রবিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২১, ০৭:০৭ অপরাহ্ন
(তরুণ কবি ও তরুণ লেখক)
মহান আল্লাহ তায়া’লা মহাবিশ্বে আঠারো হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলো মানুষ এবং জ্বিন জাতিকে। আবার এই দুই সৃষ্টির মধ্যে জ্ঞান, বুদ্ধি, জানা-শোনায় সবকিছুতেই শ্রেষ্ঠ বা ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ হলো মানুষ। আর মহাবিশ্বের অনন্য সকল সৃষ্টিকেই একমাত্র মানবজাতির উপকারের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আল্লাহ তায়া’লা মানুষকে তাঁর নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সৃষ্টি করেছেন। এমনি এমনি সৃষ্টি করে পৃথিবীতে ছেড়ে দেন নি। “খাবো-দাবো-ফুর্তি করবো, মরার সময় কানে ধরবো” এর জন্য আল্লাহ তায়া’লা মানুষকে সৃষ্টি করেন নি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা পবিত্র কোরআনের সূরা আয-যারিয়াত:৫৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন….
وَ مَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَ الْاِنْسَ اِلَّا لِیَعْبُدُوْنِ
অর্থাৎ:- আমি জ্বিন ও মানুষকে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি, কেবল এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে।
এখানে জ্বিন এবং মানুষ উদ্দেশ্য করে বলা হয়ে এজন্য যে, মহান আল্লাহ তায়া’লার সৃষ্ট সতেরো হাজার নয়শত আটানব্বইটি মাখলুকাত আছে তারা কেউ স্বাধীন নয়, তারা সবাই সৃষ্টিগত ভাবেই পরাধীন। তাদের নেই বাচবিচার, নেই আচার-অনাচার, নেই বিবেক বুদ্ধি, স্রষ্টা তাদেরকে যেভাবেই চালায় তারাও ঠিক সে ভাবেই চলে। তারা সর্বদা আল্লাহর আনুগত্যে মত্ত, আল্লাহ দাসত্বে মত্ত। কিন্তু মানুষ ও জ্বিন এই দুই জাতিকে আল্লাহ তায়া’লা স্বাধীন করেছেন। বিবেক দিয়েছেন, বুদ্ধি দিয়েছেন। দুইটা পথ দিয়েছেন, ১. ফুলের পথ, ২. কাঁটার পথ। সাথে দিয়েছেন হেদায়েত বাণী।
এখন, মানুষ ও জ্বিন যদি প্রথম পথ অর্থাৎ ফুলের পথ বা জান্নাতের পথ বেছে নেয় তাহলে তাদেরকে দুনিয়ার জিন্দেগীতে তাদের স্রষ্টার কাছে অর্থাৎ মহান আল্লাহর কাছে পরাধীন হয়ে থাকতে হবে। আর যদি মানুষ ও জ্বিন কাঁটার পথ অর্থাৎ জাহান্নামের পথ বেঁছে নেয় তাহলে তারা দুনিয়ায় যতো খুশি আল্লাহ নাফরমানি কাজ করতে পারে করবে, আল্লাহ রশ্মি ছেড়ে দিয়েছেন। আর অধিকাংশ মানুষই দুনিয়াকে আপন করে নিয়ে আল্লাহ নাফরমানি কাজ করে থাকে, অথচ আল্লাহ খুব যত্ন করে সৃষ্টি করে, খলিফা হিসেবে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনের সূরা আল-বাক্বারাহ:৩০ নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা ঘোষণা করেন….
