আজ আমি এমন এক সতীর্থ জ্ঞান তাপসের স্মৃতিচারণের উদ্দেশ্যে কলম ধরার প্রয়াস পেলাম, যার স্মৃতি এখনও আমার অন্তরের ডাইরীতে একটি অধ্যয় জুড়ে স্থান করে নিয়েছে। জীবনের ঘটনা প্রবাহে রুমমেট হিসেবে তাঁর সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে, পরবর্তীতে অন্তরঙ্গ বন্ধু, আত্মীয় এবং এক পর্যায়ে গতানুগতিকতার সকল সূত্র ছাড়িয়ে যিনি একজন কল্যাণকামী, নিঃস্বার্থ ও শুভাকাঙ্ক্ষীতে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি আজ আমাদের মাঝে বেঁচে নেই কিন্তু অনেকের হৃদয় মাঝে রেখে গেছেন এক গাঁদা মধুময় স্মৃতি।
প্রফেসর আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) এর সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার হোস্টেল ভবনের ২১ রুমে। সময়টা ছিলো ১৯৬৫ সালের অক্টোবর মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখ। আমি সে বছরেই চুনতি হাকীমিয়া মাদরাস হতে ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কামিল (হাদীছ) অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে সুদূর ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য দেশের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান মাদরাসা-ই-আলিয়া তে অধ্যয়ন করবো। যেখানে রয়েছে কলকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে চলে আসা পাক ভারত উপমহাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষকবৃন্দ। আল্লামা সাইয়্যিদ আমিমুল ইহসান, আল্লামা আব্দুর রহমান কাশগড়ী , মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুস সাত্তার বিহারী প্রমুখ। অনুরূপভাবে অধ্যক্ষ আল্লামা ফখরুদ্দীন এসেছিলেন হাদীছ শাস্ত্রে কামিল ডিগ্রী অর্জন করার পরে ফিকাহ ও তাফসীর বিষয়ে উচ্চতর শ্রেণীতে অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে। সেই সময় এর সুযোগ ছিলো একমাত্র মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকাতেই। আমার স্পষ্ট মনে আছে,ঢাকা আলিয়াতে কামিল শ্রেণীর ভর্তি কার্যক্রম সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেই শুরু হওয়ার কথা। যেহেতু সীমিত সংখ্যক আসনে এখানে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই ভর্তি হতে হয়। তাই প্রথম দিকে উপস্থিত হতে না পারলে ভর্তির সুযোগ হতে বঞ্চিত হতে হয়। তাই ১লা সেপ্টেম্বরে আমার ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত। কিন্তু হঠাৎ করে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হওয়ার দরুন যাত্রার তারিখ স্থগিত করতে হলো। ০৬ই সেপ্টেম্বরে বেধে গেলো পাক ভারত যুদ্ধ। দু তিন সাপ্তাহ এ যুদ্ধ চলার পর উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে আমি অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে ঢাকায় উদ্দেশ্যে রওনা দিই। কামিল (হাদিস) শ্রেণীতে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর হোস্টেলে ভর্তি হওয়ার পালা। হোস্টেল সুপার ছিলেন মাওলানা আব্দুল খাইর নামক জনৈক উস্তাদ। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানাতে আমার পরিচয় পাওয়ার পর তিনি আমাকে জানালেন যে, আমার নানা মরহুম মৌলানা নজির আহমদ ছিলেন তাঁর প্রিয় উস্তাদ। আমার মনে হলো প্রবাসে আমি একজন মুরব্বি পেয়ে গেলাম। তখন থেকে তিনি আমার সাথে আত্মীয় সূলভ সদয় আচরণ করতেন। তিনি আমাকে হোস্টেলের ২১ নং রুমে একটি সীট বরাদ্দ দিয়ে বললেন সেখানে আরো দু’জন চাঁটগাবাসী শিক্ষার্থী থাকে। তাই তোমাকে সেই রুমেই সীট বরাদ্দ দেয়া হল। তখন আমি অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করেছিলাম এই জন্য যে জীবনের প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসে উস্তাদের কল্যাণে চট্টগ্রাম নিবাসী দু’জন রুমমেট পেয়ে গেলাম। মৌলানা ফখরুদ্দীন ছিলেন তাদেরই অন্যতম। দ্বিতীয় জন ছিলেন হাটহাজারী নিবাসী মৌলানা সালাহুদ্দীন ইমামী। এই সূত্রে পরবর্তীতে এ দু’জন আমার অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন।
