আব্দুল কাদের, বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি ঃ নওগাঁ বদলগাছীর বদলগাছী ঐতিহাসিক পাহাড়পুর
বৌদ্ধাবিহার এবছর যেন মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। মাত্র কয়েক দিন আগেও গণনা করা যেত
ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব নির্দশন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের দশনার্থীর সংখ্যা। সেই প্রত্নতত্ত্ব
নির্দশন এখন লোকারণ্য। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই দলে-দলে ছুটছেন
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে। ঈদের দিন ও ঈদের দ্বিতীয় দিন শুক্রবারে বিকেলে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে
নানান বয়সী মানুষের ঢল দেখা গেছে। ঈদের তৃতীয় আজ শনিবার সকালেও মানুষের ঢল রয়েছে। এ যেন
মানুষের মেলা। নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো থাকায় দর্শনার্থীরা ঘুরতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন। নওগাঁ
জেলার মধ্যে পাহাড়পুরের অবস্থান হলেও জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে দুরত্ব অনেক কম। জয়পুরহাটে রেল
যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। একারণে বিভিন্ন স্থানের লোকজন রেলপথেও জয়পুরহাট এসে পাহাড়পুর
বৌদ্ধবিহারে যাচ্ছেন। এবার পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ
থাকায় যানজটও নেই। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ভেতরে বিভিন্ন পয়েন্টে টুরিস্ট পুলিশ ও আনসার
ব্যাটেলিয়নের সদস্যরা নিরিপত্তার কাজ করছেন। এতে দর্শনার্থীরা ভেতরে ঘুরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ
করছেন। এবার ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখের ছুটিতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে রের্কড পরিমাণ
দর্শনার্থী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে গিয়ে দেখা গেছে, দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। অনেকেই পরিবার পরিজন,
বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে পাহাড়পুর ঘুরতে এসেছেন। এদের কেউ গ্রুপ ছবি কেউবা সেলফি তুলছেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মতো। দর্শনার্থীরা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে চতুরদিক ঘুরে ঈদের
আনন্দ উপভোগ করছিলেন। আবার কেউ ভেতর দল বেঁধে নিজের গল্প-আড্ডায় মেতে উঠছেন। চারিদিকে
মানুষ-আর মানুষ। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ঈদের ছুটিতে যেন মানুষের মেলায় পরিনিত হয়েছে। বাস –
ট্রাক মাইক্রোবাস-ইজিবাইক ভুটভুটি নিয়ে দর্শনার্থীরা আসছেন। অনেকে যানবাহনের মাইক
লাগানো হয়েছে। এসব মাইকে উচ্চ শব্দে গান বাজচ্ছিল। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ভেতরে দর্শনার্থী
ঢোকার দুটি ফটক রয়েছে। জাদুঘর সংলগ্ন পূর্বদিকে ফটকটি এক নম্বর ও বাজার থেকে আসার
উত্তর দিকে ফটকটি দুই নম্বর ফটক। ভিড়াভিড়ি এড়াতে দুটি ফটকেই বাঁশ দিয়ে নারী-পুরুষের জন্য
আলাদা লাইন করা হয়েছে। দুটি ফটকের কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে
ভেতরে ঢুকছেন।
রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন শফিকুর রহমান। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি
কোম্পানীর পদস্থ কর্মকর্তা। পরিবার নিয়ে ঢাকার মগবাজার এলাকার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন।
শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের পুঠিয়ায় দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তাছাড়া রাজশাহী বিভাগীয় শহরেরও
অনেক ঘোরাঘুরির স্থান রয়েছে। বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় এসব দর্শনীয় স্থানগুলো অনেক বার যাওয়া
হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের কথা দিয়েছিলাম এবার গ্রামের বাড়িতে গেলে দূরে কোথাও ঈদের দ্বিতীয়
