রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর বাঘায় খোর্দ্দবাউসা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে অর্থের বিনিময়ে পছন্দের ব্যক্তিকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এখবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়। এদিকে ৩১মে বুধবার অবৈধ নিয়োগ বাতিল ও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে অভিভাবক মহল সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিভাবক সদস্য মুঞ্জুর রহমান বলেন,প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনাদের সকলকে জানাই সালাম ও শুভেচ্ছা।
আমি মো.মুন্জুর রহমান অভিভাবক সদস্য(ছাত্রছাত্রী) খোর্দ্দ বাউসা উচ্চ বিদ্যালয়,বাঘা,রাজশাহীআমার সঙ্গে উপস্থিত মো.ইব্রাহীম শ্রী নরেশ, মো. বাবলু, মো. ছানার আলী, রব্বেল আলী,সহ অন্যান্য ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক সদস্য এবং আড়ানি ইউপি সদস্য মো. জালাল উদ্দিন, আড়ানী ইউপি ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী, বাউসা ইউপি ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি মো. আইনাল হকসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গসহ এলাকাবাসী আপনাদের সকলের উপস্থিতিতে এই মর্মে সংবাদ সম্মেলন করছি যে,অত্র উপজেলার ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত খোর্দ্দ বাউসা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়টি সুনামের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছে। কিন্তু গত তিন বছর পূর্বে অবৈধভাবে গঠিত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুক্তার হোসেন সম্পুর্ন অন্যায়ভাবে পেশী শক্তির বলে বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান ওরফে মতিকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরপর সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হয়। প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়ে আব্দুল লতিফ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি প্রস্তুত নিতিমালা লঙ্ঘন করে মুক্তার হোসেনের জামাই আড়ানি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিবন আহমেদ বাপ্পিকে সভাপতি করা হয় এবং তার ( সভাপতি) সঙ্গে যোগসাজষ করে গত ১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ও স্থানীয় অপ্রচলিত দৈনিক সংবাদ ও দৈনিক রাজবার্তা পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পত্রিকার কপি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন, ফলে ওই দিন এই দুটি পত্রিকা রাজশাহীর কোথাও পাওয়া যায়নি।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের ১৭ জন অভিভাবক সদস্য বাদি হয়ে গত ৫ এপ্রিল অবৈধ কমিটি বাতিল ও নিয়োগ কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক অভিযোগ আমলে নিয়ে (মামলা নম্বর -৪৪/২৩ ) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রিবন আহমেদ বাপ্পিসহ নয় জনের বিরুদ্ধে কারন দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করেন। যা গত ৯ এপ্রিল সকল বিবাদিগন কোর্ট কর্তৃক প্রেরিত চিঠি বিলিকারির নিকট থেকে গ্রহন করেন। শোকজ নোটিশ প্রাপ্তির একদিন পর ১১ এপ্রিল কোনরুপ পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। কিন্তু গনমাধ্যম কর্মিগন বিষয়টি জানার পর জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিনের নিকট আদালতের শোকজ নোটিশের পরেও কিভাবে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ.খ.ম হাসানকে নির্দেশ দেন এবং সে মোতাবেক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।কিন্তু এরপর নাটকিয়ভাবে সভাপতির সঙ্গে যোগসাজষ করে ডিজি প্রতিনিধি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষর ব্যতিত তিনজনকে নিয়োগ দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ।নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসায় বিষয়টি গ্রামবাসিসহ আমরা অবিভাবকসদস্যবৃন্দ অবগত হয়।অবগত হয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নিকট নিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদেরকে সঠিক তথ্য না দিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদর্শন করেন।সহকারি প্রধান শিক্ষক,পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া মোট তিনটি পদে বিধি বহিভূর্তভাবে আদালতকে অবমাননা করে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রহস্যজনকভাবে তিনটি পদের নিয়োগ সম্পুর্ন করার জন্য পাঁয়তারা করছেন। এমনকি নিয়োগ পরীক্ষায় মাত্র কয়েকজন অংশগ্রহণ করলেও লোকদেখানো ওই পরীক্ষার মাধ্যমে এই নিয়োগকেই বৈধতা দেওয়ার চেস্টা করছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ।লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুন্ন করে হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অর্থ বানিজ্য করে কৌশলে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করছে সংশ্লিষ্টরা।এই স্কুলে এক নায়কতন্ত্র চলছে। সাময়িক বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান ওই স্কুলের জমিদাতা। অথচ তাকে অন্যায়ভাবে তিন বছর থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে রাখা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক তাঁর বহিষ্কারাদেশ এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন। গত ১০ মে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের নির্দেশে বিদ্যালয় পরিদর্শক তাঁর বকেয়াসহ পুর্নাঙ্গ বেতন প্রদানের নির্দেশও প্রদান করেন। কিন্তু আজ অব্দি সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ক্ষমতার জোরে প্রধান শিক্ষকের বেতন স্লিপ ছাড়ছেন না।আরও উল্লেখ থাকে যে, আগামী মাসের (জুন) ৩০ তারিখ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চাকুরীর মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু কমিটিকে ম্যানেজ করে আবারও দুই বছরের জন্য ওই পদে থাকার পায়তারা করছেন তিনি ।প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা, আপনাদের মাধ্যমে আমরা জেলা শিক্ষা অফিসার সহ শিক্ষামন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানাই, বিপুল পরিমান অর্থ বানিজ্যের মাধ্যমে আদালতের শোকজ অমান্য করে সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ ৩টি পদে যে নিয়োগ দান করেছেন( একটি পদে কোন প্রার্থী উপস্থিত না হওয়ায় শুন্য রাখা হয় ) তা তদন্তপূর্বক বাতিল করে দুর্নীতিবাজ শিক্ষক আব্দুল লতিফসহ জড়িত সকলের শাস্তির আওতায় আনা হোক। অন্যথায় বিদ্যালয়ের সুনামক্ষুন্নসহ শিক্ষা দানে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে। অতিসত্তর তদন্ত করে অবৈধভাবে দেওয়া এসব নিয়োগ বাতিল ও সুষ্ঠুভাবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক সদস্যবৃন্দসহ এলাকাবাসী।এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফের বক্তব্যর জন্য বিদ্যালয়ে গেলে তিনি সাংবাদিকদের আসার খবরে প্রতিষ্ঠান থেকে গোপনে সটকে পড়েন। এরপর তার মোবাইলে একাধিক বার কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আখম হাসান বলেন, ওই নিয়োগ সম্পর্কে আমার কিছু জানা নাই। আমি একটি তদন্তের কাজে বাইরে আছি, আগামী কাল অফিসে আসেন। বিস্তারিত কথা হবে।#