নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন জানিয়েছেন, বাবা এখনও বেঁচে আছেন। দশদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার অবস্থা খুবই গুরুতর। বেশ মুমূর্ষু অবস্থায় আছেন।
শুক্রবার রাতে নিউইয়র্ক থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। খোকার মৃত্যুর বিষয়ে যেটা ছড়ানো হয়েছে সেটা গুজব বলে দাবি করেন ইশরাক। তিনি বলেন, সে রকম কিছু এখনও হয়নি। এটা হলে-তো লুকানোর কিছু নেই।
ইশরাক হোসেন আরও বলেন, ‘উনি (সাদেক হোসেন খোকা) একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। চারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য। দুই বার কেবিনেট মন্ত্রী ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি অবিভক্ত ঢাকার মেয়র, কেবিনেট মন্ত্রী ও অবিভক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে ছিলেন। সুতরাং লুকানো-চাপানোর কিছু নেই। হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে। যদি সে রকম কোনো পরিস্থিতি হয় সেটা অবশ্যই জাতীয়ভাবে নিউজ হবে। তবে এখন আমি যেটা বলতে পারি তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। ওনাকে বিভিন্ন রকম ওষুধ দিয়ে কমফোর্টেবল রাখা হয়েছে।’
খোকার ক্যান্সারের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওনার ক্যান্সারের যে চিকিৎসা চলছিল সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ক্যান্সারের চিকিৎসা দেয়ার মতো আর পরিস্থিতি নেই। এখান থেকে ফিরে আসাটা আল্লাহর ওপর নির্ভর করছে।
সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাদেক হোসেন খোকার শারীরিক অবস্থা পরিবর্তনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকরা। তারা খোকার সব চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছেন।
খোকার জীবনের শেষ ইচ্ছানুযায়ী অন্তিম সময়ে তাকে দেশে নেয়াও পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। পাসপোর্ট না থাকায় দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে কী হবে, এ নিয়ে স্বজনরা বিভ্রান্তিতে আছেন।
ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ মে সপরিবারে নিউইয়র্ক চলে যান সাদেক হোসেন খোকা। তার পর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে একটি বাসায় দীর্ঘদিন ধরে থাকছিলেন বিএনপির এ নেতা।
ভিজিট ভিসার নিয়ম অনুযায়ী, ছয় মাস পর পর যাওয়া-আসা করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বৈধ রাখার নিয়ম। ২০১৭ সালে খোকা ও তার স্ত্রী ইসমত হোসেনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তারা নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যাপারে কনস্যুলেট থেকে কোনো সদুত্তর দেয়া হয়নি।
হাসপাতালে খোকার পাশে আগে থেকেই আছেন তার স্ত্রী ইসমত হোসেন, মেয়ে সারিকা সাদেক, ছেলে ইশফাক হোসেন। বাবার সংকটাপন্ন অবস্থার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে তার বড় ছেলে ইশরাক হোসেনও নিউইয়র্কে ছুটে গেছেন।
২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন খোকা। ২৯ নভেম্বর ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ১৪ মে মাসে সাদেক হোসেন খোকা চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যান। সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন। এ সময়কালে দেশে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা হয়। এর কয়েকটিতে তাকে সাজাও দেয়া হয়েছে।