দিন বেড়াতে যাব। পরিবারের সবাই পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বেড়াতে যাওয়ার সায় দিয়েছিলেন ঈদের
আনন্দকে উপভোগ করতে এবং খানিকটা স্বস্তি পেতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এসেছি। পাহাড়পুর
বৌদ্ধবিহারের পরিবেশ আমাদের খুব ভালো লেগেছে।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা ফারাহ হোসাইন বলেন, আমি ঢাকায় চাকুরি। আমার
পরিবার গ্রামের বাড়িতে থাকে। কয়েক মাস আগে ছুটি যখন বাড়িতে এসেছিলাম। তখন আমার
পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলেটি পাহাড়পুর জাদুঘর দেখার বায়না ধরেছিল। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে
ছেলেকে পাহাড়পুর জাদুঘর দেখাতে নিয়ে যাব বলে কথা দিয়েছিলাম। একারণে শুধু ছেলেকে সঙ্গে
নিয়ে শুক্রবার সকালে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে এসেছি। বৌদ্ধবিহারের আকর্ষণ মুল মন্দির ও জাদুঘর
দেখিয়েছি। জাদুঘরের সামনে ছেলে ছবিও তুলছে। বৌদ্ধবিহারের ভেতরে ক্যান্টিনে দুপুরে ছেলেকে
বিরানী খাইয়েছি। এবার ঈদে আমার ছেলে খুব আনন্দ পেয়েছে। একারণে বাবা হিসেবে আমাকেও
খুব ভালো লেগেছে। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, আমরা ছয় জন বন্ধু
ইজিবাইক নিয়ে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে এসেছি। জয়পুরহাট থেকে পাহাড়পুরের দূরত্ব খুবই কম।
আবার যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে এসে আমরা সবাই খুবই আনন্দ
পেয়েছি।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার কাস্টেডিয়ানের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে
১২ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। এবার টিকিটের মূল্যে দশ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা
হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিট নেই। এবার ঈদের দিনে ২০ হাজার টিকিট
বিক্রি হয়েছে। ঈদের দিনে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মিলে ২৫ হাজার দর্শনার্থী ছাড়িয়ে
যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পরও ঈদের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার দর্শনার্থী একটু কম হয়েছে। তবে
রাজস্ব আয় গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি আসবে। ঈদে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে যানবাহনের চাপ
থাকত। একারণে আগে থেকে পাহাড়পুর এলাকা যানজটমুক্ত রাখার কথা নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ
সুপার জানানো হয়েছিল। তাঁরা ঈদে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাফিক
পুলিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঈদের থেকেই পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে ট্রাফিক পুলিশ দেওয়া হয়। এতে
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এলাকায় আগের ঈদের মতো আর যানজট নেই। দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার দর্শন করছেন।
পাহাড়পুর জাদুঘরের কাস্টেডিয়ান ফজলুল করিম বলেন, ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে
দর্শনার্থীরা আসছেন। ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকায় এবার সড়কে যানজট হয়নি । ঈদের দিন সব মিলিয়ে
২৫ হাজার দর্শনার্থী ছাড়িয়ে যাবে। শুক্রবারে দর্শনার্থী একটু কম হয়েছে। তারপরও দর্শনার্থী প্রথম
দিনের প্রায় কাছাকাছি ছিল। এবার ঈদ ও পয়লা বৈশাখের ছুটিতে রের্কড পরিমাণ দর্শনার্থী
আসবে বলে আশা করছি। টুরিস্ট পুলিশের নওগাঁ জোনের পরির্দশক কিরণ কুমার রায় বলেন, পবিত্র ঈদুল
ফিতর থেকে পয়লা বৈশাখ পর্যন্ত ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে আগত পর্যটকরা যাহাতে
নির্বিঘ্নে ভ্রমন করতে পারে সেজন্য টুরিস্ট পুলিশ নওগাঁ জোনের পক্ষ থেকে সাদা পোশাকে ও
পোশাকে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের পরিবেশ খুবই
ভালো রয়েছে বলে তিনি জানান।