মঙ্গলবার, ০২ মার্চ ২০২১, ০৮:২৭ অপরাহ্ন
মোঃ নাসির উদ্দিন, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: ভূঞাপুর গণহত্যা দিবস। ৭১-এর ১৭ নভেম্বর উপজেলার ছাব্বিশা গ্রামে পাকহানাদাররা নারকিয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে একই পরিবারের ৭ জনসহ কেঁড়ে নেয় ৩৬টি তাঁজাপ্রাণ। জ্বালিয়ে দেয় প্রায় সাড়ে ৩’শ ঘর-বাড়ি। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেড়–লেও আজও স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎস্বর্গকারী নক্ষত্রের কবরগুলো পড়ে আছে অযতœ-অবহেলায়। শহীদের স্বজনরা আশায় বুক বেঁধে আছেন শহীদ পরিবারের মর্যাদা পাওয়ার জন্য। অনেকে আবার তার আগেই চির বিদায় নিয়েছেন।
এক পরিবারে বাবা, মা, ভাই, বোন, ভাগ্নি, চাচাসহ ৭ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকহানাদাররা। সেদিনের স্বজন হারানোর স্মৃতি নিয়ে আজও কেঁদে বেড়ায় শহীদ ওমর আলীর ছেলে ছানোয়ার। তাঁর চোখের সামনে পাকহানাদাররা গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে পরিবারের ৭ জনকে। রক্তমাখা লাশের আড়ালে লুকিয়ে থেকে বেঁচে গিয়েছিল ছানোয়ার ও তাঁর ছোট ভাই বেলাল। সর্বস্ব হারিয়ে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নিদারুন কষ্টে জীবন যাপন করতে হয়েছে তাঁদের। ১২ বছর বয়সে ছানোয়ার ও তাঁর ছোট ভাই আশ্রয় নেয় এতিম খানায়। কিন্তু সেখানেও অন্নের অভাবে ঠাঁই জুটেনি। দারে দারে পেটভাতে কাজ করে জীবন ধারণ করেন তাঁরা। কষ্টই তাঁর অবলম্ভন। ৫৯ বছর বয়সেও ছানোয়ার রাজ মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালায়। আক্ষেপ করে তিনি জানান, আমাদেরকে শহীদ পরিবার হিসেবে মর্যাদাতো দুরের কথা আমাদের ছেলে মেয়ের স্কুলের বেতনের টাকাও কম নেয় না। শুধু ছানোয়ার নয় ছাব্বিশা’র সকল শহীদ পরিবারের বক্তব্যই এমন।
কথা হয় একই পরিবারের শহীদ হওয়া ৩ ভাই শহীদ ইউসুফ উদ্দিন, শহীদ মোতালেব হোসেন ও শহীদ শফিকুল ইসলামের ভাই নূরুল ইসলামের সাথে, তিনি বলেন, ‘আমাদের বাবা ও মাকে বেঁধে রেখে চোখের সামনে ৩ ভাই ও ১ কাজের লোককে গুলি করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে হানাদাররা। তার বিনিময়ে শহীদ পরিবার হিসেবে মর্যাদাটুকু আমরা পাইনি। সাহায্য সহযোগিতা তো দুরের কথা কেউ শহীদদের কবর জিয়ারতের জন্যও আসে না।’ তিনি আরো জানান, তাঁদের সন্তানদের চরম দুর্দিন। শহীদদের কবরগুলো নিশ্বচিহ্ন ছিল। তাদের নিজের টাকায় তা কোন রকমে চিহ্ন করে রেখেছে।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেড়িয়ে গেছে। বছর ঘুড়ে আসে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, গণহত্যা দিবস কিন্তু হয় না শহীদ পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন। কেউ খোঁজ রাখে না কেমন আছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। বিজয়ের মাস এলেই এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কথা মনে করে কেঁদে উঠে স্বজনহারা মানুষেরা। পরিবারগুলোতে নেমে আসে শোকের ছাঁয়া। ভূঞাপুর তথা টাঙ্গাইলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটি অভিস্মরণীয় ঘটনা।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন তাদের পরিবারগুলোকে শহীদ পরিবার হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মন্ত্রী-এমপিদের নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিলেও কোন স্বীকৃতি মিলেনি। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষার্থে শহীদদের কবরগুলো সংরক্ষণ ও অবহেলিত দরিদ্র্য অসহায় শহীদ পরিবারগুলোর রাষ্ট্রিয়ভাবে শহীদ পরিবারের মর্যাদা দিয়ে তালিকা ভুক্ত করে রাখার জন্য।
কথা হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গভেষক অধ্যাপক শফি উদ্দিন তালুকদারের সাথে, তিনি জানান, ছাব্বিশাসহ দেশের সকল শহীদ পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রিয়ভাবে তালিকা ভুক্ত করে শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া।