চারক সংহিতার মতে নিম হল সর্বরোগ নিরাময়ী। হাজার হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে নিম হল এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। প্রাকৃতিক এই উপাদানে পাতা, ফুল, ফল,বীজ, ছাল কোনো কিছু ই ফ্যালনা নয়। শরীরের হাজার ও ব্যাধি নিরাময়কারী নিম ও নিম পাতার উপকারিতা বহু প্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে যুক্ত। প্রাচীন কালে বলা হত পরিবেশ বিশুদ্ধ এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে প্রত্যেক বাড়িতে নিম গাছ লাগানোর কথা।ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে।
আসুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক মহামূল্যবান নিম পাতার উপকারিতা গুলি একে একে:
- নিমের অ্যান্টিব্যকটেরিয়াল গুণাবলী
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও কোলেস্টেরল ও মধুমেহ জব্দ করতে নিমপাতার উপকারিতা
- ত্বকের যত্নে ও চুলের সমস্যার সমাধানে নিম
- পেটের সমস্যায় নিম পাতার উপকারিতা
- মুখের সমস্যায় নিমপাতার গুন
- সর্দি-কফ-জ্বর নিরাময়ে নিম
- হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নিমের কার্যকারিতা
এবার সবিস্তারে এই উপকারিতা গুলি দেখে নেওয়ার পালা:
১) নিমের অ্যান্টিব্যকটেরিয়াল গুনাবলী:
গবেষণায় দেখা গেছে নিমের মধ্যে অ্যান্টি -ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল,অ্যান্টি ভাইরাল পদার্থ উপস্থিত। ফলে যেকোনো জীবাণু মুক্ত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও বিভিন্নগবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে, নিম পাতার নির্যাস গুলিতে এস মেটানেস, ই ফ্যাক্যালিস এবং এস্অরিয়াসের মতো উপাদানগুলি রয়েছে। যা যে কোন ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।এছাড়াও নিমের হাওয়া পরিবেশ কে দূষণ মুক্ত করতে জীবাণু মুক্ত করতে সহায়ক। নিমের মধ্যে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় নিমের নির্যাস বিভিন্ন অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সামগ্রী র মুখ্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, কোলেস্টেরল ও মধুমেহ জব্দ করতে নিম পাতার উপকারিতা:
নিম রক্ত পরিশোধ করতে সহায়তা করে।নিম পাতা শরীরের ভেতরের জার্ম পরিষ্কার করে। ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোল করে। নিম পাতার রস প্রত্যেক দিন সেবন করলে কলেস্টেরলের মাত্রা কমতে থাকে। মধুমেহ বা ডাইবেটিসের ক্ষেত্রে নিম পাতা প্রাকৃতিক ইনসুলিন এর কাজ করে। ডাইবেটিসে অক্রান্তরা যদি রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে নিম পাতা খেলে তাদের রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকবে।এছাড়াও নিম পাতা ডায়াবেটিসজনিত অক্সিডেটিভ চাপ প্রতিরোধ করতেও সক্ষম।
৩) ত্বকের যত্নে ও চুলের সমস্যার সমাধানের নিম:
নিম পাতায় অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান উপস্থিত থাকায় নিম পাতা আমাদের ত্বকের ও চুলের হাজার সমস্যার মোক্ষম জবাব। নিম ডি অক্সিফাইং তাই রূপ চর্চার আয়ুর্বেদ সামগ্রী তে অপরিহার্য উপাদান।
নিম পাতা বাটা ফেসমাস্ক এর সঙ্গে ব্যবহার করলে তা, ত্বকের অশুদ্ধতা দূর করার সঙ্গে সঙ্গে লোমকূপের ছিদ্রমুখ সংকুচিত করতেও সহায়তা করে। ব্রন,র্যাস আক্রান্ত ত্বকের ব্যাকটের নির্মূল করতে নিম পাতা র উপকারীতা সত্যই অনস্বীকার্য।অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ নিম পাতা পরিবেশ দূষণ ও ক্ষতি র হাত থেকেও ত্বকে কে রক্ষা করে। নিম পাতা মাথার ত্বকের চুলকানি ও শুষ্কতা উপশমকারী। এছাড়াও চুলের গোড়া শক্ত করতে এবং চুলের বৃদ্ধি র ও সহায়ক। নিম পাতা খুশকি উপশমকরী। নিম পাতা উকুন নির্মূল করতে ও সক্ষম। নিম পাতার মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক হেয়ার কন্ডিশনিং ক্ষমতা।