অধ্যক্ষ আল্লামা ফখরুদ্দীন চট্টগ্রামস্থ দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসা হতে কামিল(হাদীছ) অধ্যয়ন করার পর একবছর পূর্বে (১৯৬৪ সালে) মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকাতেই গিয়ে কামিল (ফিকাহ) কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন।আর আমি যখন ঢাকা আলিয়াতে কামিল (হাদীস) শ্রেণী ভর্তি হয়েছিলাম তখন অধ্যাপক আল্লামা ফখরুদ্দীন ছিলেন কামিল ( তাফসীর) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পক্ষান্তরে মৌলানা ছালাহুদ্দীন ছিলেন উর্দু সাহিত্যে ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থী। এ ডিপ্লোমা কোর্সটি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার কতৃক প্রবর্তিত এবং এ কোর্সের সকল শিক্ষার্থী আকর্ষণীয় হারে বৃত্তি পেয়ে থাকতো যা দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা খাওয়ার ব্যয় নির্বাহ করা যেতো।
১৯৬৫ সালে অক্টোবর থেকে ১৯৬৮ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় তিনবছর আমরা অভিন্ন কামরায় অবস্থান করি। এ সুদীর্ঘ তিনবছরে তাকে অনেক নিকট থেকে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। সেই অবিজ্ঞতার আলোকেই আমি বলতে পারি যে মরহুম মৌলানা ফখরুদ্দীন (রহ) ছিলেন একজন বন্ধু সূলভ, কপটতা বর্জিত,শুভাকাঙ্ক্ষী, আন্তরিকতাপূর্ণ সহকর্মী, একজন দারাজদিল বন্ধু এবং নিরলস জ্ঞান পিপাসু ও ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তা চেতনার অধিকারী মধ্যপন্থী আলেমে দ্বীন। এর সাথে ছিলেন অর্জিত জ্ঞানের আলো শিক্ষার্থীদের কাছে বিতরণে সদা বদ্ধ পরিকর। কোন অত্যুক্তির আশ্রয় না নিয়েও আমি নির্দ্বিধায় এ কথা বলতে পারি যে তিনি ছিলেন সেই সুমিষ্ট প্রশ্রবনতুল্য যেখানে জ্ঞান পিপাসুরা এসে নিজেদের তৃষ্ণা নিবারণ করে যেত অথবা জ্ঞানের সন্ধানে বেরিয়ে পড়া পথিকেরা তাতে প্রশান্তি লাভ করতে পারতো।
শিক্ষাজীবনে তিনি আমার তিন বছর সিনিয়র ছিলেন। এতদ সত্ত্বেও রুমমেট হওয়ার কারণে তিনি কখনও নিজেকে সিনিয়রের বিবেচনায় রাখেননি বরং আমার সাথে একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবেই আচরণ করতেন। তিনি যখন কেনাকাটা বা তাঁর কাছে আগত মেহমানদের নিয়ে শপিং কিংবা কোন দর্শনীয় স্থান দেখতে গেলে আমাকেও সাথে নিয়ে যেতেন। তাঁর মেহমানদেরকে আপ্যায়ন করানোর সময় আমাকেও করাতেন। আমিও আমার মেহমানদেরকে আপ্যায়ন করানোর সময় তাঁকে রাখতাম।
মরহুম অধ্যক্ষ আল্লামা ফখরুদ্দীনের সাথে আমার জীবনের একটি অভিন্ন সাদৃশ্য ছিল এই যে আমরা উভয়েই সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করি। তবে আমার শিক্ষকতার জীবন ছিল ক্ষণস্থায়ী আর তাঁর ছিল দীর্ঘস্থায়ী। তখনও পুরো দেশে সরকারি মাদরাসার সংখ্যা ছিল মাত্র দু’টি,তথা মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা এবং সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা।দীর্ঘ বিরতীর পর উক্ত মাদরাসাদ্বয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হতো। ১৯৬৮ সালে দীর্ঘদিন পর এ প্রতিষ্ঠান দু’টির জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে আমরা এটাকে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করি এবং উভয়ই আবেদন পত্র জমা দেই।