বুধবার, ০৩ মার্চ ২০২১, ১১:০১ অপরাহ্ন
জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে ২২ সেপ্টেম্বর রবিবার থেকে। আর ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও চটি বই বিক্রির তোড়জোড় শুরু করেছে কয়েকটি চক্র।
গতকাল রবিবার এবং গতকাল সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের (ডেইরি গেট) ও তার আশেপাশে অস্থায়ী বইয়ের দোকান বসেছে। এসব দোকানে বিভিন্ন ভর্তি গাইডের পাশাপাশি ৫/১০ পৃষ্ঠার চটি বই নিয়ে বসেছেন অনেকেই। এদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এসব বইয়ের উপরে লেখা আছে ১০০% কমনের নিশ্চয়তা সহ নানান প্রলোভন। দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য এসব লেখা থাকলেও এসব বই প্রস্তুত করা হয় মূলত বিভিন্ন ভর্তি গাইড থেকে হুবহু কপি করা গুটিকয়েক প্রশ্ন দিয়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪৮তম আবর্তনের এক শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে ১৪ পৃষ্ঠার একটি সিট বই দেখিয়ে বলেন, ‘গতবার ভর্তি পরীক্ষার আগের দিন ৭০ টাকা দিয়ে এই সিট বইটি কিনেছিলাম। অনেকেই কিনছিলো দেখে আমি ভেবেছিলাম হয়তো এ বই থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতে পারে। এ বই থেকে পরীক্ষায় ১/২ টি প্রশ্ন এসেছে তবে সেগুলো পূর্বে পড়া ছিলো। ভর্তিচ্ছুদের এসব বই না কেনা উচিৎ।’
জানা যায়, মাত্র কয়েক টাকা খরচ করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চটি বই বিক্রি করেন এই চক্রের সদস্যরা। এসব বই প্রস্তুতে ১০-২০ টাকা ব্যয় হলেও ভর্তিচ্ছুদের কাছে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করা হয় । চাহিদা বেড়ে গেলে টাকার অঙ্ক আরও বেড়ে যায়।আকর্ষনীয় উপস্থাপনা ও প্রলোভনে পড়ে ভর্তিচ্ছুরাও শেষ সময়ের প্রস্তুতি হিসেবে এসব সিট বইকে নির্ভরযোগ্য ভেবে কিনতে আগ্রহী হন। তবে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে চটি বই কিনে কোন লাভ হয়নি বলে জানান ভূক্তভোগীরা।
দিনাজপুর থেকে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা আশরাফুল আলম এক দোকান থেকে এসব শীট কিনতে ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন যারা শীট বিক্রি করতেছে তারা এখানকার স্টুডেন্ট তাছাড়া তারা বলছে এটা পড়লে পরীক্ষায় আসা অধিকাংশ প্রশ্নই এখান থেকে আসবে তাই এই শীট বইটা ৮০ টাকায় কিনলাম।
এদিকে এসব সিট বই বিক্রি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয়েছে জোর আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটাকে অনেকেই আধুনিক ভিক্ষাবৃত্তি বলেও জানান। এ বছর এসব বই বিক্রি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন অনেকে।
শীট বিক্রি করে এমন কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তিচ্ছুরা যাতে ভর্তি পরীক্ষার সময় স্বল্প সময়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিতে পারেন সেজন্য ভর্তি পরীক্ষার আগে থেকে অনেকে বই তৈরি করেন। ভর্তিচ্ছুদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে এটা করেন তারা। তবে এক শ্রেণীর শিক্ষার্থী ভর্তিচ্ছুদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসা করে। এতে ক্যাম্পাসের সুনাম নষ্ট হয়।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষার সময় যেসব দোকানে এসব চটি বই বিক্রি করা হয় সেসব দোকান বসানোর অনুমোদনই নেয়া হয় না বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় এস্টেটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন।
তিনি জানান, ‘এসব চটি বই ক্যাম্পাস নোংরা করে। এসব বই বিক্রির জন্য কেউ দোকান বসানোর অনুমতিও নেয় না। তবে কেউ যদি দোকান বসানোর অনুমতি নেয় তবু আমরা ক্যাম্পাস নোংরা করে এমন কিছু বিক্রির অনুমতি দেই না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার সময় ডেইরি গেটের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবৈধ দোকান বসে। প্রশাসনের নিষেধ উপেক্ষা করে অবৈধভাবে দোকান বসান তারা। তবে এসব দোকানের সাথে ছাত্ররা সংশ্লিষ্ট থাকায় দোকান উঠিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়না।’
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় আমাদের অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। এজন্য আমাদের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সবসময় এই বিষয়টি দেখভাল করতে পারেন না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এগুলোর সাথে জড়িত থাকায় সহজে এসকল বই বিক্রি বন্ধ করাও সম্ভব হয়না। তারপরও এসব বই বিক্রি বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ, গত কয়েক বছর যাবত এই রমরমা শীট, নোট বানিজ্য চলছে। প্রশাসন প্রতিবারই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে আসলেও এসব রমরমা বানিজ্য বন্ধে প্রকৃতপক্ষে কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না।