وَ اِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلٰٓئِكَةِ اِنِّیْ جَاعِلٌ فِی الْاَرْضِ خَلِیْفَةًؕ قَالُوْۤا اَتَجْعَلُ فِیْهَا مَنْ یُّفْسِدُ فِیْهَا وَ یَسْفِكُ الدِّمَآءَۚ وَ نَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَ نُقَدِّسُ لَكَؕ قَالَ اِنِّیْۤ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
অর্থাৎ:- আবার সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা- প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই।” তারা বললো, “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে এবং রক্তপাত করবে? আপনার প্রশংসা ও স্তুতিসহকারে তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি।” আল্লাহ বললেন, “আমি জানি যা তোমরা জানো না।”
আমরা অনেকেই মনে করে থাকি যে, ফেরেশতারা আল্লাহর পরিকল্পনায় আপত্তি করেছে, আসলে না, এটা ফেরেশতাদের আপত্তি ছিল না। বরং এটা ছিলো তাদের জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন বা জানতে চাওয়া, আল্লাহর কোন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করার অধিকারই ফেরেশতাদের ছিল না। ‘খলীফা’ শব্দটি থেকে তারা অবশ্যি এতটুকু বুঝতে পেরেছিল যে, পরিকল্পনায় উল্লেখিত সৃষ্টজীবকে, দুনিয়ায় কিছু ক্ষমতা-ইখতিয়ার দান করা হবে। তবে বিশ্ব-জাহানের এ বিশাল সাম্রাজ্য আল্লাহর একচ্ছত্র কর্তৃত্বের আওতাধীনে কোন স্বাধীন ক্ষমতা সম্পন্ন সৃষ্টজীব কিভাবে অবস্থান করতে পারে—একথা ফেরেশতারা বুঝতে পারছিলো না। এই সাম্রাজ্যের কোনো অংশে কাউকে যদি সামান্য কিছু স্বাধীন ক্ষমতা দান করা হয় তাহলে সেখানকার ব্যবস্থাপনা বিপর্যয়ের হাত থেকে কিভাবে রক্ষা পাবে, একথা তারা বুঝতে চাইছিলো।
ফেরেশতারা জানতে চাইলো “হে মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ! আপনার হুকুম পালন করা হচ্ছে। আপনার মহান ইচ্ছা অনুযায়ী সমস্ত বিশ্ব-জাহানকে আমরা পাক পবিত্র করে রাখছি। আর এই সাথে আপনার প্রশংসাগাওয়া ও স্তব-স্তুতি করা হচ্ছে। আমরা আপনার খাদেমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আপনার তাসবীহ পড়ছি তাহলে এখন আর কিসের অভাব থেকে যায়? একজন খলীফার প্রয়োজন দেখা দিল কেন? এর কারণ আমরা বুঝতে পারছি না।
তখন মহান ও মেহেরবান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, খলীফা নিযুক্ত করার কারণ ও প্রয়োজন আমি জানি, তোমরা তা জানতে পারবে না। তোমরা নিজেদের যে সমস্ত কাজের কথা বলছো, সেগুলো যথেষ্ট নয়। বরং এর চাইতেও বেশী আরো কিছু আমি চাই। তাই পৃথিবীতে ক্ষমতা-ইখতিয়ার সম্পন্ন একটি জীব সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
অতঃপর সূরা আল-আনয়াম ১৬৫ নং আয়াতে ঘোষণা করেছেন….
وَ هُوَ الَّذِیْ جَعَلَكُمْ خَلٰٓئِفَ الْاَرْضِ
অর্থাৎ- তিনিই মহান আল্লাহ, তোমাদেরকে দুনিয়ায় তাঁর খলিফা নিযুক্ত করেছেন।
এভাবে ফেরেশতাদের নানান প্রশ্ন সত্ত্বেও মহান আল্লাহ বিশেষ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের (মানুষকে) দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। কিন্তু কয়জনেই তাঁর দেয়া দায়িত্ব পালন করি?
যাই হোক…. আমরা উপরের আয়াতে অর্থাৎ সূরা আয-যারিয়াত:৫৬ নং আয়াতে পেলাম.. আল্লাহ তায়া’লা মানুষ সৃষ্টি করেছে একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। আর সূরা বাকারার ৩০ নং আয়াতে পেলাম… তিনি মানুষকে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি করে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। এখান থেকে দুটি বিষয় প্রতিমান যে, মানুষ সৃষ্টির আসল উদ্দেশ্য দুইটি… একটি ইবাদত অপরটি খেলাফত।