আজ শনিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস। যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটির মসজিদগুলোতে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে।
সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ৭১’র এই দিনেই আত্মোৎসর্গের ব্রত নিয়ে দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানীরা মুক্তিকামী আপামর জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে অপ্রতিরোধ্য আক্রমণের সূচনা করেছিলেন। এর পর থেকে প্রতি বছর ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টেলিভিশন এবং রেডিও চ্যানেলে একযোগে প্রচার করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, মহান মুুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সশস্ত্র বাহিনী জাতির গর্ব ও আস্থার প্রতীক। কেবল দেশেই নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে পেশাগত দক্ষতা, সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশে^ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ¦ল করে চলেছেন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত থেকে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে ২১ নভেম্বর একটি বিশেষ গৌরবময় দিন। তিনি বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্তমানবতার সেবা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা ও জাতি গঠনমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে।
আজ সকালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের সামরিক সচিবরা ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এর পর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দিবসটি উপলক্ষে তিন বাহিনীর প্রধানরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তিন বাহিনীপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
করোনা মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২০’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিত সংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সদস্যদের ২০১৯-২০২০ সালের শান্তিকালীন পদক প্রদান অনুষ্ঠান এবং সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। এর পরিবর্তে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাহিনীত্রয় এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদানকৃত উপহারসামগ্রী বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও অন্যান্য নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তরাধিকারীদের কাছে পৌঁছানো হবে। ‘শান্তিকালীন পদক’ সরকার মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে বাহিনীপ্রধানরা সুবিধাজনক সময়ে প্রদান করবেন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘বিশেষ দুর্বার’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে।
সেনানিবাসে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ : সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আজ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদের সামরিক সচিবরা এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। ওই সময় ঢাকা সেনানিবাসের রাস্তাগুলো (শহীদ জাহাঙ্গীর গেট থেকে স্টাফ রোড পর্যন্ত প্রধান সড়ক) যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে সেনানিবাসে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা ছাড়া সব রকম যানবাহন চালকদের আজ সকাল ৭টা থেকে বেলা ৯টা পর্যন্ত সেনানিবাস এলাকা দিয়ে চলাচল পরিহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।