৪) পেটের সমস্যায় নিম পাতার উপকারিতা:
যে কোন ধরনের পেটের সমস্যা আলসার কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় নিমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিমপাতা ব্যবহার করার ফলে নিম পাতায় উপস্থিত ইনফ্লেমেটরি উপাদান গুলো আলসার, গ্যাসট্রিকের মতো সমস্যা সমাধান সম্ভব হয়েছে।
গ্যাস,অম্বল,বদহজম এই সমস্যা তো আমাদের নিত্য দিনের সমস্যা।এই সমস্যা নিধনের নিম ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। নিমের মধ্যে উপস্থিত হজমে সহায়ক এমন কিছু উপাদান আছে, যা হজমের সমস্যাকে কমাতে এবং খাদ্য হজম করাতে সাহায্য করে।নিম পাতার রস বা নিম পাতা গুঁড়ো সেবন করলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে এবং পেটে ফাঁপা ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা গুলো দূরে চলে যায়।লিভারের যেকোনো ধরনের সমস্যা কিংবা জন্ডিসের সমস্যায় নিমপাতার ব্যবহারে সকল সমস্যা থেকে মুক্তি ঘটবে।
৫) মুখের সমস্যা নিমপাতার গুন:
দাঁত ও দাঁতের মাড়ির বিভিন্ন সমস্যার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল নিম পাতা। দাঁত ও মাড়ির যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে পারে বলে নিমের দাঁতন বহু প্রাচীন কাল থেকেই হয়ে আসছে। বর্তমানে বিভিন্ন নামি দামী টুথপেস্ট ও মাউথ ওয়াশে নিম এর নির্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।কেননা নিমপাতা মাঁড়ি ও দাঁতের সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহারে সুফল মেলে। নিম পাতার নির্যাস দাঁতের যেকোনো ধরনের সমস্যা, মাড়ির সমস্যা, দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে।এছাড়াও নিম পাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি মুখের মাঁড়ি এবং দাঁতের টিস্যু গুলোর মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, মুখের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
৬) সর্দি-কফ-জ্বর নিরাময়ে নিম:
শরীরে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করলে শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে ওঠে, যার ফলে শরীরের নিজেস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তে থাকে। ফলে জ্বর-সর্দি মতো রোগের প্রকোপ বাড়ে।আপনি জানলে অবাক হবেন যে নিম পাতার নির্যাসে মধ্যে রয়েছে এক প্রকার অ্যান্টি ম্যালেরিয়াল গুন, যা শরীরের ম্যালেরিয়ার জার্ম বহনকারী ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া গুলোকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে।এছাড়াও অনেক সময় বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে।তাহলে একটা কাজ করুন কিছু নিম পাতা বেটে নিয়ে সেই রস ঈষদুষ্ণ গরম জলে মিশিয়ে দিয়ে দিনে বার তিন-চারেক খেলে সর্দি নির্মূল হয়ে বুকের ব্যথা কমে যাবে।
৭) হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নিমের কার্যকারিতা:
যারা হরমোনজনিত সমস্যায় কষ্ট পান তাঁর নিয়মিত ৩-৪টি নিম পাতা মধু সহযোগে খেয়ে দেখুন উপকার পাবেন।
দেখলেন তো নিমের কত গুন, কত নিমপাতার উপকারিতা। শরীরের যেকোন সমস্যার সমাধান পাবেন এর কাছে পাবেন। তাই নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন।ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।
ভেষজ উদ্ভিদ সংক্রান্ত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। আশা করি সবাই উপকৃত হবেন। কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন কেমন লাগল।
ধন্যবাদ।।