গ্রামের দিকে বাড়ির আশেপাশের বেড়া দিতে ও ধান ক্ষেতে ধারে, ঝোপে ঝাড়ে এলোমেলো ভাবে অনাদরে এই গাছ গুলি জন্মে থাকে। তবে এই গাছটির ঔষধিগুণ অপরিসীম। বাসক পাতার উপকারিতা জেনে বিভিন্ন কোম্পানি ওষুধ তৈরি করতে এই পাতা গুলিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকে। তাই বাসক পাতা বর্তমানে বানিজ্যিক ভাবেও চাষ করা হচ্ছে। বাসক পাতার সাধারণত সর্দি ও কাশি কমাতে ব্যবহার করা হয়। বুকে বহুদিনের জমা কফ তরল করার জন্যও বাসক পাতার রস খাওয়ানোর প্রচলন অনেকদিন ধরেই রয়েছে। বাসক পাতায় ভ্যাসিসিন নামে একটি প্রাকৃতিক উপাদান এবং কিছু জরুরী এসেনশিয়াল অয়েলও থাকে যা বুকে জমে থাকা কফ গলিয়ে দেয়। এবং ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
আসুন আজ তবে দেখে নেওয়া যাক বাসক পাতার বিভিন্ন গুনাগুন:
- জ্বর সর্দি-কাশি কমাতে বাসক পাতার উপকারিতা
- বাতের ব্যাথা উপশমে বাসক পাতার গুন
- রক্ত পরিশোধনকারী রূপে বাসক পাতা
- লিভারের সমস্যায় ও কৃমিনাশক হিসেবে বাসক পাতার উপকারিতা
- চর্মরোগ রোগের ক্ষেত্রে বাসক পাতার উপকারিতা
- মুত্রথলির সংক্রমন রোধে বাসক পাতার উপকারিতা
- মুখের নানাবিধ সমস্যা সমাধানের বাসকের গুন
তাহলে এবার এই গুলি নীচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করে দেখে নেওয়া যাক।
১) জ্বর সর্দি-কাশি কমাতে বাসক পাতার উপকারিতা:
জ্বরের প্রভাবে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, সেই তাপমাত্রা কমাতে বাসক পাতা যথেষ্ট সাহায্য করে। অনেকসময়েই জ্বরের সঙ্গে সর্দি ও কাশির সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে বাসক পাতার রসের সঙ্গে তুলসী পাতার রস ও মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।সাধারণ কাশি তে বাসক পাতা,গোল মরিচ , মিছরি একসঙ্গে এক লিটার জলে সেদ্ধ করে খেলে কাশি দূর হয়।এর সঙ্গে কেউ কেউ মধুও খেতে পারেন।পুরানো সর্দি-কাশি কাশির ক্ষেত্রেও এ টোটকা সমান ভাবে কার্যকরী।ঠান্ডা গরমে গলা ব্যথা হলেই যদি একটু বাসক পাতার রস খেয়ে নেন তাহলেই গলা ব্যথা দূর হয়ে যাবে। বাসক পাতা আমাদের শ্বাসনালীকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করে যার ফলে শ্বাসকষ্ট কমে এবং ব্রঙ্কাইটিস ও হাঁপানি উপশম ঘটে। বাসক পাতায় অ্যান্টি-মাইক্রোব্যাল উপাদান আছে যা টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষ্মা, হুপিং কাশি র মতো ক্রণিক রোগের ক্ষেত্রেও সমান ভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
২) বাতের ব্যাথা উপশমে বাসক পাতার গুন:
সর্দি-কাশি নিরাময়ের পাশাপাশি বাতের ব্যাথা উপশমেও বাসক পাতা সমান ভাবে কার্যকরী। বাসক পাতায় অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে যা আরথ্রারাইটিস, বাতের ব্যথা, গেঁটে বাত ইত্যাদি নিরাময় করতে সাহায্য করে। অনেক সময় ভারি ব্যায়াম করতে গিয়ে অথবা অন্য কোনো কারনে মার্সেল পেন শুরু হয়।তখন যদি চুন হলুদ গরম করে তার সঙ্গে বাসক পাতা বেটে মিশিয়ে নিয়ে সেই মিশ্রণ টি বেশ কিছুক্ষন ধরে ব্যাথার স্থানে মালিশ করা যায়,তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যেই উপকার পাওয়া যাবে।
৩) রক্ত পরিশোধনকারী রূপে বাসক পাতা:
রক্ত বিশুদ্ধিকরণে বাসক পাতার উপকারিতা অনস্বীকার্য।অনেকেরই মুখে ব্রণ হয় বা পেটে সমস্যা হয় অথবা নানারকম অ্যালারজির সমস্যা থাকে। এই সমস্যাগুলো বেশিরভাগ ই হয় যখন রক্ত পরিষ্কার থাকে না। বাসক পাতার নিয়মিত সেবনে আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়। শুধু তাই নয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।এছাড়াও রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতেও সাহায্য করে।
