রেইনবো কেক দেখে আমি সত্যিই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম।কেউ যেন আমার শ্বাস-প্রশ্বাস আটকে দিয়েছিলো।আমি,শুভর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।শুভর বাবা বললো,কি হলো?এমন করছো কেন?কেকটা খাও। আমি আর নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। “আমাকে কেক খাওয়ানোর এতোই তাড়া?হবে নাই বা কেন?আমি যত তাড়াতাড়ি মরবো ততই তো তোমার লাভ।আমাকে বিষ মিশানো কেক খাইয়ে রিমিকে বিয়ে করবে?”
শুভর বাবা বললো,কি বলছো এসব পাগলের মত?আর রিমি এলো কোথা থেকে?আজকেই আমি রিমিকে জীবনে প্রথম দেখলাম।আর কেকে বিষ থাকবে কেন?
আমি শুভর বাবার কোনো কথাই বিশ্বাস করতে পারলাম না।রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললাম, আমি এক্ষুনি পুলিশে কমপ্লিন করবো।
হয়তো আমি সেদিন সত্যিই থানায় ফোন করতাম। কিন্তু, তার আগেই সাদিক নিজেই আমার সামনে রেইনবো কেক টা খেয়ে ফেললো।বললো,কই বিষ? আমার কিছু হয়েছে কি?
তখন আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম।সাদিক তার বন্ধু আসাদকে ফোন করলো। বললো, রিমিকে দিতে। তখন রিমিকে সে খোলাখুলি সব বললো।এসব শুনে রিমি কান্না করে দিলো।আসাদও রাগারাগী করলো তার বউয়ের নামে এমন অপবাদ দেয়ার জন্য।সাদিক এবার আমাকে রাগী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,কে বলেছে তোমাকে এসব?শুভ বাঁদর টা?
আমি অস্বীকার করলাম।কারন,এর আগেও শুভ এমন উদ্ভট কথা বলে সাদিকের কাছে শাস্তি পেয়েছে।তাই, আমি আর আজকে ওকে বিপদে ফেলতে চাইনা।যা শাস্তি দেয়ার আমিই পরে দিবো।আমি, সাদিকের কাছে ক্ষমা চাইলাম।কাঁদলাম।ব্যাপারটা বাড়তে দিলাম না।
পরদিন আমি শুভকে জেরা করার জন্য ওর রুমে গেলাম। দেখলাম দরজা বন্ধ।কান পেতে রইলাম ও রুমে কি করে… দেখলাম ও খুব কাঁদছে।বিলাপের মতো।আর,কি যেন বলছে।সব কথা বুঝতে না পারলেও খানিক যেটা আমি বুঝলাম তা হলো,ও কারো কাছে আরেকটা সুযোগ চাইছে। কাঁদতে কাঁদতে বলছে,আমাকে আরেকটা শেষ সুযোগ দিন।
কাকে বলছে এসব?ওর তো ফোনও নেই। আমি ওর রুমের ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে এসে আস্তে দরজা খুললাম। দেখলাম ওর ঘরে থাকা বড় আয়নাটার সামনে ও ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গী করে বসে আছে আর কাঁদছে।আমি ওকে ডাকলাম,শুভ তুই এমন করছিস কেন?
শুভ আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
সেইদিনের পর থেকে ওর আয়না রোগ সেরে গেলো।আর, আয়নার সামনে বসে থাকেনা।রোজ স্কুল যায়।বাড়ি ফিরে হোমওয়ার্ক করতে বসে।আর ৫ টা বাচ্চার মতোই।তবে খুবই বিষন্ন হয়ে থাকে সবসময়।
এভাবে মাস ছয়েক কাটার পরে আমি জোর করে ওকে সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে গেলাম…
চলবে…..