অনেকগুলো স্বপ্নের জাল বুনে একজন নারী স্বামীর সংসার শুরু করেন। বলা যায় একটি নতুন জীবনের সূচনা। বিবাহিত জীবন খুব সুখে শান্তিতে কাটবে এমনটাই কমনা থাকে সবার তবে সব আশা সবার পুর্ন হয়না। তাই বিয়ের পরও দুঃখী থেকে যায় কিছু নারী।
আপনি যদি একজন বিবাহিত নারী হয়ে থাকনে এবং আপনার বিবাহিত জীবন যদি সুখকর না হয়ে থাকে তবে আজকের এই লেখা ধরে নিন আপনাকে উদ্দেশ্য করেই।
আসলে একটা সময়ে গিয়ে আমরা জীবনে ঠিক বেঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। আমরা কি আসলেই ভালো আছি কিনা তাও বুঝিনা। আজ আমরা আলোচনা এমন কিছু লক্ষণ নিয়ে যা স্পষ্ট করে যে একজন বিবাহিত নারী সুখে নেই।
প্রথমেই বলা যাক ঘুমের কথা। উইমেনস হেলথ একরোস দ্যা ন্যাশনের ডাক্তার ট্রক্সেল একটি বিশেষ গবেষণার পর এ কথা বলেন যে, সুখী বিবাহিত নারীরা অসুখী নারীদের তুলনায় শতকরা ১০ ভাগ গভীর এবং সুখকরভাবে নিদ্রা যাপন করে থাকেন।
হতে পারে আপনার স্বামী শহরের বাইরে আছেন কিংবা আপনার আপনার সন্তানের অসুস্থ। যে কোন কারনেই হোক না কেন একজন বিবাহিত নারী সেই মুহূর্তে যথেষ্ট অসুখী যখন তার ঘুমের জায়গা টেনশন দখল করে নেয়।
একজন অসুখী বিবাহিত নারীর দ্বিতীয় লক্ষণ হচ্ছে ক্লান্তি। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালেফোর্নিয়ার একটি গবেষণায় এ কথা বলা হয় একজন সুখী বিবাহিত নারী সংসারের যে কোন ঝামেলা সামলে উঠেও ক্লান্ত হন না, বরং বেশ ভালোবেসেই কাজগুলো করেন। যেখানে একজন অসুখী নারী সাংসারিক জীবন নিয়ে যথেষ্ট ক্লান্তিভাব পোষণ করেন এবং নিজেকে পরিবর্তনও করতে নারাজ থাকেন।
একজন বিবাহিত নারীর আবেগ, চাওয়া পাওয়া থাকে তার স্বামীকে ঘিরে। সেই স্বামী যখন অবহেলা করেন কিংবা স্ত্রীকে বুঝতে চেষ্টা করেন না তখন সে নারী হয়ে উঠেন একজন অসুখী নারী। বর্তমান সমাজে দেখা যায় ঠিক এ কারনেই অনেক নারী বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং নিজের ইচ্ছে বা চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে থাকেন।
যেকোন সম্পর্কেই দূরত্ব জিনিসটা ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায়। না, এই দূরত্ব কোন বাহ্যিক দূরত্ব নয়। মনের দূরত্বের কথা বলছিলাম। অনেক বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রেই দেখা যায় চার দেয়ালের মাঝে দিনের পর দিন থাকার পরও তারা একে অপরের চেয়ে বেশ দূরে।
নিশ্চয়ই এটি একজন অসুখী বিবাহিত নারীর খুব বড় একটি লক্ষণ। দূরত্বের কারন স্বামী হতে পারে আবার স্ত্রীও হতে পারে। হয়ত স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি সম্মান হারিয়ে ফেলে কিংবা স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।
বিয়ে একটি বড় ধরণের সামাজিক সম্পর্ক। আর বিয়ে পরবর্তী সময়ে সুখী থাকতে চাওয়াটা যে কোন নারীরই কাম্য। তাই, উপরের লক্ষণ গুলোর একটিও যদি আপনার মনের জানালায় উঁকি দেয় আজই আপনার স্বামীর সাথে খোলাখুলি আলোচনা করে সব ঠিক করে নিন আর সুখী বিবাহিত জীবনযাপন করুন।
জ্বর হলেই প্যারাসিটামল যে ভয়ংকর ক্ষতির কারন
মাথা ব্যথা আর জ্বর। সারা বছরের সাধারণ অসুখবিসুখের মধ্যে অন্যতম। এ দিকে আমরাও গা গরম হতে না হতেই টপাটপ জ্বরের ওষুধ চালান করছি পেটে। কখনও ভাবছেন, প্যারাসিটামলের সঙ্গে ব্যথার ওষুধ খেলে জ্বর ব্যাটা খুব জব্দ হবে।
