সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিচার বিভাগ সংস্কারের জোরালো দাবি ওঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে দায়িত্ব নেন নতুন প্রধান বিচারপতি। একজন বাদে নতুন করে বিচারপতি নিয়োগ হয় আপিল বিভাগে। এরপর আলোচনায় আসে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের অপসারণ নিয়ে। তাদের অপসারণের বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা।
তবে শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগ না চাওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
গত ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের ‘বিতর্কিত ও দলবাজ’ বিচারপতিদের দ্রুত পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
ওই একই দিনে আওয়ামী লীগের শাসনামলের ১৫ বছরের সাবেক প্রধান বিচারপতিদের গ্রেফতার এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের ৫০ বিচারপতিকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন আইনজীবীরা। সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব।
ওই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মহসীন রশিদ, অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, অ্যাডভোকেট গোলাম রহমান, অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরদিন ৯ আগস্ট জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক যৌথ বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ৮ আগস্ট অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুবের সংবাদ সম্মেলনের বরাত দিয়ে ৯ আগস্ট বিভিন্ন জাতীয় প্রিন্টিং, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় ‘হাইকোর্ট বিভাগের ৫০ জন বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা’ শিরোনামে সংবাদটি নেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।’
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আরও জানায়, ‘প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এ ধরনের কোনও সংবাদ সম্মেলন করেনি বা এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী। নেতারা এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ সম্মেলনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং এ ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানায়।’
এদিকে গত ১৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এর আগের দিন ১৭ আগস্ট রাতে সুপ্রিম কোর্টের সব আইনজীবী সমিতির সদস্যদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ‘দুর্নীতিবাজ ও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে ‘আগামীকাল রবিবার সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল’ লেখা একটি বার্তা যায়। তবে পরদিন (১৮ আগস্ট) সে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে কে বা কারা আগের দিন খুদে বার্তাটি পাঠিয়েছিল, তা জানা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে তাদের পছন্দ অনুসারে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে চার জন বিচারপতি আপিল বিভাগে যোগদানের পর বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। ফলে নতুন করে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগ না চাওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন জানান, ‘বিএনপি সহনশীলভাবে এগুলো চিন্তা করছে। আমরা সহনশীল রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। এটা উদার গণতান্ত্রিক দল। আমরা প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। সুতরাং আমরা মনে করি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এমন কিছু করা উচিত না, যাতে বিচার বিভাগ বা আইন বিভাগের কাজ করতে অসুবিধা হয়। আমরা চাই বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক, বিচার বিভাগে সরকার বা কোনও দলীয় প্রভাব না থাকুক।’