রবিবার, ০৭ মার্চ ২০২১, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: খরায় পোড়ে, বন্যায় ভেসে যায়। নদ-নদীর বুকে যাদের বসত,
থেমে থাকেন না তারা। দুর্গম বালুচরে রক্তপানি করা শ্রমে লাখো মানুষের আহার জোটায়।
তারপরও বঞ্চনা ছাড়া কিছুই জোটে না তাদের কপালে। মুখ ফিরিয়ে নেয় সরকারি কর্মকর্তা
এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও। বানের ঝাপটায় সবই তছনছ হয়েছে। ডানা ভাঙা পাখির মতো
সাতসকালে ফসলের ক্ষেতে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম চরবাসীর। সকাল-সন্ধ্যা অক্লান্ত পরিশ্রমে
বালুচরে সবুজের পাহাড় গড়েছে কৃষক। দেশের আকাশে সুখের পায়রা ওড়াতে যাদের
নিঃস্বার্থ কষ্ট- ঘাম হয়ে ঝরে,বরাবরই উপেক্ষিত তারা। সরকারের কৃষি বিভাগের কর্তারা
ফিরেও তাকায় না চরের দিকে। গতরখাটা মানুষের স্বাস্থ্যসেবাও যেন দুরাশা। বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের মুখ দেখার আগে আজরাইলের মুখ দেখতে হয় অনেক সময়। কৃষকরা বলেন নিজের
জমিতে আবাদ করে বীজ-সার পান না তারা। কৃষি কর্মকর্তারাও কোনো খোঁজখবর নেনা
বলেও তাদের অভিযোগ। ফলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরামর্শের অভাবে নষ্ট হচ্ছে ফসলের ক্ষেত।
যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিবর্তনে সরকারি বরাদ্দ হয়, নির্মাণ হয় ব্রিজ-কালভার্টও। কিন্তু তার
সুফল জোটে না কপালপোড়া চরবাসীর ভাগ্যে। বিপদে-আপদে স্থানীয়-জনপ্রতিনিধি তো
দূরের কথা, চৌকিদারকেও কাছে পায় না তারা। কথা রাখে না মেম্বার-চেয়ারম্যানরাও। ইউনিয়ন
পরিষদে তালা ঝুলিয়ে সবাই থাকে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন বলেন,
তালাটা দেখলেই বোঝা যায় ৬ মাসেও একবার খোলা হয় না ইউপি কার্যালয়। মাঝে মাঝে যখন
মিটিং করে সেদিন এসে আবার চলে যায় নদীর ওপারে। ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত জনপদ ফুলছড়ি উপজেলার
নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রায়হান দোলন বলেন প্রান্তিক মানুষের সেবা নিশ্চিতে ব্যবস্থা
নেওয়া হবে। কৃষি অফিসারের সঙ্গে কথা বলে যাতে তারা তাদের দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে
করে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়
১৬৫টিরও বেশি চর-দ্বীপচর রয়েছে। কমবেশি সবই একই অবস্থা। বন্যা-ভাঙনের মতো
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র পাড়ের মানুষের জীবনে
একটু সুখের ছন্দ ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আর সরকারি দপ্তরগুলোকে আরো
বেশি তৎপর হওয়া প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।