একটা সময় বেকারত্ব থাকবে না কিন্তু আঘাতগুলোর ক্ষত থেকে যাবে। জীবনের দুঃসহ সময়ে কে কেমন
আচরণ করেছিল, কে পিঠ দেখিয়েছিল, কে দূরত্ব বাড়িয়েছিল সেই স্মৃতি রেখে যাবে। রাত জাগা, একা কাঁদা,
আবেদন করার টাকা না থাকা, পরীক্ষার হলে যাওয়ার ভাড়া না থাকা, সকালের নাস্তা করতে না পারার
ক্ষতচিহ্ন থেকে যাবেই। চোখের সামনে অযোগ্যদের চাকুরি পাওয়া, ঘুষ চাওয়া-এসব স্মৃতি মুছে যাওয়া সহজ
নয়। তবে, সব ভুলে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারার নামই সফলতা।
রাত জাগা বৃথা যাবে না, ইচ্ছা করছে না তাও চেয়ারে গুটিসুটি হয়ে দু'চোখ বইয়ে লাগিয়ে রাখা, মন টানছে না তাও
এক পড়া দশবার পড়া-নিরর্থক হবে না। সবার স্বপ্ন পূরণ করে যেদিন দাঁড়াবে সেদিন তোমার শিরের চেয়ে উঁচু
শির একটাও পাবে না। খুশিতে বাব-মায়ের চোখের পানিকে হীরের চেয়ে দামী মনে হবে। লেগে থাকো-কেউ ব্যর্থ
হয়নি। স্বপ্ন দেখো-বৃথা যাবে না। জীবনের নিরাপত্তার জন্য শতরাত জেগে থাকো, তবেই বাকিরাত নিশ্চিন্তে
ঘুমাতে পারবে।
আজ পরীক্ষা খারাপ হয়েছে, ভাইভা থেকে ছিটকে পড়েছো, হতাশ হয়ো না বরং ভুলে যাও। তোমার পূর্ববর্তীরাও
ব্যর্থ হয়েছিল কিন্তু হাল ছাড়েনি। যাদের আজ শৌর্যবীর্য দেখছো তা রাতারাতি অর্জিত হয়নি। কত নিষ্ঠুর
গল্প আছে, কত নিষ্ঠার পর্যায় আছে-তা শুনলে তোমার এক-দুই বারের ব্যর্থতার গ্লানি কর্পূরের মত উঁবে
যাবে। হাল ছেড়ো না-তোমার অগ্রজরা যা পেরেছে তা তুমিও পারবে। দশবারের চেষ্টায় পারবে নয়তো শতবারের
চেষ্টায় পারবে। সফলদের অভিধানে স্থায়ী ব্যর্থতা বলে কিছুই ছিল না তবে ছোট ছোট ব্যর্থতার অন্ত ছিল না।
গোছানো প্রস্তুতি নাও। যারা সফল হয়েছে তাদের সাথে কথা বলো। নিজেকে গুটিয়ে রাখবে না। বন্ধুর চাকুরি
হয়েছে বলে লজ্জায় বের হবে না, কারো সাথে কথা বলবে না, মন খারাপ করে থাকবে-এই মানসিকতা থেকে বের
হতে হবে। চাকুরি?-জীবনের সবচেয়ে ছোট্ট প্রাপ্তিগুলোর একটি। বন্ধুত্ব বিশাল ব্যাপার। জীবনে কিছুই না
করলেও একটা জীবন থেমে থাকবে না। কিন্তু লুকিয়ে রাখলে জীবনটা কারাগারে বদ্ধ হবে।
আমরা কেবল চেষ্টা করতে পারি। সফলতা-বিফলতা আরও বড় পরিকল্পনাকারী নির্ধারণ করেন। সৃষ্টির জন্য
বরাদ্ধ রিজিকের কম বা বেশি সে ভোগ করতে পারে না। কাজেই হতাশ না হয়ে চেষ্টা করে গেলে, বাবা-মায়ের
দোয়া নিয়ে প্রস্তুতি নিলে ব্যর্থতা সাফল্যকে ঢেকে রাখতে পারবে না। অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, অতৃপ্তির বহু
জায়গা আছে কিন্তু আমার যা আছে তার অনেককিছুই আরেকজনের নাই-এই কৃতজ্ঞতাটুকু থাকলে মানসিক
অসুখ আমাদেরকে গ্রাস করতে পারবে না।
দিনপঞ্জির পরিবর্তনে সবার নতুন নতুন পরিচয় হবে। যে পথ পেরিয়ে এসেছি সে পথ যারা পার হচ্ছে তাদেরকে
যেনো অবহেলা না করি। পথ দেখানোয় কার্পণ্য না হোক। যেভাবে যতটুকু সহায়তা করা যায় সেটুকু করা দরকার।
নির্ঘুম রাতকাটানোরা যদি ঘুমহীন মানুষদের ব্যথা না বোঝে, না ধরে হাত, তবে সেটা কষ্টের হবে। বেকররা
আপনার কাছে আসতে লজ্জা পায়। আপনি গিয়ে বেকারের পাশে দাঁড়ান। ভরসা দেন। সেই সংগ্রাম তো এতো সহজে
ভুলে যাওয়ার কথা না।
কোন কাজই ছোট নয়! আমার কেবল ওটা লাগবে এমন গো ধরে বসে থাকাদের মানসিক কষ্ট দীর্ঘায়িত হয়।
যোগ্যতার বাইরে চাইতে গেলে ব্যথার ক্ষত দগদগে হবে। সব পেশাকে সম্মান দিতে পারলেই কেবল আমার পেশা
গৌরবের হবে! আমার পরিচয় মহত্ত্বের খেতাব পাবে! একেকভাবে সবার কষ্ট লাঘব হবে। রাত জাগা স্বার্থক
হবে। একদিনের ব্যর্থতায় আমরা যেনো সারাজীবনের সফলতার পথকে অবজ্ঞা না করি। কোন সুযোগ হাতছাড়া
করে যেনো জীবনযুদ্ধে পরাজয়ের হাতকড়া না পড়ি!
রাজু আহমেদ। কলামিস্ট।
raju69alive@gmail.com