ক্রমান্বিত অধরার ধারায় চির চেনা মেঘেরও প্রস্থান ঘটবে আর সেদিন নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাবে আমার বিমুর্ষ সহৃদয়।

মোহাম্মদ সোহেল (টাঙ্গাইল)
ছুঁয়ে দেখার উদ্দীপনায় অনুভবের গ্রহনতা গুলো দল মেলে উঠেছে , পুরনো দিন গুলো হাড়িয়ে গেলেও কোনো এক জনের খোচা মারা কথায় মনে করিয়ে দিল পুরানো দিনের কিছু কথা। ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ইং বিকেলের অস্তরাগে ব্যস্ত ঢাকার রাজপথ। হাজার মানুষের স্রোত ঠেলে আমার শরীর থেকে বিবর্ণ ঘাম বিন্দু শরীর থেকে গন্ধ ছরাচ্ছে। আধুনিকতার আলোয় উদ্ভাসিত  ঐতিহ্যের গর্বে রাঙানো তিলোত্তমা শহরে দৈনন্দিন সংগ্রামে ক্লান্তিকর অনুবর্তনের পূর্ণতার আশায় দৈনন্দিন সংগ্রাম থেকে মনটা পালানোর জন্য ছোট পট করলেও করার কিছু থাকেনা। টানা দুই সপ্তাহের চেষ্টায় অবশেষে দেখা হলো প্রকাশক হেলাল সাহেবের সাথে। নিল খেত থেকে মহাখালি  আসা-যাওয়ার ৪ঘন্টার অসস্থি কাটাতে ডায়েরির সামনে বসলাম। স্মৃতি গুলো ডাইরিতে লিপিবদ্ধ করে রক্ষণাবেক্ষণ করে যুগোপযোগী করে তুলতে নয়, স্মৃতিটুকু থাক, এই ভাবনায় লিখনীতে রেখে দেওয়ার জন্য।  নীলক্ষেত লাইভ পাবলিশার্সের প্রকাশক হেলাল সাহেবের সাথে মন কালা কালির ঘটনা বলতে গেলে শিউরে উঠে দেহ। ইনভেস্ট ছাড়া লেখা প্রকাশ হবে না। প্রকাশকের এমন কথায় সর্বাঙ্গ কম্পন ধরিয়ে দিল। এতক্ষণে অনেকটা কষ্টে নিজের অনুভূতিকে আটকে রেখেছি। আক্কাস নামের সহকর্মী পাশে বসে আছে, বুঝতে পারছে বিষয়টা। হঠাৎ করেই বেজে উঠলো ফোন। ফোনটা আক্কাসের হাতে দিয়ে বললাম – কথা বলেন আপনার গুণধর  শ্যালক প্রকাশক সাহেব ফোন দিয়েছেন। হেলাল সাহেবের কথা কাজের মিল না-থাকায়, আক্কাস ফোনটা ধরে কয়েক ঝাঁপটা মেরে দিল। – লেখার মান ভালো টাকা লাগবে না; এখন আবার টাকা চেয়েছো কেন? বসে টাকা দিয়ে বই ছাপাবেনা বলে ফোন কেটে দিল। রাতে আবার হেলাল সাহেব ফোন দিয়েছে আক্কাসকে পান্ডুলিপি গুলো প্রকাশনায় দিয়ে আসতে। আক্কাস সাহেব পান্ডুলিপি গুলো দিয়ে আসার কয়েকদিন পরে ৫০টি বই নিয়ে আসছে। কিন্তু ভেঙে যাওয়া মন লেখায় বসলো না কোনমতে। শিক্ষা নিলাম আমার মত ছোট মানুষের শুরুতে ইনভেস্ট ছাড়া হবে না। মনের সাথে বোঝাপড়ার যুদ্ধে হেরে গেলে হবে না। পথ পরিবর্তন করতে হবে। আর বর্তমানে মানুষ যেভাবে ইন্টারনেট-স্যাটেলাইট এর দিকে ঝুঁকে পড়ছে  তাতে ডিজিটাল এই ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অধিকাংশ মানুষই উপধাপিত হচ্ছে। সেখান থেকেই প্রচন্ড চেষ্টা ছিল ভার্চুয়ালি কিছু একটা করার। গতিপথ পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজের কর্মে অধিকতর মনোনিবেশে সাজসন্দে ভালই কাটছে দিন। সেই সময় আরেকটি জিনিস উপলব্ধি করেছি, সহপাঠী বড় বড় ডিগ্রিধারী বন্ধুরা হিংসায় জ্বলে কেউ কেউ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। সমালোচনাও চলছে ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসে থাকা ব্যক্তির আবার কবিতা লেখা। আক্কাস সাহেব মাঝে মাঝে বলতো লেখা থামিয়ে