এর থেকে কিন্তু হিতে বিপরীত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অল্পস্বল্প জ্বরে হলে ওষুধ খাওয়ার কোনও দরকারই নেই। আবার অন্য দিকে ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক রূপ নিতে পারে অ্যাসপিরিন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খেলে, সাবধান করলেন চিকিৎসক রথীন চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে কথা বললেন সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কখনও মেঘ কখনও রোদ। এমন আবহাওয়ায় অসুখবিসুখের প্রকোপ বাড়ে। কেননা, ভ্যাপসা গরম আর রাতের ঠান্ডা মশা ও জীবাণুদের বাড়বাড়ন্তের জন্য একেবারে আদর্শ আবহাওয়া।
সঙ্গে আছে ডেঙ্গি আর ম্যালেরিয়ার জীবাণুরাও। তাই শিশু থেকে বয়স্ক, ডায়াবিটিক— যাঁদেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে কম, তাঁদের জ্বর, সর্দি, হাঁচির ঝুঁকি বাড়ে।
ব্যস্ত জীবনে ছুটিছাটার অবকাশ কম। তাই অনেকেই শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে না বাড়তেই জ্বরের ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি না ছাড়ালে জ্বরের ওষুধ না খাওয়াই ভাল।
তবে যে সব শিশুর তড়কা বা কনভালশন হয় তাদের শরীরের তাপমাত্রা একটু বাড়লেই হলেই ওষুধ দিতে হতে পারে। আসলে সাধারণ ভাইরাল ফিভার নিজে থেকেই সেরে যাওয়ার কথা। প্রয়োজন কেবল বিশ্রাম আর পর্যাপ্ত জলীয় খাবার।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রকাশ জ্বর
জ্বর আসলে কিন্তু নিজে কোনও অসুখ নয়, উপসর্গ। শরীরে কোনও জীবাণু প্রবেশ করলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জীবাণুদের বার করে দেওয়ার চেষ্টা করে। আর এই কারনেই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখনকার আবহাওয়ায় জ্বরের প্রবণতা বাড়ে। ‘এক্সট্রিম এজ গ্রুপ’ অর্থাৎ শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে জ্বরের ঝুঁকি বেশি।
এ ছাড়া অন্যান্য ক্রনিক অসুখ যেমন ডায়বিটিস, ক্রনিক কিডনির অসুখ, অ্যানিমিয়া-সহ নানা রোগ আছে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল বলে জ্বরের ঝুঁকি বেশি। রোজকার জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে স্বাস্থ্যকর উপায়ে জীবন চালালে ইমিউনিটি সিস্টেমকে জোরদার করা যায়। তাহলেই ঘন ঘন জ্বরজারির ঝুঁকি কমবে।
জ্বর হলেও ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে
আমাদের ধারণা ডায়রিয়া হলে ওআরএস দিতে হয় ডিহাইড্রেশনের জন্যে। কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা বাড়লেও শরীরে পানির ঘাটতি দেখা যায়। তাই জ্বরে লিকুইড ডায়েটের উপর জোর দিতে হবে। বেশি পানি খেলে অনেক সময় বমি পায়, তাই অল্প অল্প করে বারে বারে জল দিতে হবে।
একই সঙ্গে স্যুপ, ফলের রস, সরবত, দইয়ের ঘোল বা গরম দুধ, ডাল এই ধরণের খাবার খেলে আর ডিহাইড্রেশনের ভয় থাকে না। প্রসঙ্গত কনকনে ঠান্ডা খাবার না খেলেই হল, দই বা কলা খেলে ঠান্ডা লেগে জ্বর বাড়ে না। কাজেই এই ভুল ধারণা ভাঙুন।
জ্বর এলেই ওষুধ খেয়ে স্কুল বা অফিসে যাবেন না
আজকাল সকলেই ব্যস্ত। তাই অসুখবিসুখ নিয়েও কাজ করে যেতে হয়। জ্বর হলেও মায়েরা বাচ্চাদের ওষুধ খাইয়ে স্কুলে পাঠান। এমন অভ্যাস অত্যন্ত ক্ষতিকর।
