাসিক“কারবালাদিবস”হিসেবেওউদযাপিতহয়েআসছে। বাতিলেরকাছেমাথানতনাকরেইসলামিঝন্ডাউঁচুরাখতে ও নীতি, আদর্শ, সত্য, মানবতা ও মুক্তির জন্য নিঃসংকোচচিত্তে এ ভাবেপ্রাণদানেরঘটনা গোটাবিশ্ব জাহানেবিরল।কপটচারী, শৈরাচারী, জুলুমবাজ ও অস্ত্রে-শস্ত্রে সুসজ্জিত ফৌজেরঅসত্যেরমুকাবিলায়,ঈমানিজজবা ও অকুতোভয়মনেহযরত হোসাইন (রাঃ) যে প্রতিরোধেরপ্রাচীরগড়েতুলেছিলেনবিশ্বেতাকালজয়ীইতিহাসহয়ে স্বর্ণরোক্ষরেলিখাআছে। যুগযুগধরেএটিমানবতার মুক্তিরজন্য, ন্যায়েরপক্ষেঅন্যায়েরবিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধগড়েতুলার খোরাকজোগাবেএবংন্যায়েরঝান্ডাবাহীদেরঅতুলনীয়শিক্ষারবিষয়হয়েথাকবে। কবিবলেছেন‘‘ইসলামজিন্দা হোতাহায়কারবালা কে বাদ’’ অর্থাৎকারবালাযুদ্ধের পর ইসলামসত্যিকার অর্থে পূনর্জীবিতহল।