ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ওয়াজিব। জামাতে নামাজ মানুষকে ফুরফুরে রাখে। অন্তর সতেজ করে তোলে। জীবনে পরিশুদ্ধ ও পবিত্রতার ঢল নামে। জামাতের নামাজে প্রাণ খুঁজে পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, ‘রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা: বাকারা, আয়াত: ৪৩)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘আজান দেয়া এবং প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে যে কী মর্যাদা আছে তা যদি মানুষ জানতে পারত, তাহলে তা পাওয়ার জন্য তারা প্রয়োজনবোধে লটারি করত। দুপুরের নামাজের যে মর্যাদা আছে তা যদি তারা জানতে পারত, তাহলে তারা এটা লাভ করার জন্য প্রতিযোগিতায় লেগে যেত। এশা ও ফজরের নামাজের মধ্যে যে (তাদের জন্য) কী মর্যাদা রয়েছে, তা যদি জানতে পারত, তাহলে তারা হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও এসে নামাজে উপস্থিত হতো।’ (মুসলিম: ৮৬৭)
চারদিকে শত্রু। যুদ্ধ চলছে। তুমুল সংঘর্ষ হচ্ছে। সুযোগ পেলেই জীবন নাশ। মাথার ওপরে শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান উড়ছে। এমন সময়ও যদি জামাতের সময় হয়ে যায়, জামাতে নামাজ আদায় করতে হবে। এমন সময়ে নামাজের পদ্ধতির কথা আল্লাহ বলে দিয়েছেন। ‘এবং (হে নবী,) আপনি যখন তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকেন ও তাদের নামাজ পড়ান, তখন (শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলার সময় তার নিয়ম এই যে) মুসলিমদের একটি দল আপনার সঙ্গে দাঁড়াবে এবং নিজেদের অস্ত্র সঙ্গে রাখবে।
অতঃপর তারা যখন সেজদা করে নেবে, তখন তারা তোমাদের পেছনে চলে যাবে এবং অন্য দল, যারা এখনো নামাজ পড়েনি, সামনে এসে যাবে এবং তারা আপনার সঙ্গে নামাজ পড়বে। তারাও নিজেদের আত্মরক্ষার উপকরণ ও অস্ত্র সঙ্গে রাখবে।’ (সুরা: নিসা, আয়াত: ১০২)
জামাতে নামাজ আদায় করা মুমিনের স্বভাব। জামাতে নামাজ আদায় করা একাকী নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। বহু সওয়াবের কারণ। এর সওয়াব সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার।’ (বুখারি: ৬৪৫)
রাসুল (সা.) জামাতে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে বিভিন্ন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এক হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনল এবং তার কোনো অপারগতা না থাকা সত্ত্বেও জামাতে উপস্থিত হলো না, তার সালাত হবে না।’ (ইবনে মাজাহ: ৭৯৩)
রাসুল (সা.) জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তির ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি জারি করেছেন। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন।
হাদিসে বিধৃত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার প্রাণ যাঁর হাতে, তাঁর কসম করে বলছি! অবশ্যই আমি সংকল্প করেছি, আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেব, তারপর আমি নামাজের হুকুম দেব এবং এ জন্য আজান দেয়া হবে, তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করব সে লোকদের নামাজ পড়াবে। এরপর আমি ওই লোকদের দিকে যাব, যারা জামাতে হাজির হয়নি। এবং তাদের বাড়িঘর তাদের সামনেই জ্বালিয়ে দেব।’ (সহিহ বুখারি : ২৪২০)
বিশেষ অপরাগতার কারণে জামাত ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি, ঘর থেকে বের হলে, অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা, রাস্তায় বেশি কাদা ও অতি অন্ধকার থাকলে, অন্ধ ব্যক্তি, শত্রুর ভয়, বন্দি ব্যক্তি প্রমুখের জন্য জামাতে নামাজ না পড়ার অনুমতি আছে।
আল্লাহ তায়ালা মুমিন মুসলমানের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ- ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব, এশা, জুমা, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার নামাজ জামাতে পড়াকে আবশ্যক করেছেন। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জামাতে নামাজ আদায় করা। কোরআন-সুন্নাহর তাগিদ মেনে এবং ঘোষিত ফজিলতগুলো পাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।