শনিবার, ১০ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৩২ অপরাহ্ন
ইউরোপ ও আমেরিকাতে শিশুর জন্ম কমে যাওয়াকে উল্লেখ করা হচ্ছে বেবি বাস্ট হিসেবে। তাত্ত্বিকভাবে বেবি বাস্ট হচ্ছে লোকজনের সেক্স করার আগ্রহ কমে যাওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিনসে ইন্সটিটিউটের রিপোর্ট অনুসারে, যাদের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে, তাদের ৪০%, লিঙ্গ ও বয়স নির্বিশেষে, বলেছে যে মহামারির সময় তাদের সেক্স করার আগ্রহ কমে গেছে।
চীনেও একই ধরনের গবেষণা চালানো হয়েছিল এবং তাতেও একই ফল পাওয়া গেছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়াতে চালানো গবেষণায় দেখে গেছে লোকজনের মধ্যে সেক্সের আগ্রহ কমেনি।
মাস্ট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মনোবিজ্ঞানী এবং যৌনবিজ্ঞানী মারিয়েকে দেভিতে বলেছেন, এসব গবেষণা থেকে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
“লোকজনের যৌনতা ও সম্পর্কের ওপর মহামারির কী ধরনের প্রভাব পড়ে তাতে একেকজন একেকভাবে সাড়া দিয়ে থাকে,” তিনি বলেন।
“অনেকে আছেন স্ট্রেসের কারণে যাদের যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পায়, আবার বাকিরা সেক্স করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।” তবে অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে শিশু জন্মের সম্পর্ক আছে।
বিভিন্ন দেশে সবসময়ই দেখা গেছে যে অর্থনীতি ভাল হলে শিশু জন্মের হার বেড়ে যায় এবং অনিশ্চয়তার কারণে এই হার হ্রাস পায়।
ইউরোপে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের যেসব এলাকা করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে সেসব জায়গায় লোকজন সন্তান জন্ম দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।
কিন্তু উত্তর ইউরোপের কিছু ধনী দেশ- নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড- যারা করোনাভাইরাস মহামারি ভালভাবে মোকাবেলা করেছে, এসব দেশে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে শিশু জন্মের হার সামান্য কমেছে কিম্বা একেবারেই হ্রাস পায়নি।
শিশু জন্ম কমে যাওয়া মোটামুটি সারা বিশ্বেরই প্রবণতা- যাতে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ভবিষ্যতে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা কমে গেলে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে যাবে এবং তার ফলে বয়স্ক লোকজনকে পেনশন ও স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। অথচ মানুষ এখন আগের তুলনায় বেশি সময় বেঁচে থাকছে।
এই সমস্যার সমাধান আছে- অবসর নেওয়ার বয়স বাড়িয়ে দেওয়া অথবা অভিবাসনের ব্যাপারে লোকজনকে উৎসাহিত করা। কিন্তু এগুলোর রাজনৈতিক দিকও রয়েছে।
অনেক দেশ শিশু জন্মের হার বাড়ানোর চেষ্টা করে সামান্য সফল হয়েছে। একবার যখন এই হার কমে যায় তখন নারীদেরকে সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে প্রভাবিত করা খুব কঠিন।
“২০০৯ সালে বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার পর পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে কিন্তু সেটা আগের পর্যায়ে ফিরে যায় নি,” বলেন অধ্যাপক ফিলিপ কোহেন।
“যুক্তরাষ্ট্রে শিশু জন্মের হার মন্দার আগের পর্যায়ে আর কখনোই ফিরে যায়নি।”
বর্তমান মহামারি যতোই দীর্ঘ হচ্ছে নারীদের বয়সও ততো বাড়ছে এবং তাদের জন্য সন্তান ধারণের সময়ও কমে আসছে। যেমন জার্মান নারী ফ্রেডেরিকে মনে করছেন, তার সময়ও ফুরিয়ে আসছে।
এরকম পরিস্থিতিতে তিনি তার ডিম্বাণু হিমায়িত করে রাখার কথাও চিন্তা করছেন। ভাবছেন তার সমকামী পুরুষ বন্ধুর সাথে সন্তান গ্রহণের কথাও। না হলে তার হয়তো কখনোই সন্তান নেওয়া হবে না।
“বয়স্ক লোকজনকে রক্ষার জন্য এটা করতে আমি রাজি, কিন্তু এর জন্য আমাকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হবে।”