একমাসের মধ্যে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং আট জনের একটি প্যানেল প্রস্তুত করা হয়। আমরা দু’জনেই কৃতিত্ব অর্জন করি। প্যানেল প্রকাশ করার ১৫ দিনের মধ্যে আমি নিয়োগ পেলাম সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক পদে। উক্ত পদে যোগদানের পর দু’মাসের মধ্যে আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফল প্রকাশিত হলে দেখি যে আমি বৃত্তি প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। তার মানে আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করি তা হলে টিউশন ছাড়া অধ্যয়ন এবং থাকা খাওয়ার জন্য যে বৃত্তি পাবো তাতে আমার খরচের সিংহভাগ নির্বাহ হবে। তাই অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বের পর শেষমেশ চাকুরীতে ইস্তেফা দেয়ার মাধ্যমে আমাদের (আমি আর মৌলানা ফখরুদ্দীন সাহেব) যে অভিন্ন স্বপ্ন ছিল দু’জন অভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সহকর্মী হিসেবে কাজ করবো,তা ভঙ্গ হয়ে গেল এবং দু’জনের জীবনের গতিপথ ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হতে লাগল। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করি। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত যখনই মৌলানা ফখরুদ্দীন সাহেবের সাথে দেখা হতো তিনি আমাকে সরকারি চাকুরী ছেড়ে দেয়ার জন্য রীতিমত উদ্বেগ প্রকাশ করতেন। তিনি প্রায় সময় বলতেন মাদরাসায় অধ্যপনা করলে ছাত্রদেরকে হাদীস , তাফসীর ও ফিকাহ বিষয়ে দারসের সুযোগ বেশী। যা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন সুযোগ নেই বললে চলে। যাইহোক পরবর্তীতে তিনি যখন দেখতে পেলেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরির সুবাদে আমি বিদেশে উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ প্রাপ্তি পি.এইচ.ডি অর্জন এবং বিদেশেী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যপনার সুযোগ লাভ করেছি তখন তিনি অকপটে স্বীকার করেছিলেন আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণে তখন ভুল করিনি।
সত্তুরের দশকের মাঝামাঝিকাল হবে। সনটি ঠিক মনে পড়ছেনা। একদা সাক্ষাতে তিনি আমাকে বল্লেন, আমি লোহাগাড়া থানার চুনতী নিবাসী বড় মৌলভীর বাড়ী মাওলানা আব্দুল হাকীমের বংশধর মাওলানা আব্দুন নূর সিদ্দিকীর কন্যার বিবাহের জন্য প্রস্তাব করতে চাই। প্রথমত আপনার সাথে পরামর্শ করতে চাই, প্রস্তাবটি কেমন হবে? দ্বিতীয়ত আপনাকে অনুরোধ করতে চাই,যদি আপনি সমর্থন করেন তাহলে আমার পক্ষে থেকে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করার। তাঁর কথার জবাবে আমি বল্লাম আপনার জন্য এ প্রস্তাবটি হচ্ছে অত্যন্ত চমৎকার প্রস্তাব। সেই আলেমে দ্বীন আমার ভাই সম্পর্কের এবং আমার সাথে তাঁর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। আমি এ বিষয়ের করণীয় সবকিছু করতে প্রস্তুত। পরবর্তীতে এ বিয়েটি সম্পন্ন হলে তিনি সম্পর্কে আমার জামাতা হয়ে যান। তিনিও আমাকে শ্বশুর বলে সম্বোধন করতেন। আলহামদুলিল্লাহ! মরহুম অধ্যক্ষ আল্লামা ফখরুদ্দীনের এ পরিবারে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁদেরকে যে সব সন্তান-সন্ততি দান করেছেন আমার জানা মতে সকলেই মেধাবী, চরিত্রবান এবং দেশ, সমাজ ও ইসলামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
