রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১, ০৭:০৮ অপরাহ্ন
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■ঃ একজন যুবলীগ নেতা নির্মাণ করেছেন বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। বাজারের বণিক সমিতির আরেক সাধারণ সম্পাদক নির্মাণ করছেন পাকা স্থাপনা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) একটি খাল দখল করে এভাবে দখলদারিত্বে মেতে উঠেছেন যুবলীগের এক নেতার নেতৃত্বে আরও অনেকে। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত চাঁচুড়ী-পুরুলিয়া খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খালের বাজার অংশে দক্ষিণ পাড়ে একের পর এক সরকারি জমি দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করার মহোৎসব চললেও যেনো দেখার কেউ নেই। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খাল রক্ষার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন রিপন মোল্যা ও সুজন শিকদারসহ সচেতন এলাকাবাসী। উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার চাঁচুড়ী বাজারে সরকারি খাল দখল করে চাঁচুড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো.তৌরুত মোল্যা একটি দ্বিতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। তৌরুত মোল্যা চাঁচুড়ী বাজারের পেরীফেরিভূক্ত ধাড়িয়াঘাটা মৌজার বাংলাদেশ সরকারের মালিকানা ১ নং খাস খতিয়ানের ৫ নং দাগের ৪ শতাংশ সরকারি বন্দোবস্তযোগ্য জমির মধ্যে আধা শতাংশ জমি নামমাত্র বন্দোবস্ত নিয়ে বাকি খাস জায়গা ও পাশের একই খতিয়ানের ৬১১ নং দাগের ৩-৪ শতাংশ খাল দখল করে সেখানে দ্বিতল পাকা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। অপরদিকে , চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও চাঁচুড়ী বাজারের বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দখলদার আশরাফুল ইসলামের চাঁচুড়ী বাজারের পেরীফেরিভূক্ত ধাড়িয়াঘাটা মৌজার ১ নং সরকারি খাস খতিয়ানের ১৩ নং দাগের ৫ শতাংশ জমির মধ্যে আড়াই শতাংশ জমির ওপর আগে তার বাবা মোশারফ হোসেন মোল্যার একটি দোকান ঘর বিদ্যমান আছে। তবে ওই জায়গার তাদের নামে কোনো কাগজ বা রেকর্ড নেই। এই জায়গার সঙ্গে লাগা উত্তর পাশের একই খতিয়ানের ৬১১ নং দাগের খাল দখল করে সেখানে বর্তমানে একটি অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এছাড়া বাজার অংশের কৃষ্ণপুর ব্রিজ সংলগ পশ্চিম পাশে খালের জায়গা দখল করে পাকা দোকান ঘর নির্মাণ করেছেন উপজেলার সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ও চাঁচুড়ী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা। পুরুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস জানায়, খালটি চাঁচুড়ী বাজার অংশে ধাড়িয়াঘাটা মৌজার ১নং খতিয়ানের ৬১১ নং দাগের ১.৮৫ একর ও ১৫ নং পুরুলিয়া মৌজাভূক্ত ১.৮৫ একর জায়গার ওপর অবস্থান। এছাড়া ধাড়িয়াঘাটা মৌজার ১নং খতিয়ানের ১৭০ নং দাগের ৪.০১ একর জমির লাইনের খালের অংশ বিশেষও চাঁচুড়ী বাজারের পূর্ব অংশের সঙ্গে সংযুক্ত। প্রায় দুইশত বছরের পুরনো খালের দক্ষিণ পাড়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করে রেখেছে প্রভাবশালী মহল। পাড় দখল করে পাকা দোকান ঘর ও বহুতল ভবন ইমারত নির্মাণ করে দখলের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে তারা। ফলে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। জানা গেছে, চাঁচুড়ী বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত বাপাউবোর এই খালটি উপজেলার চাঁচুড়ী ও পুরুলিয়া ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে। বর্ষাকালে এ খাল দিয়ে বাজারের পানি নেমে যায়। কিন্তু এ খালের পাড় দখল হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে বাজারে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। চাঁচুড়ী পুরুলিয়া খালটির পূর্ব অংশটি চিত্রা নদীর উপশাখা লাইনের খালের সঙ্গে মিলিত হয়ে জেলার বৃহৎ চাঁচুড়ী বিলের সঙ্গে মিশিছে। কিন্তু ভূমি দস্যুদের দ্বারা এখন নিমজ্জিত হয়ে বড় এ খালটি সরু খালে পরিণত হয়েছে। ’৯০ দশকে খালের দক্ষিণ তথা দখলকৃত পাড় দিয়ে প্রশ্বস্ত পায়ে হাটা-চলার পথ ছিল। কিন্তু কালক্রমে দখলবাজরা পুরোটাই দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এখন খালের চাঁচুড়ী বাজারের অংশের পাড় পুরোটাই দখলে চলে গেছে। অভিযোগকারীরা জানান, গত প্রায় এক মাস থেকে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে খাল দখলের নগ্ন প্রতিযোগিতা। উপজেলার সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা চাঁচুড়ী বাজার সংলগ্ন কৃষ্ণপুর ব্রিজের পশ্চিম পাশে নতুন করে আবার খালের জায়গা দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণের জন্য বড় বড় গর্ত খুড়ে কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া মোবাশ্বের শেখ,মহসিন খালাসী ও কামাল শেখ প্রমূখ ব্যক্তিরা খালের জায়গা দখল করে পাকা স্থাপনা ও দোকান ঘর নির্মাণ করেছেন। সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে,চাঁচুড়ী বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত ওই খাল দখল করে দখলদার আশরাফুল ইসলামের আরসিসি পিলারের ওপর চলছে পাকা স্থাপনার নির্মাণকাজ। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় এক মাস ধরে প্রভাবশালী আশরাফুল ইসলাম সরকারি জায়গার পাশাপাশি খালের জমি দখল করে ৪-৫ শতাংশের ওপর ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। ভবনটি বহুতলা পর্যন্ত নির্মাণ করার উপযোগী করে ভিত্তি দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ বাদীরা মনে করেন, এ খালটি দখলমুক্ত করা না হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্য পরিবেশ হুমকির মুখে দাঁড়াবে। এমতাবস্তায় এলাকাবাসীর দাবি চাঁচুড়ী-পুরুলিয়া খাল রক্ষা করে অবৈধ দখলদার থেকে উৎখাত করার জন্য জোর দাবি করেন। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুর রশীদ (চলতি দায়িত্বে) বলেন,‘কোনোভাবেই খাল দখল করে পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না। উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’নড়াইল জেলার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহানেওয়াজ তালুকদার বলেন,‘ খালের জমির মালিক আমরা নই। বিধায় খালের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হবে।’ এ ব্যাপারে চাঁচুড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো.তৌরুত মোল্যা বলেন,‘সরকারি খাল দখল করে আমি কোন ভবন নির্মাণ করিনি।’ একই প্রসঙ্গে চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও চাঁচুড়ী বাজারের বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বলেন,‘পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমির ওপরই ঘর নির্মাণ করছি। খালের জমি দখল করে কোন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে না।’ এ বিষয়ে চাঁচুড়ী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন,‘ আমি একটি দোকান ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও আপাতত সেটির কাজ বন্ধ আছে।