দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র টানেল বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের রূপান্তরের
স্বপ্নদ্রষ্টা, উন্নয়নের জাদুকর ও বাঙালির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্থপতি শেখ হাসিনা। এটি
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত পর্যন্ত ৩.৪৩ কিলোমিটার বিস্তৃত।
চট্টগ্রামবাসী সৃষ্টির আনন্দ উদযাপন করছিল কারণ তারা একটি নতুন যুগের সূচনার আশায়
উচ্ছ্বসিত। আনন্দের উৎসব আর আনন্দের আমেজ অনুভব করছিল চট্টগ্রাম। আন্তরিকতা ও
দূরদর্শী পরিকল্পনায় চট্টগ্রাম একটি স্বপ্নের যুগে প্রবেশ করছে। বাঙালির শ্রদ্ধেয় নেত্রী শেখ
হাসিনাকে স্বাগত জানাতে, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের বিস্ময় অনুভব করতে এবং টার্নিং পয়েন্টের
মুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করার জন্য কর্ণফুলীর দুই পাশে লাখ লাখ মানুষ অপেক্ষা করছিল। প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বাংলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তাঁর জীবন উৎসর্গ করায় চট্টগ্রামবাসী তাকে
স্নেহের সঙ্গে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তার অগ্রগতি বিশ্বকে বিস্মিত করেছিল। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ হাসিনা একজন সফল রাজনীতিবিদ,
যার অবদান দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে সম্ভব করে তুলেছে। বঙ্গবন্ধু
নিপীড়িত, নিঃস্ব ও শোষিত বাঙালিকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তাঁর সমৃদ্ধ কন্যা শেখ হাসিনার কারণে
বাংলার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্ব তার কল্পনাপ্রসূত নেতৃত্ব, বিচক্ষণ লক্ষ্য-অর্জন
পরিকল্পনা, সাহসিকতা এবং চালনা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভের দিন বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় দরিদ্রতম দেশ।
বাংলাদেশ মাত্র ৫১ বছরে দারিদ্র্য অর্ধেকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের কভার
স্টোরি অনুসারে, এটি মানুষের জীবনকে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল।
এখন সবাই প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করতে পারে। লক্ষ লক্ষ মহিলা এখন শ্রমে প্রবেশ করতে সক্ষম।
মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু
পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশ বর্তমানে বেশ কার্যকর। বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে বেশ কিছু কারণ
রয়েছে। এর মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ব্যয় উল্লেখযোগ্য।
অবকাঠামো, জ্বালানি ও জ্বালানি, শিল্প ও সেবার মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও বড় বিনিয়োগ করা
হয়েছে। উপরন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগদ্বারা সৃষ্ট হুমকি মোকাবেলায়
বাংলাদেশ এখন অনেক ভালভাবে সজ্জিত। ফলস্বরূপ, দেশের অর্থনীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য এখন প্রচুর বিকল্প রয়েছে। এসব
অর্জনের বেশির ভাগ অবদানই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বলা যেতে পারে।
চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য আমাদের মোট আয়ের ৬০ শতাংশ। দেশের রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৭৫
শতাংশের কেন্দ্রবিন্দু চট্টগ্রাম। বিপরীতে, আমদানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি ৮০%।
অর্থাৎ দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহের জন্য চট্টগ্রাম অপরিহার্য। তাই জাতির সাধারণ প্রবৃদ্ধির
নিরিখে চট্টগ্রামের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে শেখ হাসিনার প্রশাসন।
নিঃসন্দেহে আমাদের দেশ যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন আরও অনেক প্রধানমন্ত্রী আসবেন এবং
যাবেন, কিন্তু শেখ হাসিনার মতো ভালো কেউ হতে পারবে না। তার সহায়তায় অবহেলিত চট্টগ্রাম
বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উৎকৃষ্ট ও সমৃদ্ধ শহরে পরিণত হয়েছে। শুধু শহর নয়,
বৃহত্তর চট্টগ্রামেও দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটছে।
কর্ণফুলীর তলদেশে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের আনুষ্ঠানিক
উদ্বোধন করা হয়েছে। রেলপথে দোহাজারী, কক্সবাজার ও ঘুমধুমের মধ্যে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭
লাখ টাকার একটি প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণ কাজ
শেষ হলে নভেম্বরে এটি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সাগরচোয়ায় অবস্থিত দেশের দীর্ঘতম
রানওয়ে কক্সবাজারে শেষ হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রায় শেষ। এ বছরই
বিমানবন্দরটি চালু হতে পারে, যা দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।
মাতারবাড়ীতে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে।
আনোয়ারা ও মিরসরাইয়ে দুটি 'বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল' এবং বাঁশখালীর গন্ডামারা ও মাতারবাড়িতে
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মতো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, আছে এবং
করবে। চট্টগ্রাম নগরীর প্রবৃদ্ধির অধিকাংশ তদারকি করেছে চট্টগ্রাম গ্রোথ অথরিটি। সমাপ্ত
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে মুরাদপুর-লালখান বাজার আখতারুজ্জামান চৌধুরী এবং বহদ্দারহাট এম
এ মান্নান ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভার: পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট মেরিন ড্রাইভ আউটার সিটি রিং রোড,
স্টেশন রোডের কাদমাতলী ফ্লাইওভার, দেওয়ান হাট ওভারপাস, পতেঙ্গা সৈকতের আধুনিকায়ন,
বায়েজিদ-ফৌজদারহাট বাইপাস রোড।
এছাড়াও অনেক বড় বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে। সড়ক ও সেতু বিভাগ, সওজ, এলজিইআরডিসহ
অন্যান্য সংস্থার ধারাবাহিক যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে সমগ্র বৃহত্তর চট্টগ্রাম
অঞ্চল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চট্টগ্রাম মেট্রোরেল
প্রকল্প এখন নির্মাণাধীন। তার অঙ্গীকারের সুবাদে চট্টগ্রাম এখন প্রবৃদ্ধির মহাসড়কে। তিনি যদি
রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন, তাহলে চট্টগ্রাম।
শেখ হাসিনা সরকারের কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ফলে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে
গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি
প্রবৃদ্ধি হয়েছে নজিরবিহীন ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ব অর্থনীতি
তখন পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে
বাংলাদেশ ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার
সংঘাতের ফলে পারস্পরিক নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ব আবারও মন্দার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পতন রোধ করেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বে ৩৫তম অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংকিং ও
আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের 'দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান'-এর 'এশিয়াস
শপারস ইন ২০৩০' শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভোক্তা বাজার যুক্তরাজ্যের
চেয়েও বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের জনগণ এখন দৃঢ়ভাবে মনে করে শেখ হাসিনার
প্রশাসন সবসময় প্রয়োজন। শেখ হাসিনা যতদিন জাতির দায়িত্বে থাকবেন, ততদিন বাংলাদেশ পথ
থেকে সরে আসবে না।
মেহজাবিন বানু, বাংলাদেশের একজন লেখিকা, কলামিস্ট, নিরাপত্তা ও কৌশলগত বিষয়ক বিশ্লেষক।