শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০২:৪০ পূর্বাহ্ন
জেলায় এখনো পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি বলে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হলেও বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের অবস্থান ও গতিবিধির সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় জনমনে করোনার ঝুঁকি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জামালপুর জেলায় কত সংখ্যক বিদেশ ফেরত ব্যক্তি অবস্থান করছেন তা প্রশাসন পুরোপুরি নির্শ্চিত হতে পারেনি। এ পর্যন্ত ২শ ৫৮ জনকে হোম কায়ারেন্টিনের আওতায় এনেছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ।
তবে তথ্য গোপন করে অবস্থান ও অবাধ চলাফেরা করছেন এমন বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনতে মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা চলছে। হোম কোয়ারেন্টিন না মানায় রোগ সংক্রমণ আইনে জেলার কয়েকটি স্থানে কয়েকজন বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে জরিমানাও করা হয়েছে।
এ নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের তালিকা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসেছে। সেই তালিকা সমন্বয় করে এরই মধ্যে বিদেশ ফেরত ৫০০ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা ১৪ দিনের কোয়ান্টিনের আওতায় আসার মতো।
এছাড়াও জামালপুর সদর, সরিষাবাড়ি, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জে স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন, এনজিও, ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্করামূলক লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করে সাধারণ জনগণকে সতর্ক করছেন। করোনার অজুহাত দেখিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিতে না পারে সে জন্য পুরো জেলাতেই প্রশাসন নজর দারির মধ্যে রখেছেন।
এরইমধ্যে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে ভাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করেছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জামালপুরের রানীগঞ্জ যৌনপল্লীকে এক মাসের জন্য লকডাউন করা হয়েছে। রোববার ২২ মার্চ দুপুরে ডিসির সভাকক্ষে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ জেলা কমিটির সভায় ঘোষণা দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিসের আয়োজনে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে গঠিত জেলা কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ও ডিসি মোহাম্মদ এনামুল হক।
এ সময় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ডিসি বলেন, যৌনপল্লীগুলো এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। চলমান করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ যৌনপল্লীতে লোকজনের যাতায়াত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখাই ভালো। তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আগামী এক মাসের জন্য এ যৌনপল্লীকে লক ডাউন করা হলো। রোববার থেকেই এ আদেশ কার্যকর।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, লকডাউনের কারণে সাময়িক সমস্যা হলেও এ অন্তর্বর্তীকালীন সময় মানবিক কারণে সেখানকার দুই শতাধিক যৌনকর্মীর জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে প্রত্যেক যৌনকর্মীকে এ ১ মাসের জন্য দেয়া হবে ৩০ কেজি করে ত্রাণের চাল।
এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত যৌনকর্মীদের কাছ থেকে ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎবিল ও ডিশ লাইন বিল না নেয়ার জন্য বাড়ির মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যৌনপল্লীতে জনসাধারণের চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ এ নির্দেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) তৌহিদ বিন হাসান, জামালপুর পৌরসভার মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি, জামালপুর সদর সার্কেলের এসপি শিবলী সাদিক, পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিব সিংহ সাহা রানীগঞ্জ যৌনপল্লীতে গিয়ে বাড়ির মালিক ও যৌনকর্মীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলার আহবান জানানো হয়।
জামালপুর পৌর এলাকায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও প্রতিরোধের লক্ষ্যে পৌর সভায় প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। পৌরসভার মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ ড. মুজাহিদ বিল্লাহ ফারুকী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা, জিএস মিজানুর রহমান, প্যানেল মেয়র মো. ফজলুল হক আকন্দ প্রমুখ।
২২ মার্চ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ জামালপুর জেলা কমিটির সভায় এসপি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কাছে যে তালিকা আসছে তা নিয়ে কাজ করা খুবই কষ্টকর। এ তালিকা প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে আমরা বসে নেই। সেই তালিকা থেকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার মতো ৫০০ জনের একটি তালিকা করেছি। সেই তালিকা ধরে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে আনার কাজ শুরু হয়েছে।
সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে চলে আসা ব্যক্তিদের দ্বারাই যে কেউ যখন তখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে। সেই শঙ্কা থেকেই তাদের প্রত্যেককে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনার কাজটাকেই এ মুহূর্তে সবচে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হবে বলেও তিনি জানান।
সভায় সিভিল সার্জন ডাক্তার গৌতম রায় জানান, ২২ মার্চ সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৭টি উপজেলায় নতুন করে বিদেশ ফেরত ১৬৬জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে সবার সহযোগিতায় এ নিয়ে এ পর্যন্ত জেলায় বিদেশ ফেরত মোট ২৫৮জন হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় এসেছেন। এর মধ্যে জামালপুর সদর উপজেলায় ২৬জন, মেলান্দহে ৮৫, মাদারগঞ্জে ২৭ জন, দেওয়ানগঞ্জে ২৯জন, ইসলামপুরে ৫০ জন, বকশীগঞ্জে ৩৩ জন এবং সরিষাবাড়ি উপজেলায় কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৮জন।
সিভিল সার্জন আরো জানান, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বিদেশ ফেরতদের মধ্যে কারো শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ এখনো পর্যন্ত দেখা দেয়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুসারে জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্প এলাকায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া জামালপুর জেলা সদরে পৃথক একটি আইসোলেশন হাসপাতাল স্থাপনের নির্দেশনা এসেছে। এরইমধ্যে সেই বিষয়টি নিয়েও আমরা কাজ শুরু করেছি। আইসোলেশন হাসপাতালটিও হবে মেডিকেল কলেজ প্রকল্প এলাকার অন্য একটি ভবনে। তিনি সবাইকে নিয়মিত হাত ধোয়া ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং বিদেশ ফেরত ব্যক্তি তার শরীরে করোনার উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক তাদের সঙ্গে মেলামেশা না করা, নিরাপদ দূরত্বে থাকা এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
ডিসি মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, প্রত্যেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি জামালপুর জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কেউ বিদেশ ফেরতদের নিয়ে কোনো সন্দেহজনক কিছু পেলে দ্রুত জানানোর আহবানের পাশাপাশি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।