৪) লিভারের সমস্যায় ও কৃমিনাশক হিসেবে বাসক পাতার উপকারিতা:
লিভার কে সুস্থ, স্বাভাবিক ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে বাসক পাতা।বাসক পাতা র সহিত মধু মিশিয়ে খেলে পেটের সমস্যা দূর হয় লিভার ভালো থাকে মজবুত হয় এবং জন্ডিস থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
এটি খুব তিক্ত হওয়ায় এটি কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। অনেক সময় শিশু রা কৃমির কারণে পেটে ব্যথায় কাঁদে এবং পায়খানার রঙ বদলে যায় তখন বাসক পাতার রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ালে দারুণ কাজ দেয়। কৃমিনাশক হিসেবে কালমেঘ পাতা ন্যায় বাসক পাতাও খুব ভালো কাজ দেয়।
৫) চর্মরোগ রোগের ক্ষেত্রে বাসক পাতার উপকারিতা:
বাসক পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল চর্মরোগ প্রতিহত করতে সহায়তা করে। আমাদের অনেকের ই নানা রকমের চর্মরোগ হয়ে থাকে। দাদ, হাজা, চুলকানি তার মধ্যে অন্যতম। দশ-বারোটি কচি বাসক পাতা ও এক টুকরো কাঁচা হলুদ এক সঙ্গে বেটে দাদ, হাজা বা চুলকানি উপরে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।এছাড়াও আমবাত ও এলার্জি র ক্ষেত্রে বাসক পাতা বেটে প্রলেপ লাগিয়ে রাখলে ফোলা ও ব্যাথা দুই ই কমে যায়। আবার গ্রীষ্মকালে ঘামের দূর্গন্ধ ছাড়াও অনেকের গা থেকে এমনিই খুব দুর্গন্ধ নির্গত হয়, তাঁরা প্রতিদিন বাসক পাতা জলে ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল দিয়ে স্নান করলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়।
৬) মুত্রথলির সংক্রমন রোধে বাসক পাতার উপকারিতা:
অনেক সময় জল কম খাওয়া ও যত্রতত্র প্রস্রব করার পরিনতি তে মুত্রথলিতে সংক্রমন হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বাসক পাতা ও ফুল বেটে মিছরি সহযোগে খেলে মুত্রথলিতে সংক্রমনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রত্যহ বাসক পাতা যুক্ত ভেষজ চা পান করলে কিডনিতে স্টোনের আশঙ্কা ও কমে যায়।
৭) মুখের নানাবিধ সমস্যা সমাধানের বাসকের গুন:
বাসক পাতায় উপস্থিত অ্যন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন মুখে র যাবতীয় সমস্যা সমাধানের সক্ষম।মাড়ির যে কোন সমস্যা, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, পায়েরিয়া, মুখে দূর্গন্ধ দূর করতে বাসক পাতার গুন অনবদ্য। বাসক পাতা কে গরম জলে ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল দিয়ে কুলি করলে পায়েরিয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।এছাড়াও দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে বাসক পাতা বেটে লাগালে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
বাসক পাতায় অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাংগাল পদার্থ আছে যার ফলে এতে ছত্রাক জন্মায় না এবং পোকামাকড় ধরে না বলে ফল প্যাকিং এবং সংরক্ষণ করার কাজে বাসক পাতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি আমাদের রোগ প্রতিরোধের বেড়া রূপে বাসক পাতা রোগ প্রতিরোধ করে চলেছে।তাই এই ভেষজ উদ্ভিদ টিকে অনাদরে না রেখে যত্নে রাখুন। বাসক পাতা সেবন করুন। ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।
ভেষজ উদ্ভিদ সম্পকৃত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আজ আপনাদের সামনে পেশ করলাম। আশা করি সবাই উপকৃত হবেন। কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন কেমন লাগল।