চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও আজকাল চিকিৎসা নিয়ে চলছে বহুবিধ প্রতারণা। রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। গত ৩১ জুলাই আমার বোনের নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল। আমরা তাকে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওখানে যাওয়ার পর আবার কিছু টেস্ট দেয়া হয়, সেগুলো করাই। তারপর আমার বোন ব্যথায় চিৎকার করতে থাকে। তখন অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর ডাক্তারকে পেলাম; কিন্তু দুঃখের বিষয় ডাক্তার আমার বোনকে মনোযোগ দিয়ে দেখলেন না। আমার বোনের অবস্থা খারাপ দেখে ডাক্তারকে বললাম, আপনারা সিজার করেন। তারা বললেন, সকাল না হলে আমরা সিজার করতে পারব না।
তারপর সারারাত এভাবে চলতে থাকে; আর তখন দেখা যায়, ডাক্তাররা মোবাইল ফোনে কথা বলে বা ফেসবুকে চ্যাটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এরপর হঠাৎ আমার বোনের প্রসব যন্ত্রণা আরও বাড়ে, তখন বাচ্চাটা অর্ধেক বের হয়ে আটকে থাকে। তারা জোরপূর্বক বাচ্চার বাকি অর্ধেক টান দিয়ে বের করে আনেন। এতে আমার বোনের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। কিছুতেই রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পারায় ডাক্তাররা বলেন, রোগীকে তিনতলায় আইসিইউতে নিয়ে যেতে হবে; তারপর আমার বোনকে তিনতলায় এনে অনেকক্ষণ রাখার পর আমাদের বলা হয়, ওখানে আইসিইউ নেই। আপনারা অন্য কোথাও নিয়ে যান।
অথচ তাদের ওখানে আইসিইউ আছে। ব্লাড ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন। ওয়ার্ডের একজন লোক এসে ব্লাড ব্যাংকের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে কী যেন আলোচনা করলেন, তারপর তারাও আমাদের বিভিন্ন রকম হয়রানি করে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর ব্লাড দিলেন। এভাবে আমাদের সারারাত হয়রানি করা হয়। একপর্যায়ে আমাদের রিলিজ দেয়া হলে আমরা আইসিইউর খোঁজে অন্য হাসপাতালে যেতে যেতে আমার বোনটি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে মারা যায়।
অশিক্ষিত ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসার জন্য আমার বোনটি মারা গেল। ডাক্তারদের অবহেলার কারণে প্রতিদিন হাসপাতালে অনেক রোগী মারা যাচ্ছে। তাছাড়া হাসপাতালের ভেতরে ডাক্তার সেজে প্রচুর দালাল ঘোরাঘুরি করে। সরকার যতদিন ওইসব ডাক্তার নামের কসাইদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেবে, ততদিন হাসপাতালগুলোয় ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাবে না। এভাবে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করে মানুষকে যারা মৃত্যুর পথে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।