সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন
বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি ঃ নওগাঁর বদলগাছীতে চলতি আমন মৌসুমে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মধ্যসত্ত¡ভোগীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে খাদ্যগুদামে ধানক্রয়। খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধানক্রয় করা হচ্ছে। ফলে কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে সরকারের মহতী উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। এতে করে ধান উৎপাদনকারী প্রকৃত কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকারের দেওয়া প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।
বদলগাছী খাদ্যগুদামে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের খলসী ব্লকের কৃষক খোরশেদ আলম চিৎকার-চেচাঁমেচি করছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বালুভরা ইউনিয়নের লটারীতে ৩২নম্বর সিরিয়ালে আমি নির্বাচিত হয়েছি। পরপর ৪বার ধান নিয়ে এসেছি। কিন্তু প্রতিবার বিভিন্ন অযুহাতে আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেষবারে খাদ্যগুদামের সহকারী খাদ্য পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আমাকে বলেন আমার সিরিয়ালে অন্য কেউ ধান দিয়ে গেছে। এছাড়াও দেখা যায়, গুদাম চত্ত¡রে এবং অফিসের ভিতরে কর্মকর্তাদের সাথে বসে রয়েছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা এবং এটা নিত্য দিনের চিত্র। উপজেলা খাদ্যগুদামের সীলমোহর যুক্ত বস্তায় ধানসহ ভ্যানযোগে সরাসরি খাদ্যগুদামে ডুকছে। এ ধানগুলি কার কৃষক না ব্যবসায়ীর? জনমনে এমন প্রশ্নের গুনজন চলছে।
খোরশেদ আলমের জায়গায় অন্যের ধান কেন নিলেন জানতে চাইলে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ করিম বলেন, খোরশেদ আলমের নামে ভুল করে টিক পড়েছে। তার জায়গায় অন্য কারো ধান নেওয়া হয়নি। কিন্তু রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে রাজি হননি। খোরশেদ আলমসহ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, তারা ধান নিয়ে এলে কর্মকর্তারা ধানের টেম্পারেচার নেই, কোয়ালিটি খারাপ ইত্যাদি কথা বলে বারবার ফিরিয়ে দেয়। তাই বাধ্য হয়ে নামমাত্র টাকা দিয়ে কার্ড বিক্রি করে দিই। কিন্তু মধ্যসত্ত¡ভোগীরা বাজার থেকে ধান কিনে নিয়ে এলে সাথে সাথে নিয়ে নেয়। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৪১৭ মেট্রিক টন। উদ্বোধন করা হয়েছে ২০ নভেম্বর। চলবে আগামী ২৮ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত। উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন থেকে লটারীর মাধ্যমে ১৪১৭জন কৃষককে নির্বাচিত করা হয়। প্রতি কৃষক ১ মেট্রিকটন করে ধান দিতে পারবেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ধান ক্রয়ে বদলগাছী খাদ্যগুদামের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় স্থানীয় ১০-১৫ জন মধ্যস্বত্ত¡ভোগীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা লটারীতে নির্বাচিত কৃষকদের কৌশলে ম্যানেজ করে তাদের কৃষিকার্ড সংগ্রহ করছে। কমমূল্যে ধান কিনে ওই কৃষিকার্ড ব্যবহার করে সরকারি খাদ্যগুদামে প্রতিমণ ধান ১হাজার ৪০টাকায় বিক্রি করছে। কার্ডধারী সহজ সরল কৃষকদের সিন্ডিকেট সদস্যরা স্বান্তনাস্বরূপ দিচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। কৃষকদের কার্ড ব্যবহার করা হলেও ধান দিচ্ছে মধ্যস্বত্ত¡ভোগীরা। কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে প্রমাণ করার জন্য খাদ্যগুদাম কর্তারা কৌশলে মোবাইলে কৃষিকার্ডসহ কৃষকের ছবি তুলে রাখছেন। আর মধ্যস্বত্ত¡ভোগীরা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করছে। কর্মকর্তারা মধ্যস্বত্ত¡ভোগীদের ব্যবহার করছেন অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে। এতে একদিকে যেমন মধ্যস্বত্ত¡ভোগীরা লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে পকেট ভারী হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক রিয়াজুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম জানান, গুদামে ধান দেওয়া অনেক ঝামেলা। ধান নিয়ে গেলে যদি ফিরে দেয় তাহলে ভ্যান ভাড়ায় অনেক টাকা চলে যায়। তাই বদলগাছীর ব্যবসায়ী সামসুল আলমের কাছে আব্বার কার্ডটি বিক্রি করে দিয়েছি। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বদলগাছী খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ করিম বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। এখানে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান নেওয়া হচ্ছে। এখানে কোন সিন্ডিকেট নেই।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাজের হাসান এর কাছে অভিযোগের বিষয়ে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি পত্রিকায় খবর প্রকাশ না করে তার অফিসে চা খাওয়ার দাওয়াত দেন এবং সরাসরি কথা বলতে চান।
উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাঃ আবু তাহির বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহে কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।