জেনে রাখুন ইনফ্লুয়েঞ্জার সব চেয়ে বড় ওষুধ বিশ্রাম আর জলীয় খাবার। তাই দু’-এক দিন বাড়িতে বিশ্রাম নিলে ভাল হয়। তাপমাত্রা অল্প বাড়ুক অথবা অত্যধিক— সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে মাথা ব্যথা-সহ শরীর জুড়ে ব্যথার প্রবণতা থাকে।
সাধারণ জ্বর হলে গা হাত পা ব্যথা কমাতে অনেকেই আইব্রুফেন বা অ্যাসপিরিন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খান। কিন্তু প্রত্যেক বছর এই সময় ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়।
এমন সময় এই ধরনের ওষুধ ভুলেও খাবেন না। ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার হলে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। এই ধরণের ওষুধ থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে।
অজানা জ্বর
ইদানীং প্রায়ই অজানা জ্বরের কথা শোনা যাচ্ছে। তার থেকে রোগীর অবস্থাও খারাপ হয়ে যেতে পারে। রোগ নির্ধারনের প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। ব্যাকটিরিওলজি বা মাইক্রোবায়োলজির সাহায্যে জ্বরের জীবাণু চেনা খুব কঠিন নয়।
নির্দিষ্ট জীবাণুকে চিহ্নিত করতে কিছুটা সময় লাগলেও ভাইরাস অথবা ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়াকে চেনা খুব অসুবিধে নয়। ডেঙ্গি-সহ অন্যান্য ভাইরাস প্রায়ই নিজেদের চরিত্র বদলে ফেলে, তখনই জীবাণুদের চিনতে সময় লাগে। তবে যে কোনও ভাইরাল জ্বরে যদি মায়োকার্ডাটিস বা হার্টে সংক্রমণ হয়, তখনই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া হলে?
তিন দিন হয়ে গেলেও যদি জ্বর না কমে, তা হলে ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট টেস্ট ও এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত। ভাইরাল জ্বর হলে দু’-তিন দিনের মধ্যেই রোগীর কষ্ট কমে যায়।
তবে রোগী যদি নেতিয়ে পড়ে, কষ্ট বাড়ে তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অনেক সময় জ্বরের সঙ্গে পেটের গোলমাল ও বমি থাকতে পারে। তাই ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে।
মশার সঙ্গে আড়ি
শহরে মশারি ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। ডেঙ্গি ম্যালেরিয়ার বাড়বাড়ন্তের এটা এক অন্যতম কারণ। তবে সব চেয়ে আগে প্রয়োজন মশা দমন করা। নিজেদের বাড়িতে তো বটেই,আশপাশে কোথাও জল জমতে দেখলে সতর্ক হতে হবে।
বিশেষ করে, যে সব অঞ্চলে নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে সেই অঞ্চলের পরিবেশের দিকে নজর রাখুন। সরকারের পক্ষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংস করা সত্যিই সম্ভব নয়। নিজেদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।
মশার বংশ বিস্তার বন্ধ না করলে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত আটকানো মুশকিল। মশার লার্ভা দেখলেই তা বিনাশের ব্যবস্থা করা ভীষণ ভাবে জরুরি। আমরা প্রত্যেকে এই ব্যাপারে সজাগ থাকলে তবেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
বিকেল হলেই বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ করে দিলে মশার হাত থেকে কিছুটা রেহাই মেলে। আর মশারি টাঙিয়ে ঘুমনো বাধ্যতামূলক। তবেই ডেঙ্গি ম্যালেরিয়ার থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে। আর ভাইরাল ফিভার রুখতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চললেই সুস্থ থাকবেন।