শুক্রবার, ০৫ মার্চ ২০২১, ০৭:৪২ অপরাহ্ন
চলমান সহিংসতায় আসামে এখন পর্যন্ত ছয়জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আটক করা হয়েছে অন্তত ৮৫ জনকে। বিক্ষোভ সহিংসতায় বিধ্বস্ত আসাম, পশ্চিমবঙ্গের কিছু অঞ্চলে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং আসামে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
রোববার রাজ্যটির রাজধানী গুয়াহাটিতে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। এছাড়া আইন বাতিলের দাবিতে অনশনে বসে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের জেরে বাতিল করা হয় গুয়াহাটি বিমানবন্দরের বেশ কিছু ফ্লাইট। তবে আসামের সব নাগরিকের অধিকার নিশ্চিতের দাবি করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল।
গত বুধবার ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়। পরদিন রাষ্ট্রপতি এই বিলে স্বাক্ষর করলে সেটি আইনে পরিণত হয়।
আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যেসব অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে গেছেন তারা দেশটির নাগরিকত্ব পাবেন। তবে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে আইনে কিছুই বলা হয়নি।
এদিকে বিতর্কিত এই আইনের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গেও তৃতীয়দিনের মতো বিক্ষোভ করছে রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ। এই আইনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দেগে রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিক্ষোভ-সহিংসতা অব্যাহত থাকায় রোববার পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি জেলায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
তারপরও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভকারীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। ট্রেন, বাস, ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু জেলায় দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে ট্রেন সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
নতুন আইনে এই রাজ্যে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া অনেক শরণার্থী নাগরিকত্ব পাবেন এমন আশঙ্কায় সেখানে বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ। রোববার আবারও বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে না।
ঝাড়খণ্ডে এক সমাবেশে অংশ নিয়ে অমিত শাহ বলেন, আমাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলের ভাই-বোনদের সংস্কৃতি, ভাষা, সামাজিক পরিচয় এবং রাজনৈতিক অধিকার আগের মতোই অক্ষুণ্ন থাকবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার দেশটিতে বসবাসরত ২০ কোটি মুসলিমকে এক ঘরে করতে নতুন এই আইনের বাস্তবায়ন করছে বলে মুসলিম মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা দাবি করেছেন। তবে নরেন্দ্র মোদি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। দেশটির একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এবং একটি মুসলিম রাজনৈতিক দল নতুন এই নাগরিক আইনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। তাদের যুক্তি, নতুন নাগরিকত্ব আইন সংবিধান এবং ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যের বিপরীত।
রাজ্যসভায় এ আইন পাসে সমর্থন দিয়েছিল আসামে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজনৈতিক জোটসঙ্গী আসাম গণপরিষদ। তবে রোববার তারা সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে এই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত হয়েছে।