দিলেন? কিভাবে বোঝাবো তাকে ? জীবনে যা কিছু পেয়েছি কঠোর পরিশ্রম করেই পেয়েছি, কারো দান দক্ষিণা থেকে তিল পরিমানও পাইনি। যাদের কাছ থেকে কোন কিছু পাবার আশা করেছি তারাই পিছন থেকে টেনে ধরেছে থামিয়ে দেওয়ার জন্য, সর্বাত্মক চেষ্টায় ছায়ার মত লেগে থেকেছে। যজ্ঞের আগুন থেকে জেগে ওঠা ফিনিক্স পাখি এমন হয় কিনা যানা নেই। কিন্তু উপলব্ধি করতে পেরেছি হারে হারে। ধৈর্যকে অস্ত্র বানিয়ে কঠোর পরিশ্রমকে সঙ্গী বানিয়ে সফলতার ডালে বসার উদ্দেশ্যর পথে আল্লাহ ছারা কেও সঙ্গী নেই। তবে মহাখালীর আমতলীর কামরুল সাহেবের কথা কোনদিনও ভুলবো না। সেই সময় প্রচন্ড উৎসাহ প্রদান করেছে লেখা যেন কোন কিছুতেই থেমে না যায়। রাত দিন মিলে প্রায় চার ঘন্টা পাঁচ ঘন্টা সময় কেটেছে তার সামনে বসে থেকে। ভুলে যাওয়া অবিচ্ছেদ্য স্মৃতির মধ্যে লুকিয়ে আছে কত গল্প , কত কথা, কত  দীর্ঘশ্বাস, কত অশ্রুজলের কাহিনি। ছোট বেলায় প্রাইমারি স্কুলে যেতে বই এর বোঝা মাথায় নিয়ে গামছা পড়ে খাল পাড়ি দিতে স্রোতের পাকে গামছা হারিয়ে পারে না উঠতে পারার কষ্টগুলো আনন্দের ছিল। কারণ একটা সময় সহপাঠী বন্ধুরা হাসি তামাশা শেষ করে তারা পার হয়ে ঠিকই তাদের একটি গামছা আমাকে দিত। কিন্তু বর্তমানে যাকে বন্ধু ভাবি সে সুযোগ পেলে মাজার বেল খুলে নেওয়ার পরিস্থিতি করে। শত্রু গুলো বন্ধু হয়ে মিশে থাকে এটা আমার একটি নতুন উপলব্ধি। কেন জানি পুরনো কথাগুলো ঘুন পোকার মত ভেতরটা কামড়িয়ে কামড়িয়ে খাচ্ছে। বর্তমান আধুনিকতার যূপকাষ্ঠে হারিয়ে গেছে কত কিছু। আমার নামের নামে ঢাকার মহাখালী রেল ক্রসিংর সোহেল নাপিত কে দিয়ে পাঁচ বছর চুল দাড়ি কাটিয়েছি। মাঝেমধ্যেই নাপিত বেচারা কে একই প্রশ্ন করতাম নামটা কে রেখেছে?। চুল দাড়ি বড় হলেই সহকর্মী জামালপুরের শান্ত, ময়মনসিং এর আক্কাস
মাঝেমধ্যে তামাশা করতো। সেদিন হয়তো ওদেরকে বুঝাতে পেরেছিলাম নাপিত ধোপারা না থাকলে শহরে আমাদের পরিস্থিতি কি হতো। আর নামের মিল আর গরমিল নিয়ে বিভ্রান্তি! এটা নিহাতই খামখেয়ালি ছাড়া কিছু না।
শিক্ষার বড় বড় ডিগ্রি ধারণ করেও মূর্খ এমপি মন্ত্রীকে স্যার বলাটা বাঞ্জনীয় কিনা জানিনা। কিন্তু ব্যস্তানুপাতিক এ ঘটনা নিয়ে কারও মাথা ব্যাথা নেই। যেখানে মূর্খ ইউপি চেয়ারম্যান কে চেয়ারম্যান সাহেব অথবা চেয়ারম্যান স্যার বলে সম্মোধন করা হয়, সে খানে কি মন্তব্য করবো?। কবিতার ভাষায় দুই লাইন উচিৎ কথা লিখলেই কয় সোহেল ভিন্নখা। আমি তো ভিন্নই চলি। কেউ কেউ ভিন্ন নাথাকার অভিনয়টা মনমুগ্ধকর ডিসপ্লে প্রদশ করে। বাস্তবতার নিরিখে খুঁজলে উল্টা। দামি রেস্টুরেন্টে আবার পার্কে হাফ প্যান্ট পড়ে ঘুরলে অভিজাত্যের জৌলুস বাড়ে ।
