ডগ অ্যান্ড ইন্ডিয়ান প্রহিবিটেড’,অর্থাৎ কুকুর ও ভারতীয়দের সেখানে প্রবেশ নিষেধ,

অভিজাত সেই ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে ইংরেজদের দম্ভ মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা সূর্য সেন৷ পুরোদস্তুর সশস্ত্র অভিযান, নেতৃত্বের ভার অর্পণ করা হয়েছিল মাত্র ২১বছরের এক অগ্নিকন্যার ওপর,তিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার৷ তাঁর জীবনে সেদিন মাহেন্দ্রক্ষন,যেদিন বিপ্লবী নির্মল সেনের মাধ্যমে ধলঘাটে আত্মগোপন করার সময় মাস্টারদা’র সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল প্রীতিলতার। শিখে নিয়েছিলেন পিস্তল চালানো। ডিস্টিংশনে বি.এ.পাশ করে ফেলছেন।

২৪সেপ্টেম্বর ১৯৩২, প্রীতিলতার নেতৃত্বে মহেন্দ্র চৌধুরী,সুশীল দে,কালী দে,প্রফুল্ব দাস,শান্তি চক্রবর্তী,বীরেশ্বর রায়,পান্না সেন ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমনের জন্য এগিয়ে যায়৷ পায়জামা পাঞ্জাবী,মাথায় পাগড়ি পরা প্রীতিলতাকে মহিলা বলে চেনা যাচ্ছিল না,কোমরে পিস্তল,কাঁধে বোমার ব্যাগ৷ ক্লাবের গেটের কাছে পৌঁছে ছোট ছোট দলে বিপ্লবীরা ভাগ হয়ে গেলেন,তারপর সোজা ক্লাবের ভিতরে৷ বিপ্লবীদের বোমা আর পিস্তলের গুলির দাপটে ব্রিটিশদের অবস্থা তখন সঙ্গীন ,চুপসে গিয়েছে আভিজাত্যের দম্ভ,বিপ্লবীদের গুলিতে মিসেস সুলিভান নামের একজন ব্রিটিশ মহিলা নিহত হন আহত হয়েছিলেন আরও চারজন পুরুষ ও সাতজন নারী৷

এসবের মাঝেই হঠাৎ একটি বুলেট এসে লাগে প্রীতিলতার হাতে,পুলিশ,মিলিটারি ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে আসছে,না প্রীতিলতা আহত অবস্থায় পুলিশের কাছে ধরা দিতে চান নি, ইচ্ছা করলে হয়ত তিনি পারতেন,আসলে বার্তা দিতে চেয়েছেন ভারতবর্ষের নারীরাও অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে,এই যুদ্ধে হয় নিজে মরতে হবে না হলে মারতে হবে,মাঝামাঝি কোনও অবস্থান নেই৷ আহত অবস্থায় বাঘের মত লড়াই চালিয়ে যেতে লাগলেন,সূর্য সেনের কঠোর আদেশের কথা মনে পড়ছে, প্রয়োজনে জীবন দিতে হবে,কিন্তু বিপ্লবী দলের কাজকর্ম যেন ব্রিটিশ পুলিশ,প্রশাসন জানতে না পারে,আর বিলম্ব নয়,মুখে পুরে দিলেন বিষাক্ত পটাসিয়াম সায়ানাইড৷ দেশমাতৃকার চরণে নিবেদিত হয়ে গেল একটি ২১বছরের নারী,বাংলার প্রথম নারী শহীদ,তিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার,আজ ৫মে বাংলার বীরাঙ্গনা নারীর জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

কলমে Arunava Sen.

© ধ্রুবতারাদের খোঁজে।

তথ্যঋণ ও কৃতজ্ঞতা-সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন, চিন্ময় চৌধুরী।