রাজনৈতিক বিশ্লেষক:
নারায়ণগঞ্জের শহর কেন্দ্রিক বিএনপিতে আবারো শুরু হয়েছে ঘায়েলের রাজনীতি। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করে কিংবা ল্যাং মেরে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যার একদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সদ্য গঠিত কমিটির আহবায়ক এ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব টিপু অন্যদিকে মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহবায়ক আবুল কাউছার আশা। এতোদিন বিবদমান এ দু’পক্ষের বিরোধ গোপন থাকলেও আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর হতে তা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। দু’পক্ষের বিরোধই এখন মারমুখী পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। মূলতঃ তিনগাও এলাকার কথিত সাখাওয়াত পন্থী বিএনপি নেতা সুজন কর্তৃক নিরীহ ব্যবসায়ী নূর হোসেনের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি থেকেই বিরোধের সূত্রপাত। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর নবীগঞ্জের কামালউদ্দিন মোড়ে মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবু আল ইউসূফ খান টিপুর উপর হামলার ঘটনাটি দু’পক্ষের বিরোধ অগ্নিরূপ ধারণ করে। টিপুর উপর হামলার ঘটনা আতাউর রহমান মুকুল ও তার ভাতিজা আশার নেতৃত্বে ঘটানো হয়েছে বলে একটি মামলাও দায়ের হয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ক্লিপে টিপুর উপর হামলার ঘটনায় আতাউর রহমান মুকুল ও আবুল কাউছার আশাতো দূরের কথা সৌরভকেও দেখা যায়নি। এসব ঘটনাকে ঘিরেই বোদ্ধা মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই মতে,নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে যা শুরু হয়েছে তা কেবলই কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি। এই কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়িতে কার লাভ কার ক্ষতি? এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মাঝে। বিশ্লেষকদের মতামতে উঠে এসেছে আরো নানা তথ্য-উপাত্ত। দু’পক্ষের বিরোধের কারণে দ্বিধা-দ্ব›েদ্ধ ভুগছে তৃনমূল নেতৃবৃন্দ। তাদের অবস্থা যেন অনেকটা মরিচের মতো। আঞ্চলিকতার প্রবাদে রয়েছে পাতা-পুতার ঘষাঘষি মরিচের জান শেষ। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র জনৈক কর্মী জানান,আমরা ৩৫বছর ধরে রাজনীতি করছি। জালাল হাজী পরিবার আর কমান্ডার সিরাজুল ইসলামের পরিবার ব্যতিত আর কাউকে দেখিনি। বিএনপি’র রাজনীতিতে জালাল হাজী এবং কমান্ডার সিরাজুল ইসলামের যে অবদান তা কোনদিনই শোধ করার নয়। যতদূর জানি জালাল হাজী সাহেবই সর্বপ্রথম বিএনপির কমিটি গঠন করেন। আর জালাল হাজী সাহেব নিজে এমপি হয়েছেন,তার ছেলে কালাম সাহেব একাধিকবার এমপি হয়েছেন,তার ছোট ভাই মুকুল সাহেবও পর পর দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন, সর্বশেষ জালাল হাজী সাহেবের নাতি আবুল কাউছার আশাও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়েছেন। এছাড়া কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম নিজে এমপি ছিলেন তার ভাই আজহার হোসেন সে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার ছিলেন। এগুলো সব দালিলিক কথা। এই দুই পরিবার ছাড়া বিএনপি’র আর কোন পরিবারের এমন খতিয়ান আমার চোখে পড়েনা। মুসাপুর ইউনিয়নের জনৈক বিএনপি নেতা একই শর্তে জানান,শুধু মুখে বড় বড় কথা বললে চলবেনা। আমরা প্রমানে বিশ্বাসী। আতাউর রহমান মুকুল এবং আবুল কাউছার আশাকে আওয়ামীলীগের দালাল বা ওসমান পরিবারের লোক বলা হয় কোন প্রমাণের ভিত্তিতে। যারা এদেরকে নিয়ে সমালোচনা করেন তারা হরিণী চালাক। আমি মনে করি তাদের বুদ্ধির ঘাটতি আছে। আরে ভাই মুকুল আর আশা সাহেবতো কোন দলে যোগ দেননি। আর টিপু সাহেবতে ২০২৩সালে ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদার বিএনএফ দলে যোগ দিয়েছেন স্ব-দলবলে। যার মধ্যে মাসুকুল ইসলাম রাজিব,রহিমা শরীফ মায়া এবং আনোয়ার প্রধানের নামও রয়েছে। এর আগেও টিপুর বিরুদ্ধে পদ বানিজ্যের অভিযোগও রয়েছে বিস্তর। আর দরবেশ খ্যাত শাহেনশাহকেতো মিডিয়াতেই দেখেছেন একজন এমপির উপস্থিতিতে সে সরাসরি বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছেন। মুকুল সাহেব