ছাত্র আন্দোলেন গণঅভ্যুত্থানের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হচ্ছেন টানা তিন মেয়াদে সরকারের একের পর এক মন্ত্রী-এমপি-আমলারা। বাদ যাচ্ছে না ছোট থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দও। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো আরও দুই মন্ত্রীর নাম।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে আসাদুজ্জামান নূরকে রাজধানীর বেইলি রোড এলাকা থেকে ও মাহবুব আলীকে সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক গণমাধ্যমকে জানান, রাজধানীর মিরপুর থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় রোববার রাত ১১টার দিকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা অপর একটি মামলায় সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। আইনানুযায়ী আগামীকাল রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূর বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের জনপ্রিয় মুখ। নাট্য অভিনেতা হিসেবে খ্যাতিমান আসাদুজ্জামান নূর ২০০১ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনেও আসাদুজ্জামান নূর সংসদ সদস্য হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি সংস্কৃতিমন্ত্রী হয়েছিলেন।
আর মাহবুব আলীর বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায়। তিনি ২০১৪ সাল থেকে টানা দুবার সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি বিমান প্রতিমন্ত্রী হন। গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ তাঁকে মনোনয়ন দেয়। তবে নির্বাচনে তাঁকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ সায়েদুল হক। যিনি ব্যারিস্টার সুমন নামে পরিচিত।
জানা যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে নিজ, স্ত্রী ও পরিবারের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৫ সেপ্টেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে।
সাবেক এ প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অর্থপাচার, প্রকল্পে অনিয়মসহ দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্য আমলে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
মাহবুব আলীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার নিজ নামে, স্ত্রী ও পরিবারের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। সাবেক এ সংসদ সদস্য তার আত্মীয়-স্বজনের নামে সিন্ডিকেট তৈরিপূর্বক এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে ঢাকায় সম্পদ অর্জন করেন। এ ছাড়া তার দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ২৬ জন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা এবং বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলো।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং জ্বালানি, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী রয়েছেন।