১৯৩৭ সালে চুনতীর বুকে শাহ মৌলানা নজীর আহমদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা গাজীয়ে বালাকোট চুনতীর প্রখ্যাত বুজুর্গ মৌলানা আব্দুল হাকীম (রহ) (১৮০০-১৮৮২) এর পূণ্যস্মৃতির প্রতি উৎসর্গিত এবং চুনতী হাকিমিয়া মাদরাসা নামে খ্যাত দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফাজিল শ্রেণী পর্যন্ত পুরো শিক্ষাজীবন আমি তাতেই কাটিয়েছি। তাই আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল বিশ্ববরেণ্য হাদীস বিশারদ শায়খুল হাদীস আল্লামা ফখরুদ্দীনের মত একজন জ্ঞান তাপসকে কোন সুযোগে এই দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়ে আসার। যে বছর তিনি সরকারি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন সে বছরেই আমি তাঁর কাছে অনুরোধ করি তিনি যেন বাকী জীবনটুকু চুনতিস্থ হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসার খিদমতে নিয়োজিত হন। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ এজন্য যে তিনি আমার অনুরোধ রক্ষা করেছেন। এবং অবসর গ্রহণের পর জীবনের শেষ অধ্যায়টি এ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে হাদীসের দারস দানেই অতিবাহিত করেছেন। তাঁর সংস্পর্শে কয়েক বছর অতিবাহিত করার এবং পরবর্তীতে তাঁর জীবনধারা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বলতে চাই। যে মরহুম মৌলানা ফখরুদ্দীন ছিলেন সত্যিকার অর্থে একজন জ্ঞান তাপস। তাঁর জীবনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি-
(ক) ইসলামী জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে যতটুকু সুযোগ ছিল তার সবটুকু তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন। যেমন হাদীছ বিষয়ে কামিল ডিগ্রী অর্জনের পর ধারাবাহিকভাবে ফিকাহ শাস্ত্র ও তাফসীর শাস্ত্রে উচ্চতর পর্যায়ে অধ্যয়নের যেখানে সুযোগ রয়েছে সেখানেই গমন করেন। তাছাড়া ডিপ্লোমা ইন-আদীব-ই-কামিল ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৪-১৯৬৫ সালে মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা এর রিচার্স এন্ড পাবলিকেশন বিভাগ হতে সরকারি স্কলারশীফ নিয়ে আল্লামা আব্দুর রহমান কাশ-গড়ী (রহঃ) এর তত্ত্বাবধানে “ফোকাহায়ে ইষ্ট পাকিস্তান কে ফেকহী কারনামে” শীর্ষক অভিসন্দর্ভের উপর গবেষণা করে রিচার্স স্কলারশীফ ডিগ্রী লাভ করেন।
(খ) তিনি সকল কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রাখেন এবং মেধা তালিকায় প্রথম দিকে অবস্থান করতেন।
(গ) তিনি যে কোন গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা অধ্যয়নকালে মূলসূত্র (original source) থেকেই জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করতেন।
(ঘ) ছাত্রজীবন ও শিক্ষকতা জীবনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর লিখিত নোট রাখতেন এবং সময়ে সময়ে তা পর্যালোচনা করতেন।
(ঙ) তিনি প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে যে সব তথ্য অবহিত হতেন তা স্মৃতির মানসপটে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতেন।
(চ) শিক্ষার্থী কিংবা সহকর্মী যারা কোন বিষয়ে জানতে চাইতেন তিনি অকপটে ও সহজভাষায় পেশ করতে পারতেন।
(ছ) কোন একটি বিশেষ মাযহাব বা মতবাদ নিয়ে বাড়াবাড়ির আশ্রয় নিতেন না।
(জ) কোন ইস্যু নিয়ে কারো সাথে কূটতর্কে লিপ্ত হওয়া পছন্দ করতেন না।
(ঝ) নিজের লব্দ জ্ঞান বিতরণে কখনো কার্পণ্য করতেন না।
শেষ কথা তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে এই যে মরহুম অধ্যাপক আল্লামা ফখরুদ্দীন কখনও নিজের জ্ঞান নিয়ে গর্ববোধ করতেন না বরং বিনয়ভাবে প্রকাশ করতেন। এ মহান জ্ঞান তাপসের অকাল মৃত্যু ইসলামী জ্ঞানের জগতে এক বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান করুক।
লেখক :
সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর,আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
সাবেক ডীন,শরীআহ অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর, বাংলাদেশ।
সদস্য সচিব, শরীআহ সুপারভাইজরী কমিটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।