কবে কখন কোথায় কোন দলে যোগ দিয়েছেন এমন একটা প্রমাণ দেখান। হ্যা বলতে পারেন নবীগঞ্জের দু’একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন এমপি সেলিম ওসমান তাদেরকে দাওয়াত করেছেন তারা গিয়েছেন। কেন গিয়েছেন সেটাওতো জানা দরকার? প্রথমতঃ নবীগঞ্জের সিরাজউদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল রয়েছে সেটার প্রতিষ্ঠাতা এই জালাল হাজী পরিবার। সেখানে কোন অনুষ্ঠান হলে দাতা হিসেবে তারাতো দাওয়াত পাবেনই। তারপর নবীগঞ্জ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ সেটারও সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল যেখানে উনি ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সেখানে উনি না থেকে কি অন্য কেউ থাকবে। এরপর নবীগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসা এটাতো তাদের নিজ মহল্লার মাদ্রাসা। মাদ্রাসার উন্নয়নে তারা সব সময় এগিয়ে আসেন দাতা হিসেবে তারাতো থাকতেই পারেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ইস্যূ দাড় করানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। বরং কোন রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে ছিলেন কি না অথবা কোন দলে যোগ দিয়েছিলেন কি না সেটা দেখার বিষয়। বন্দর ইউনিয়ন বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা জনৈক নেতা একই শর্তে জানান,সিএস,আর এস-এ দেখুন জালাল হাজী পরিবার বানের পানিতে ভেসে আসা উচ্ছিষ্ট কোন শ্যাওলা নয়। সাখাওয়াত হোসেন আর টিপু তাদের সিএস আর এস দেখুন। সাখাওয়াত হোসেন এসেছেন সুদূর মুন্সিগঞ্জ থেকে আর টিপু চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থেকে। যতদূর জানি,সাখাওয়াত রাজনীতিতে এসেছেন সর্বসাকুল্যে ১০ থেকে ১৫ বছর। বিগত বারের আগের নির্বাচনে সাখাওয়াত হোসেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম ওসমানের কাছ থেকে কোটি টাকা নিয়েছেন বলে এরূপ একটি সংবাদ সেসময়কার পত্রিকাগুলোতে শিরোনাম হয়েছিল। আর টিপুরতো রাজনীতির শেষ নেই। কখনো মজদুর ইউনিয়ন,কখনো বিএনপি কখনো বা আবার বিএনএফ। মাত্র ১০-১৫ বছরের রাজনীতিতে এসে সাখাওয়াত বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতাদের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস পান কোথা থেকে তা আমাদের বোধগম্য নয়। ২০২৩ সালের ৮ আগষ্ট দৈনিক যুগের চিন্তায় সাখাওয়াত হোসেন ও আবু আল ইউসূফ খান টিপুর বিরুদ্ধে ২কোটি টাকা নেয়ার অভিযোগে সে সময় নারায়ণগঞ্জের সবক’টি পত্রিকায় এ সংক্রান্তে নিউজ ছাপা হয়। টিপুতো টিপুই এতোবার জার্সি বদলের পর সে বিএনপি’র ত্যাগী নেতা দাবি করে কিভাবে? বিষয়গুলো দলের নীতি নির্ধারকদের বিবেচনা করা উচিত। শেকড় উপড়ে যেমন গাছ বাঁচানো যায়না তেমনি জালাল হাজী পরিবারকে উপেক্ষো করে নারায়ণগঞ্জের মাটিতে কেউ রাজনীতিতে সফল হতে পারবেনা। মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী আপনারা কোথায় ছিলেন? আপনাদেরতো টিকিটি দেখা মিলেনি। তখন এই মুকুলের সৈনিকরাই আওয়ামী দুঃশাসনের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল। নবীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড রণক্ষেত্র করেছিল কারা? এই মুকুলের সৈনিকরাই। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে যদি কিছু করেই থাকে তবে সেটা এই জালাল হাজী পরিবারই করে। সেটা ত্যাগ হোক আর যাই হোক। হিসেব মিলিয়ে দেখেন দলের জন্য আপনারা কি করেছেন আর মুকুল সাহেবরা কি করেছে। কোন নির্বাচনে আপনাদেরকে জয়ের মালা পড়তে দেখিনি এই জালাল হাজী পরিবারই বার বার জয়ের মালা ছিনিয়ে আমাদের নেত্রীকে উপহার দিয়েছেন। সাখাওয়াত সাহেব মেয়র প্রার্থী হয়ে পাশতো করতে পারেননি দলের বদনাম করেছেন। এক সময় হাজী নূরউদ্দিন সাহেবকে দিয়েও আপনারা বিরোধীতা করেছিলেন তাতেও কামিয়াব হতে পারেননি। এরপর মাজহারুল ইসলামকে মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবং শিশিরকেও কলাগাছিয়া ইউনিয়নে পরিষদ নির্বাচন করিয়েছেন সেখানেও আলোর মুখ দেখেননি। মনে রাখবেন জালাল হাজী পরিবার ছাড়া নারায়ণগঞ্জ বিএনপি কখনোই কিছু করা সম্ভব নয়। সময় থাকতে এখনো সংযত হউন। জালাল হাজী পরিবারকে প্রতিপক্ষ ভাবা থেকে সরে আসুন। নয়তো কখনো সফল হতে পারবেন না।