বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: এক যুগ ধরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সাঁওতাল অধ্যুষিত জয়পুর ও মাদারপুর গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থীকে বিনাবেতনে পাঠদান করাচ্ছেন কয়েকজন শিক্ষক। এসব শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে মাদারপুর গ্রামেরই শ্যামল মঙ্গল রমেশ স্মৃতি বিদ্যা নিকেতনে। হাজারো সংগ্রামের পরও বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে নিয়মিতই চলছে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কার্যক্রম। নিজস্ব ভাষার বই স্বল্পতা ও প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা কম থাকায় হারিয়ে যেতে বসেছে তাদের মাতৃভাষা। সরকারের কাছে একটি আদিবাসী সরকারি বিদ্যালয়ের দাবি করেছেন সাঁওতালরা। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে গ্রামবাসীর উদ্যোগে মাদারপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় জয়পুর মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরে ১৯৭৪ সালে ধর্মীয় চার্চ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নর্দার্ন এভানজেলিক্যাল লুথেরান চার্চ (বিএনইএলসি) মিশন বিদ্যালয়টির দায়িত্ব নেয় ও পরের বছর দুইকক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা ভবন নির্মাণ করে দেয়। ২০০৮ সালের দিকে বিএনইএলসি আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিলে ওই বছরই আবারও গ্রামবাসীর উদ্যোগে জয়পুর গ্রামের গির্জায় শিশুদের পাঠদান শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গ্রামের পাশেই সাঁওতাল-বাঙালিরা সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের জমিতে বসবাস শুরু করলে সেখানে একটি ঘরে পাঠদান চলে। ওই বছরেরই ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে অবস্থিত রংপুর চিনিকলের মালিকানাধীন সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের জমি থেকে পুলিশ ও চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতাল-বাঙালিদের উচ্ছেদ করে দেওয়ার ঘটনায় আগুনে পুড়ে যায় পাঠদানের ঘরসহ শিক্ষা উপকরণ। এরপর আবারও সাঁওতাল-বাঙালিরা তাদের গ্রামে ফিরে যান। এসময় পাঠদান বন্ধ থাকে শিক্ষার্থীদের। টাঙ্গাইলের গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুস ছাত্তার খান বিষয়টি জানতে পেরে তার সহযোগিতার হাত বারিয়ে দিলে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে ২০১৭ সালের ২৭ জানুয়ারি শ্যামল মঙ্গল রমেশ স্মৃতি বিদ্যা নিকেতন নামে একটি বিদ্যালয় উদ্বোধন করা হয়। ফলে আবারও সাঁওতাল-বাঙালি ছেলে-মেয়েদের পাঠদান শুরু হয়। এই বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রিসিলা মুরমু বলেন মাতৃভাষা রক্ষার জন্য শিক্ষকগণ বিনাবেতনে সকাল সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে ১১টা ও দুপুর ১২টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন সাঁওতাল শিশুদের অবহেলার চোখে দেখা হয়। তাদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। রাষ্ট্রীয়ভাবেই সাঁওতালদের এই বিদ্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ বা একটি আদিবাসী সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান তিনি।