পাকিস্তান: আইসিসির ওয়ানডে, টিটোয়েন্টি ও বর্ষসেরা পুরুষ ক্রিকেটারের পুরস্কার এবার পাকিস্তানের ঝুলিতে

শাহীন শাহ আফ্রিদির বয়স ছিল তখন চার বছর।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ২০২১ সালের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার শাহীন শাহ আফ্রিদি।

ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির এই পুরস্কারের নাম- স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স অ্যাওয়ার্ড।

এর আগে কোনও পাকিস্তানি ক্রিকেটার এই পুরস্কার পাননি।

একুশ বছর বয়সী শাহীন, ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে এই পুরস্কার পেয়েছেন।

এই বছরের বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম, বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, আর এবারে বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।

এছাড়া বর্ষসেরা উদীয়মান নারী ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন ফাতিমা সানা।দীর্ঘদিন পাকিস্তানের মাটিতে বড় কোনও ক্রিকেট দল সফর করেনি।নিরাপত্তা ও অন্যান্য ইস্যুতে যখন একে একে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড পাকিস্তান সফর বাতিল করে, তখন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট রমিজ রাজা বলেছিলেন, মাঠেই জবাব দেবেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দেয়া তার এই বক্তব্য তার দেশের ক্রিকেটাররা এবছর প্রমাণ করেছেন।

মোট ৩৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৭৮টি উইকেট নিয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।

ছবির উৎস,MICHAEL STEELE-ICC

ছবির ক্যাপশান,২০২১ সালে মোট ৩৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৭৮টি উইকেট নিয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।

কেন শাহীন শাহ আফ্রিদি বর্ষসেরা ক্রিকেটার

পাকিস্তানের ক্রিকেটার ও ক্রিকেট দলের সমর্থকদের জন্য দারুণ একটা বছর ছিল ২০২১ সাল।

এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের বর্ষসেরা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি একাদশের অংশ হন এই ফাস্ট বোলার।

এই শাহিন শাহ আফ্রিদি ২০২১ সালে দারুণ বোলিং করেন। আইসিসির ভেরিফায়েড টুইটার পাতায় পুরস্কারের কথা ঘোষণার সময় লেখা হয়, “চমকপ্রদ সব স্পেল, গতি ও সুইংয়ের প্রদর্শনী এবং জাদুকরি কিছু মুহূর্ত- ২০২১ সালে শাহীন শাহ আফ্রিদি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।”

শাহীন শাহ আফ্রিদি বলেছেন, “আমি পাকিস্তানের হয়ে সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছি। দল হিসেবেও আমরা ভালো খেলেছি। আমরা ভালো কিছু ম্যাচ জিতেছি। আমি সবসময় পাকিস্তানের হয়ে ভালো খেলার চেষ্টা করি এবং করে যাবো।”

শাহীন শাহ আফ্রিদি বলেন, ভারতের বিপক্ষে জয়টাই তার মনে বেশি থাকবে। এতো দর্শকের সামনে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের জয়ের তাৎপর্যই অন্যরকম।

“আমার ২০২১ সালে পারফরম্যান্সের হাইলাইটস হলো ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি। ২০২২ সালেও আমি চাই একই ধারা বজায় রাখতে।”

ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের এই ম্যাচে শাহীন শাহ আফ্রিদি দুই ওভারের মাথায় লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মার উইকেট নিয়ে নেন। এরপর ভিরাট কোহলির উইকেটও তিনিই নেন।

বাংলাদেশের উইকেটে যেখানে খোদ বাংলাদেশের জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্ট দুইজন বা কখনো কখনো একজন পেস বোলার খেলায়, সেখানে শাহীন শাহ আফ্রিদি ২ টেস্টে ১০টি উইকেট নিয়েছেন।

তিনি ২০২১ সালে ৯টি টেস্ট ম্যাচে ৪৭টি উইকেট নিয়েছেন।

মোট ৩৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৭৮টি উইকেট নিয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।

এই বছর পাকিস্তানের চারজন ক্রিকেটার আইসিসির পুরস্কার পেলেন, শাহীন শাহ আফ্রিদি, বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানের সাথে, পাকিস্তানের নারী ক্রিকেট দলের ফাতিমা সানা পেয়েছেন বর্ষসেরা উদীয়মান নারী ক্রিকেটারের পুরস্কার।

ছবির উৎস,MICHAEL STEELE-ICC

ছবির ক্যাপশান,২০২১ সালের আইসিসির বর্ষসেরাদের তালিকায় আছেন পাকিস্তানের চারজন ক্রিকেটার।

দ্রুতই বিশ্ব ক্রিকেটে নাম করেছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি

পাকিস্তানের ক্রিকেট পর্যবেক্ষক ও পরিসংখ্যানবিদ মাজহার আরশাদ লিখেছেন, “ক্রিকেটের দ্রুততম উত্থানগুলোর একটি দেখিয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।”

চার বছর আগে শাহীন শাহ অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দলে খেলেছেন।

শাহীন শাহ আফ্রিদির পরিবারের সাথেই ক্রিকেট খেলাটি জড়িয়ে আছে, তার বড় ভাই রিয়াজ আফ্রিদি ২০০৪ সালে পাকিস্তানের হয়ে একটি টেস্ট ম্যাচও খেলেছেন।

শাহীন শাহ আফ্রিদির বয়স ছিল তখন চার বছর।

তখনও শাহীন শাহ আফ্রিদি টেপ টেনিসের বল দিয়েই ক্রিকেট খেলতেন। কিন্তু বড় ভাই রিয়াজ আফ্রিদি তার হাতে চামড়ার শক্ত ক্রিকেট বল ধরিয়ে দেন।

শাহীন আফ্রিদি ২০১৫ সালে একটি প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে সবার নজরে আসেন।

তখনই অনূর্ধ্ব-১৬ একটি ক্রিকেট দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সুযোগ পান তিনি, শাহীনের গতি, উচ্চতা ও ফিটনেস তাকে অনেকের চেয়ে আলাদা রাখতো যেকোনও দলে।

পাকিস্তানের ঘরোয়া আসর কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে শাহীন অভিষেক ম্যাচে ৩৯ রানে ৮টি উইকেট নেন, যা এই আসরের ইতিহাসে সেরা।

এরপরই পাকিস্তান সুপার লিগে ডাক পান শাহীন।

পাকিস্তান সুপার লিগে লাহোর কালান্দারসের হয়ে এক ম্যাচে চার রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে নেন এই বাঁহাতি পেসার। তাৎক্ষণিকভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান তিনি।

পাকিস্তানের হয়ে ২০০০ সাল বা তার পর জন্ম নেয়া প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলে খেলেছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।

ছয় ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার শাহীন শাহ আফ্রিদির অভিব্যক্তি এবং শিশুসুলভ চেহারায় অনেক সময়ই পেস বোলার সুলভ আচরণটা ফুটে ওঠে না। ইয়র্কার, বাউন্সার ও সুইং বোলিংয়ে পারদর্শী এই ক্রিকেটার যেকোনও উইকেটেই ব্যাটসম্যানদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠেন এবং উঠেছেনও।

Exit mobile version