গতিহীন মেগা প্রকল্প

ঢিমেতালে চলছে সরকারের সাত অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বা মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজ। এক যুগ অতিক্রম করে রেকর্ড সৃষ্টি করেও দোহাজারী থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণের অগ্রগতি মাত্র ৮০ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ ব্যয়ের রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি সাড়ে ৬ বছরে মাত্র ৫৫ শতাংশ, সাত বছরের বেশি সময়ে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ মাত্র ৭০.৫০ শতাংশ এবং সাড়ে ৭ বছরের বেশি সময় অতিক্রম করলেও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৮৯.১১ শতাংশ। পদ্মা সেতু বাদে ফাষ্ট ট্রাকের সাত প্রকল্পে গত জানুয়ারী পর্যন্ত খরচ হয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৪৯০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এই প্রকল্পগুলোর জন্য অনুমোদিত খরচ হলো তিন লাখ ৬ হাজার ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা বলে ফাষ্ট ট্র্যাকের রিপোর্টের তথ্য থেকে জানা গেছে।

ফাষ্টট্র্যাক প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতির তথ্য থেকে জানা গেছে, রাশিয়া থেকে নেয়া ঋণে সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ জানুয়ারী পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৫৫ শতাংশ। ২০১৬ সালের জুলাইতে শুরু হওয়া প্রকল্পটির এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫২ দশমিক ৭৯ শতাংশ বা ৫৯ হাজার ৭০০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এখানে রাশিয়ার ঋণ হলো ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে প্রকল্পটির জন্য ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত করা কথা।

রয়েছে মহেশখালীর-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম। এখানে ১২শ’ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পসহ মোট ১২টি প্রকল্প। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পে মোট খরচ ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। জানুয়ারী পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হলো ৭২.২৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত অর্থ ব্যয় হয়েছে ৫৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ ২৯ হাজার ৯৫৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ রয়েছে ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে এখন আগামী ২০২৬ সালে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা।

স্বপ্নের পদ্মা বহুমূখী সেতুতে রেল সংযোগ সংযোগের জন্য নেয়া প্রকল্পটি কাজ হয়েছে জানুয়ারী পর্যন্ত মাত্র ৭০.৫০ শতাংশ। বাস্তব কাজের অগ্রগতিতে খরচ হয়েছে ৬৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বা ২৬ হাজার ৩৯৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণসহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনুমোদিত খরচ হলো ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করে রেল চলাচল শূরু করার কথা। ২০১৬ সালের জানুয়ারীতে প্রকল্পটি কাজ শুরু হয়।

আর দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন রেলের ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটির এক যুগের বেশি সময়ে অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। জানুয়ারী পর্যন্ত সোয়া এক যুগের বেশি সময়ে ৪১ দশমিক ০৪ শতাংশ অর্থ অর্থাৎ ৭ হাজার ৪০২ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে। প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিদেশী ঋণ ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২০১০ সালের জুনে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে এখন আগামী ২০২৪ সালের জুনে সমাপ্ত করার কথা।

যোগাযোগ খাতের আধুনিক ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের বা মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের অগ্রগতি ৭১ শতাংশ। তবে অর্থ ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ২১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৬৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরে বাড়িয়ে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা করা হয়েছে। বিদেশী ঋণ হলো ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১২ সালের জুলাইতে অনুমোদন নিয়ে শুরু করে। প্রকল্পের কাজ অনেকটা দৃশ্যমান। আর দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাও পর্যন্ত রেললাইন চলমান আছে। প্রতিদিনই যাত্রীরা এই অংশের সুফল পাচ্ছে। আগামী ২০২৪ সালের জুনে সমাপ্ত করার কথা।

দেশের অন্যতম তৃতীয় গভীর সমুদ্র বন্দর পায়রা বন্দরের ভৌত কাজ জানুয়ারী পর্যন্ত হয়েছে ৮৯.১১ শতাংশ। ২০১৫ সালের জুলাইতে আরম্ভ হওয়া এই প্রকল্পটি গত ২০২২ সালের জুনে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময় বাড়িয়ে এটাকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। জানুয়ারী পর্যন্ত প্রকল্পের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬০১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৮২.৩৩ শতাংশ। প্রকল্প খরচের চার হাজার ৩৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা পুরোটাই সরকারী অর্থায়ন।

এদিকে এডিপিভুক্ত নয় তবে ফাষ্ট ট্র্র্যাকের তালিকার আরেকটি প্রকল্প রামপালে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের ভৌত কাজের অগ্রগতি জানুয়ারী পর্যন্ত ৯০.৪৫ শতাংশ। আর আর্থিক অগ্রগতি ৮২.৬৬ শতাংশ। প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ২২৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় বাগেরহাটের রামপালে একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

Exit mobile version