প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। গরমের সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবেশের আর্দ্রতা; যার ফলে অনুভূত হচ্ছে বেশি তাপ।এ রকম আবহাওয়ায় ত্বকে দেখা দেয় নানা সমস্যা।
গরমে পানিশূন্যতার কারণে ত্বক নিষ্প্রাণ ও বিবর্ণ হয়ে পড়ে। ত্বক শুষ্ক হওয়ার পাশাপাশি উজ্জ্বলতা হারায়। গরমে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে ত্বকের বিবর্ণ হওয়া থেকে শুরু করে ত্বকের ক্যানসারও হতে পারে।
সূর্য রশ্মির প্রভাবে ত্বকের কোষগুলো মরে গিয়ে ত্বক হারিয়ে ফেলে স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য। টানটান ত্বকের গায়ে দেখা দেয় ভাঁজ আর হয়ে পড়ে ঔজ্জ্বল্যবিহীন। তাই ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে উত্তপ্ত দিনগুলোয় একটু সতর্কতা খুব প্রয়োজন।
সাবান ব্যবহার : বর্ষা ও গরমকালে দিনে দুবার সাবান ব্যবহার করা ভালো। তবে সাবান যেন বেশি ক্ষারযুক্ত না হয়। কারণ অতিরিক্ত ক্ষার ত্বকের ক্ষতি করে। এ ক্ষেত্রে ভালো কোনো বেবি সোপ বা গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেকে একদম সাবান ব্যবহার করেন না। এটা ঠিক নয়। কারণ এতে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।
সানস্ক্রিন ব্যবহার : গরমে ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন সানস্ক্রিন। শুধু গরমকাল বলে নয় সানস্ক্রিন সারা বছরই ব্যবহার করা উচিত। তবে গরমকালে ত্বকের যত্নে সানস্ক্রিন মাখার দিকে বেশি নজর দেয়া জরুরি। বাইরে বের হবার আগে তো বটেই, এমনকি বাড়িতে থাকলেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকে ট্যান পড়বে না।
অ্যালোভেরা ব্যবহার : অ্যালোভেরা ত্বক মসৃণ করে ও অতিরিক্ত গরমে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি শীতল থাকে ত্বক। সানস্ক্রিন লোশন কিংবা ময়শ্চরাইজার সিরামের সঙ্গে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন অ্যালোভেরা জেল।
শাওয়ার জেল ব্যবহার : গরমকালে অনেকেই একাধিকবার গোসল করেন। কিন্তু গোসলের সময়ে বারবার সাবান ব্যবহার করা হলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তাই সাবানের বদলে ব্যবহার করতে পারেন গোসলের জন্য বিশেষভাবে তৈরি তরল সাবান বা শাওয়ার জেল। এতে একদিকে যেমন দূর হবে ত্বকে জমে থাকা ময়লা ও তৈলাক্ত পদার্থ, তেমনই ছড়াবে সুগন্ধও।
পানি পান করা : সূর্যের আলো আমাদের ত্বককে দ্রুত ডিহাইড্রেট করতে পারে। তাই প্রচুর পানি পান করা উচিত। এতে ত্বক হাইড্রেটেড থাকবে। বাইরে গেলে একটি ওয়াটার বোতল বহন করুন। কারণ, ঘামের জন্য আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। এ ছাড়া পানি সমৃদ্ধ ফল এবং শাকসবজি যেমন তরমুজ, শসা খান। এগুলো অতিরিক্ত পুষ্টি, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। হাইড্রেটেড থাকলে ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। ত্বকের বলিরেখাও প্রতিরোধ করে।
ম্যাসাজ করুন : মেকআপের আগে ঊর্ধ্বমুখী গতিতে ৫ মিনিটের জন্য আপনার মুখ ম্যাসাজ করুন। এতে ফোলাভাব কমে যাবে। ত্বক পানি ধরে রাখে। এ সময় লাইট স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের ছিদ্রগুলিকে আটকাবে না। ত্বক ভারী বোধ করবে না। হালকা ওজনের ময়েশ্চারাইজার, সিরাম এবং সানস্ক্রিন বেছে নিন।
এক্সফোলিয়েট করুন : ঘাম এবং তাপ ত্বকে মৃত কোষ বাড়ায়। এগুলো ত্বকের ছিদ্রগুলিকে আটকে রাখে। এ জন্য সপ্তাহে অন্তত একবার এক্সফোলিয়েট করুন। এর ফলে ত্বকের মৃত কোষগুলিকে সরে যাবে। ত্বক মসৃণ এবং উজ্জ্বল দেখাবে।
ব্রণ থেকে মুক্তি : ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে গ্রিন-টি আইস কিউব ব্যবহার করুন। অথবা গ্রিন-টি তৈরি করুন। এরসঙ্গে এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করুন। এবার এগুলো আইস কিউবে রাখুন। বরফ হয়ে গেলে মুখে ঘষুণ।
মাস্ক : গরমকালে তৈলাক্ত ত্বকে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এ জন্য মুলতানি মাটি বা চন্দনের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। এই মাস্কগুলো ব্রণ এড়াতে ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করে।এছাড়া শসার রস, গোলাপজল ও চন্দন মিশিয়ে মুখে ম্যাসাজ করে লাগাতে পারেন। মধু ও ঠান্ডা টক দইয়ের ফেসপ্যাক গরমের সময় ত্বকে বেশ আরাম দেয়। পাকা পেঁপে ও কলার ফেসপ্যাকও গরমে ত্বকে ভালো কাজ করে। রোদে পোড়াভাব দূর করে। ওটসের সঙ্গে বাদাম তেল মিশিয়েও ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। ওটস ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করবে। আর বাদাম শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি জোগাবে।
ঠোঁটের যত্ন : ঠোঁটকে সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করুন। ময়েশ্চারাইজড রাখুন। ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখতে এসপিএফ-১৫ বা তার বেশি যুক্ত লিপবাম লাগান।