শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন
গাজীপুরে শ্রীপুরে প্রবাসী স্বামীর পাঠানো টাকা লুঠ করতে গিয়ে ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক স্মৃতি আক্তার ফাতেমা ও তার তিন সন্তানকে গলা কেটে হত্যা ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে গ্রেফতার কিশোর পারভেজ ও তার বাবা কাজিমুদ্দিন। গত বুধবার রাতে জৈনাবাজার আবদার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) কাছে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন তারা।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) অনলাইনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
গত বুধবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামে মালয়েশিয়া প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ও তার তিন সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
তারা হলেন- ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪৫), তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওরিন হাওয়া (১২) ও বাক প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিলের (৮)। হত্যার আগে মা ও দুই মেয়েকে ধর্ষণও করে দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় আজ ৫ জনকে আটক করে র্যাব। এরা হলো- কাজিমদ্দিন (৫০), হানিফ (৩২) বশির (২৬) হেলাল (৩০) ও এলাহি মিয়া (৩৫)।
জড়িতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ‘গ্রেফতাররা সবাই মাদকাসক্ত। তারা চুরি, জুয়া ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত। পেশায় এরা কেউ রিকশা চালক, কেউ ছোটখাটো কাজ করে। এরা সবাই ভিকটিমের বাসার কাছে আড্ডা দিতো। ঘটনার কিছুদিন আগে তারা জানতে পারে ভিকটিম ফাতেমার স্বামী কাজল মালয়েশিয়া থেকে ২০/৩০ লাখ টাকা পাঠিয়েছে হুন্ডির মাধ্যমে। তারা সবাই সেই টাকা লুট করার পরিকল্পনা করে ‘
তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৩ এপ্রিল তারা ফাতেমার বাসার পেছনে জড়ো হয়। পারভেজ প্রথমে ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। অন্যদিকে হানিফ ছাদ দিয়ে প্রবেশ করে চিলেকোঠায়। এরপর তারা বাসার গেট খুলে দিলে পারভেজের বাবাসহ অন্যরা বাসায় ঢুকে পড়ে।
‘হানিফ ও কাজিমুদ্দিন প্রথমে ফাতেমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তার কাছ থেকে হুন্ডির পাঠানো ২০/৩০ লাখ টাকা চায়। এরকম কোনো টাকা পাঠানো হয়নি বলে জানান ফাতেমা এবং বাসায় থাকা ৩০ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেন। এসময় তারা দু’জন ফাতেমাকে ধর্ষণ ও হত্যা করে।’
‘এদিকে অন্য ঘরেও চলে লুটপাট ও ধর্ষণ। পারভেজ ও তার বাবা কাজিমুদ্দিনসহ সবাই বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬) ও ছোট মেয়ে হাওরিনকে (১৩) ধর্ষণ ও হত্যায় অংশ নেয়। তবে প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিলকে হত্যা করা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তারা। এক গ্রুপ তাকে হত্যা করতে না চাইলেও অন্য অংশ সাক্ষী না রাখার পক্ষে মত দেয়। পরে বাকপ্রতিবন্ধী শিশুটিকেও হত্যা করে।’
এ ঘটনায় আরও ৪/৫ জন জড়িত থাকতে পারে বলে জানিয়ে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদেরকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’ তবে তদন্তের স্বার্থে তিনি তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
র্যাব কর্মকর্তা সারওয়ার-বিন-কাশেম আরও জানান, এর আগে পিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার পারভেজ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সেখানে সে এ ঘটনায় একাই জড়িত বলে স্বীকার করে।
এর পেছনে কারণ উল্লেখ করে সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ‘এরা অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির। পারভেজ এর আগেও এক শিশুকে ধর্ষণের পর খুন করে। ওই ঘটনায় সে অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে জামিনে ছাড়া পায়। এবারো সে একই ধরনের ঘটনায় জড়ায় তার বাবাসহ অন্যদের নিয়ে। সে ভাবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বলে এবারো সে ছাড়া পাবে। হয়তো এমনটা চিন্তা করেই বাবাসহ অন্যদের বাঁচাতে সে নিজের কাঁধে সব দোষ নেয়।’
জানা গেছে, ২০১৮ সালে ৭ বছরের এক শিশু নিলীমাকে ধর্ষণের পর গলা টিপে হত্যার মামলায়ও পারভেজ চার্জশিটভুক্ত আসামি। মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে এবং শ্বাসরোধে শিশু নিলীমাকে হত্যা করেছিল পারভেজ। ওই মামলায় দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর কিছুদিন আগেই জামিনে মুক্তি পায় সে।
প্রায় দেড় যুক্ত আগে গাজীপুরের শ্রীপুরে আবদার গ্রামে ওই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন ময়মনসিংহের পাগলা থানাথীন লংগাইর ইউনিয়নের গোলবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে রেজোয়ান হোসেন কাজল। তিনি চাকরির সুবাদে মালয়েশিয়ায় থাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তান ওই বাড়িতে থাকতো। মালয়েশিয়ার আগে প্রায় ১৬ বছর ইন্দোনেশিয়ায় চাকরি করেন কাজল। ওই সময়ই ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক স্মৃতি ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে তার পরিচয়। প্রায় ২০ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন কাজল।