লুঙ্গি পরে গেলে গেও খেত ভেবে কোথায় কোথায় প্রবেশ মিলেনা। বয়সের ভারে সুভ্রতা ছরালেও যৌবনের কোলাহলে মহাসঙ্গের পদাঘাতে পাথর বাধা নোয়ায়নী কখনোই। বর্তমানে চেতনার পথ জুড়ে শুয়ে থকা শিশু আসিয়ার ধর্ষিত মৃতদেহ থেকে  উপলব্ধি করা যায় নির্লজ্জ ধর্ষকের দুরাত্মা থামছেনা দেখে যারা প্রতিবাদ করে না তাদের থেকে ভিন্ন থাকাটাই আমার স্বার্থকতা। বর্ধিষ্ণু জনপদে নয়তবা অন্ধকারাচ্ছন্ন ডোবায় পরে থাকা ধর্ষিতার লাশে ক্রমশই ভারি হয়ে আসা দিন গুলো যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন। রক্তঝরা মৃত্যুর বিস্ময়কর ভয়ের ভার কত টুকু, শিশু আসিয়ার মত করে সমবেদনাকারীরা বুঝতে পারলে সংস্কার সংস্কার বলে সময় পার করতেন না। চারি পাশে এত খুন ছিনতাই আর রাহাজানিতে নিষ্পেষিত মানুষের কলঙ্কের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে উর্ধআসনে নীতি বাক্য খুবই বেমানান। বর্তমানে শহরের ফুট পাত থেকে শুরু করে গ্রামের প্রান্তিক কৃষকের মাঠের ফসল লুট পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে। প্রতি দিন ভুট্টা খেত থেকে, জঙ্গল থেকে, ডোবাই থেকে ধর্ষিতার লাশ উদ্ধার সংবাদপত্র গুলো ফলাও করে শুধু ছেপেই যাচ্ছে। ভার্চুয়ালে মেয়েদের নির্যাতনের গনগনে আর্তনাদ আর ক্যামেরার ফ্লাশ দেখে বুদ্ধিজীবীদের চোখও কপালে উঠে গিয়েছে। আকাশের চাঁদ নাকি সকলেই দেখে, দেখেনা শুধু ক্ষমতার রাজ আসনে বসে থাকা চকচকে হীরার খোলস পরা ব্যক্তিরা। বউ এর কামাই খাওয়া পুরুষ গুলো যেমন স্ত্রীর পাঠশালায় দুই কান খাড়া করে শ্রবণ করে, নিজের বাবা মা কে বাদ  দিয়ে শশুর মহাশয় কে বাপ ডকা মানুষ গুলো যখন চাটুউক্তির কথা ঝারতে থাকে, আঙুল নারানো দেখে বুঝতে পারি বউয়ের দাদা গিরি কপি করে আমার উপর প্রয়গ করার চেষ্টা করছে। মিস্ট্রি হেসে না বুঝার মুগ্ধ করা অভিনয়টা শেষ করে প্রভাব পড়তে পারে ভেবে কেটে পরলেও তাদের থেকে আমি ভিন্ন থাকি। হঠাৎ সেদিন দেখা হলো এক ভদ্রলোকের সাথে। নামে মিলের সমস্যাটা নিয়ে আমিও যে বিপাকে পড়েছি বুঝাতে পারিনি। ছোটবেলায় বাবা-মার দেওয়া আমার প্রিয় নামটা চাইলেই যে পরিবর্তন করা যায় না সেটা কিভাবে বুঝাব?। আর যাই হোক আমার নামটা  কে আমি খুব ভালোবাসি। মিল গরমিল নিয়ে অভিযোগ হয়তো শিশু কালের রোস্তম চকলেট গুনে গুনে ভাগ করা শেষে লাল নীল নিয়ে কান্না করার মত হবে। এ বিষয় নিয়ে আমি আর আলোচনা বাড়াতে চাই না। তবে কেউ বিপাকে পড়লে নিজ মহত্ব দিয়ে বিষয়টা সমাধানের চেষ্টা রাখবেন। আমার ধারনা এই নিয়ে বিভেদ তৈরি করা নিজের কর্মদক্ষতার দুর্বলতা প্রকাশ করা, আর নিজের সাথে নিজের কর্ম দক্ষতার বিশ্বাসঘাতকতা করা। সমতা ও শান্তির পবিত্র বিশ্বাস নিয়ে ষড়ঋতুর বাইরেও নাম পরিচয়হীন ঋতুর অনুভবতার প্রফুল্লচিত্তে আমি মত্ত সর্বদা। এসব নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করার ব্যক্তি আমি অবশ্যই নই। কোথায় আছে ডাল নেই তরোয়াল নেই নিধিরাম সরদার। এই নিধিরাম সর্দারের খোলসপাড়া ব্যক্তিদের নেয়-নীতির দুই লাইন লিখন তো দূরের কথা, তারা চাটুকারিতার তেল মালিশ করে অনেকটাই এগিয়ে। তাদের নিয়ে কারো কোন সমালোচনা নেই। তবে সহিষ্ণুতার ভয়ে নিজেকে সংকুচিত করে রাখার চেষ্টা করি সর্বদা। আমি জানি ক্রমান্বিত অধরার ধারায় চির চেনা মেঘেরও প্রস্থান ঘটবে আর সেদিন  নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাবে আমার বিমুর্ষ সহৃদয়।
Exit mobile version