নির্বাচন নেই১৩ বছর
লক্ষ্মীপুরে ৯ ইউনিয়নে সেবা বঞ্চিত জনগণ!
অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর:
দীর্ঘ ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও কমলনগরের ৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন নেই। নির্বাচনহীন চেয়ারম্যানরা খেয়াল খুশি মত চালাচ্ছেন পরিষদ। এতে সঠিক সেবা এবং উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। জনগণের সঠিক সেবা ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে আছে এ সকল ইউনিয়নগুলো। তাই নির্বাচন না হওয়ায় ক্ষুব্দ এলাকাবাসী।
নারকেল সুপারি ধান সয়াবিন আর রুপালি ইলিশে ভরপুর প্রিয় লক্ষ্মীপুরের কয়েকটি ইউনিয়নের জনগনের ভাগ্য থেকে যেন অলক্ষী দূর হচ্ছেনা। নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই জেলায় অবহেলিত দরিদ্র মানুষের সংখ্যাই বেশি। নদীর ভয়াল থাবা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে ২টি উপজেলার মানুষের স্বপ্ন। এ জেলায় মোট ৫৮টি ইউনিয়ন, ৪টি পৌরসভা ও ৫টি উপজেলা রয়েছে। ৫১টি ইউনিয়নে সঠিক সময়ে নির্বাচন হলেও সদর ও কমলনগর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মানুষের ভাগ্য অতি নির্মম।
দীর্ঘ ১৩ বছরেরও বেশি সময় তারা আছেন রাজতন্ত্রের মতো বহাল তবিয়তে। সঠিক সময়ে ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ ৯টি ইউনিয়নে নির্বাচন নেই।
সদর উপজেলার দালাল বাজার, দক্ষিণ হামছাদী, চর রুহিতা, লাহারকান্দি, ভাঙ্গাখাঁ ও তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন এবং কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট, পাটওয়ারীর হাট ও কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যক্রম চলছে রাজতন্ত্রের মত। ২০১১ সালে নির্বাচনের উৎসব উপভোগ করলেও দীর্ঘ একযুগের বেশী ভোট থেকে বঞ্চিত তারা। এর মধ্যে বেশিরভাগ সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে মামলা জটিলতা দেখানো হয়। এই ইউনিয়ন গুলোতে কবে নির্বাচন হয়েছে ভুলতে বসেছে এলাকাবাসী।
মামলা জটিলতায় নির্বাচন না হলেও বহাল তবিয়তে আছেন চেয়ারম্যান এবং মেম্বাররা । ৯ টি ইউনিয়নের ৪ লক্ষেরও অধিক মানুষ সরকারের বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । রয়েছেন ২ লক্ষের অধিক ভোটার। এরই মধ্যে প্রায়ই ডজনখানেক চেয়ারম্যান মেম্বার মারা গেলেও নেই উপ-নির্বাচন। তাদের দাবি তারা তাদের ভোটাধিকার চায়।
এছাড়াও সেবা নিতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেকে। বেশিরভাগ সময় চেয়ারম্যানদের পরিষদে না পাওয়ারও অভিযোগ আনেন তারা। তবে এসকল চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননা। নির্বাচন না হওয়ায় চেয়ারম্যান মেম্বাররা উন্নয়নের কথা চিন্তা না করে নিজেদের পকেট ভারি করার অভিযোগও ওঠেছে। ভিজিএফ, ভিজিডি, টিআর, কাবিখা এবং কাবিটাসহ সকল প্রকল্প নামমাত্র দেখিয়ে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে। যার জন্য এলাকার উন্নয়ন পিছিয়ে আছে অনেকটা।
চেয়ারম্যান এর পাশাপাশি ইউপি সদস্যরাও স্থানীয় নাগরিকদের সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় নির্বাচন বিহীন চেয়ারম্যান ও মেম্বার থাকার কারণে মূল্যহীন হয়ে পড়ছেন সাধারণ জনগন।
ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন সেবার জন্য গিয়েও হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। এছাড়াও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে আছে এসকল ইউনিয়নে। ইউনিয়নের বেশিরভাগ রাস্তাঘাট রয়েছে পরিত্যাক্ত অবস্থায়। বর্ষাকালে চলাচলের অনুপযোগী এসকল রাস্তায় চলাচল করতে পারেনা এলাকাবাসী। নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারায় ক্ষুব্দ জনগন।
এসকল ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন সবসময়। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রস্তুতি নিলেও জনপ্রতিনিধিরা পুণরায় মামলা করে নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করার অভিযোগ আনেন অনেকে।
তথ্যমতে, ২০২২ এর ৭ এপ্রিল গেজেট হলেও উপজেলাতে গেজেটের ফাইল চাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, ২০২৩ এর ১৬ই ফেব্রুয়ারী পুণরায় গেজেট হওয়ার পর সীমাণা নির্ধারণ এবং ভোটার পুণর্বিণ্যাসের কাজ শেষ হলেও কবে নির্বাচন হবে, কবে নতুন চেয়ারম্যান আসবে কবে উৎসব মূখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন সেই অপেক্ষায় এখন স্থানীয়রা।
তবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন জানান, সীমানা নির্ধারনী জটিলতা নিরসন হয়েছে। ভোটার তালিকা পূর্নবিন্যাসের কাজ শুরু হয়েছে। শ্রীঘ্রই নির্বাচন হওয়ার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।
অ আ আবীর আকাশ
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
abirnewsroom@gmail.com